সোমবার, ১৩ মার্চ, ২০২৩ ০০:০০ টা

বিশ্বসেরাদের উড়িয়ে সিরিজ জয়

মেজবাহ্-উল-হক

বিশ্বসেরাদের উড়িয়ে সিরিজ জয়

জয়সূচক রান তোলার পর উল্লাস তাসকিন ও শান্তর। ব্যাটে-বলে দুর্দান্ত খেলেছেন মিরাজ -রোহেত রাজীব

ক্রিস জর্দানের বলে স্কয়ার ড্রাইভ খেললেন তাসকিন আহমেদ। বল বাউন্ডারি রশি স্পর্শ করার আগেই জস বাটলারের সামনে গিয়ে পেশি দেখিয়ে বীরত্বের জানান দেন নাজমুল হোসেন শান্ত। মুখে কথা নেই কিন্তু শান্তর ‘অশান্ত’ শরীরী ভাষার একটাই অর্থ, ‘তোমরা বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হতে পার, ঘরের মাঠে আমরাই সেরা!’

বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ডকে টানা দুই টি-২০তে হারিয়ে ইতিহাস গড়ে সিরিজ জিতল বাংলাদেশ। বন্দরনগরী চট্টগ্রামে প্রথম টি-২০ জিতে সিরিজে এগিয়ে গিয়েছিল স্বাগতিকরা। গতকাল দ্বিতীয় ম্যাচে ৪ উইকেটে জিতে এক ম্যাচ হাতে রেখেই সিরিজ নিশ্চিত করলেন সাকিব আল হাসানরা। বাংলাদেশের ক্রিকেটের ইতিহাসে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে যে কোনো ফরম্যাটে প্রথম সিরিজ জয়।

বল হাতে মেহেদী হাসান মিরাজের ম্যাজিক এবং ব্যাট হাতে শান্ত ছন্দে বাজিমাত করলেন টাইগাররা। মাত্র ১২ রানে ৪ উইকেট এবং ব্যাট হাতে ১৬ বলে ২০ রান করে ম্যাচসেরা হলেন মিরাজ। আর ৪৭ বলে ৪৬ রানের হার না মানা ইনিংস খেলেন যেন সমর্থকদের হৃদয় জয় করলেন শান্ত। গতকাল মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে টস জিতে প্রথমে ফিল্ডিং নেন বাংলাদেশের অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। টাইগারদের নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ের সামনে ১১৭ রানের বেশি করতে পারেননি ইংলিশরা। সর্বোচ্চ ২৮ রান করেন বেন ডাকেট। ১১৮ রানের টার্গেটে ব্যাট করতে নেমে ৭ বল হাতে রেখে জিতে যায় বাংলাদেশ। তিন ম্যাচের টি-২০ সিরিজে টানা দুই জয়। সিরিজ নিশ্চিত হওয়ায় শেষ ম্যাচটি এখন হয়ে গেল কেবলই আনুষ্ঠানিকতার। এ ম্যাচে জয়ের ভীত গড়ে দিয়েছিলেন বাংলার বোলাররা।  টি-২০র ‘মাস্টার মাইন্ড’ ইংল্যান্ড মিরপুরের উইকেটই বুঝতে পারেনি। টসে হেরে যাওয়ায় তাদের জন্য কাজটা আরও কঠিন হয়ে যায়। তবে প্রথমে ব্যাট করতে নেমে ইংলিশদের শুরুটা কিন্তু দুর্দান্ত ছিল। পাওয়ার প্লেতে মাত্র এক উইকেট হারিয়ে ৫০ রান করে। এরপরই যেন ভুলটা করে বসেন ইংলিশরা। আরও আগ্রাসী হওয়ার চিন্তা করতে গিয়ে উল্টো ৭ রানের মধ্যে তিন উইকেট হারিয়ে মহাবিপদে পড়ে যায়। ইংলিশদের স্কোর হঠাৎ ৫০/১ থেকে ৫৭/৪ হয়ে যায়। ওপেনার ফিল সল্টকে ‘কট অ্যান্ড বোল্ড’ করেন ক্যাপ্টেন সাকিব। পেসার হাসান মাহমুদের দুর্দান্ত এক ইয়র্কারে ক্যাপ্টেন বাটলারের স্ট্যাম্প উড়ে যায়। মঈন আলিকে ফিরিয়ে দেন মিরাজ। এই ধাক্কা থেকে শেষ পর্যন্ত আর সামলে উঠতে পারেনি বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা। মিরাজ বলেন, ‘পাওয়ার প্লেতে ওদের ব্যাটিং দেখে মনে হচ্ছিল ১৬০ রান হয়ে যেতে পারে। সাকিব ভাইয়ে ব্রেক থ্রুর পর সব কিছু চেঞ্জ হয়ে যায়।’ শেষ দিকে আরেক ধাক্কায় রীতিমতো দিশাহারা হয়ে যায় ইংল্যান্ড। ৯১-১০০ রানের মধ্যে আবারও তিন উইকেট হারিয়ে ফেলে সফরকারীরা। শেষ ভরসা লোয়ার অর্ডারের তিন ব্যাটসম্যান স্যাম কারেন, ক্রিস ওকস ও ক্রিস জর্দানকে হারিয়ে ১১৭ রানেই প্যাকেট হয়ে যায় বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা। মেহেদী হাসান মিরাজ টি-২০তে তার ক্যারিয়ার সেরা বোলিং করেন। অথচ প্রথম ম্যাচের একাদশেই ছিলেন না তিনি। গতকাল সুযোগ পেয়েছেন শামীম পাটওয়ারীর জায়গায়। আর সুযোগ পেয়েই বাজিমাত করে দিলেন। মজার বিষয় হচ্ছে, এ ম্যাচে ছয় বোলার নিয়ে খেলতে নেমেছিল টিম বাংলাদেশ। কিন্তু সাকিব বোলার ব্যবহার করেছেন আটজন। নিজেও চার ওভারের কোটা পূরণ করতে পারেননি। ঘন ঘন বোলিং পরিবর্তন করে ইংলিশদের বিভ্রান্ত করেছেন সাকিব। তার ক্যারিশম্যাটিক ক্যাপ্টেন্সিতে পথ হারিয়ে ফেলে ব্যাটিংয়ে দারুণ শুরু করা ইংল্যান্ড। টি-২০তে ১১৮ রানের টার্গেট- এর চেয়ে সহজ লক্ষ্য আর হয় না! কিন্তু খানিকটা বেশি আবেগী হতে গিয়ে যেন বিপদ ডেকে এনেছিলেন ব্যাটসম্যানরা। পাওয়ার প্লেতে আউট হয়ে যান দুই ওপেনার লিটন দাস ও রনি তালুকদার। দৃষ্টিনন্দন দুটি বাউন্ডারি হাঁকানোর পরও ইনিংসটা বড় করতে পারেনি তৌহিদ হৃদয়। তবে একপ্রান্ত আগলে রেখে ছিলেন শান্ত। চতুর্থ উইকেট জুটিতে মিরাজের সঙ্গে ৩২ বলে ৪১ রানের জুটি গড়ে দলকে নিরাপদে পৌঁছে দেন। বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের বিরুদ্ধে সিরিজ জিতে যেন বিশ্বজয়ের আনন্দে মাতে বাংলাদেশ। মিরাজ বলেন, ‘আমরা সব দলের বিরুদ্ধেই সিরিজ জিতেছিলাম। কেবল ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে অপূর্ণতা ছিল। আজ সিরিজ জিতে সেটিও পূর্ণতা পেল। সিরিজ জেতা মানেই তো আনন্দ।’ প্রথম দুই ম্যাচেই সিরিজ নিশ্চিত হওয়ায় এখন টাইগারদের লক্ষ্য হোয়াইটওয়াশ। আর এই সুযোগটা যে বাংলাদেশ হাতছাড়া করতে চায় না তা ম্যাচ শেষে প্রেস কনফারেন্সে আসা মিরাজের হাসিই বলে দিচ্ছিল, ‘আমরা জয় নিয়ে আগে থেকে ভাবি না। কেবল নিজেদের কাজটা ঠিকমতো করতে চাই। সেটা করতে পারলে জয় তো আসবেই।’

সর্বশেষ খবর