বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ফ্যাসিবাদী হাসিনাবিরোধী আন্দোলনে আমাদের যে ঐক্য সৃষ্টি হয়েছিল, সে ঐক্য যেন আমরা অটুট রাখতে পারি। আজ সুপরিকল্পিতভাবে সে ঐক্য বিনষ্ট করার একটি চক্রান্ত চলছে। সে বিষয়ে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। গতকাল জাতীয় প্রেস ক্লাবে সাংবাদিক মুশফিকুল ফজল আনসারীর সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন তিনি।
জাতীয় প্রেস ক্লাবে সহকর্মীদের উচ্ছ্বাস ও ভালোবাসায় সিক্ত হয়েছেন দীর্ঘ এক দশক নির্বাসনে থাকা সাংবাদিক মুশফিকুল ফজল আনসারী। জাতীয় প্রেস ক্লাব, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন, ঢাকা সাংবাদিক সমবায় সমিতি লিমিটেডসহ বিভিন্ন সাংবাদিক সংগঠন, নানা ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে বিশেষ সংবর্ধনা প্রদান করা হয়। সংবর্ধনা আয়োজক কমিটির আহ্বায়ক সৈয়দ আবদাল আহমদের সভাপতিত্বে সদস্যসচিব শফিউল আলম দোলনের পরিচালনায় অনুষ্ঠানে রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, সাংবাদিক, মানবাধিকারকর্মী, কবি, সাহিত্যিক, শিক্ষক, আইনজীবীসহ নাগরিকসমাজের প্রতিনিধিরা অংশ নেন।
আন্তর্জাতিক অঙ্গনের বলিষ্ঠ কণ্ঠস্বর সাংবাদিক মুশফিকুল ফজল আনসারীকে পেয়ে আনন্দে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ ও সংবাদকর্মীরা। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন বিভিন্ন রাজনৈতিক ও অরাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ। শিক্ষক, আইনজীবী, কৃষিবিদ, চিকিৎসকসহ নানা পেশার ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন। শেখ হাসিনা সরকারের আমলে নির্যাতনের শিকার অনেক সাংবাদিক অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে তিক্ত অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরেন। সেই সঙ্গে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে মুশফিকুল ফজল আনসারীর ভূমিকার ভূয়সী প্রশংসা করেন তাঁরা।
অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে বাংলাদেশের গণতন্ত্র, বাকস্বাধীনতা পুনরুদ্ধার ও ফ্যাসিস্ট সরকারের পতনের পেছনে সাংবাদিক মুশফিকুল ফজল আনসারীর অনন্য ভূমিকা ছিল বলে উল্লেখ করেন বিএনপি মহাসচিব। তিনি মুশফিকুল ফজল আনসারীকে বাংলাদেশের রিয়েল হিরো বলে আখ্যা দেন। এ সময় সব সাংবাদিককে পেশাদারি বজায় রেখে, নীতিনৈতিকতার সঙ্গে সংবাদ সংগ্রহ, তৈরি ও পরিবেশনের আহ্বান জানান তিনি।
অনুষ্ঠানে সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ বলেন, স্বৈরাচার হাসিনার আমলে সারা বিশ্বের বাংলাভাষীদের কাছে প্রতীক্ষার আরেক নাম ছিল মুশফিকুল ফজল আনসারী। জাতিসংঘ, হোয়াইট হাউস, পেন্টাগন, স্টেট ডিপার্টমেন্টসহ গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক দপ্তরগুলোয় শেখ হাসিনার অপশাসনের কথা তুলে ধরার মাধ্যমে অসামান্য, অনন্য ও অতুলনীয় ভূমিকা রেখেছেন তিনি। সাংবাদিকসমাজ তাঁকে নিয়ে গর্বিত এবং তাঁকে সংবর্ধনা দিতে পেরে আনন্দিত। বিভিন্ন সংগঠনের দেওয়া ফুলেল সংবর্ধনা শেষে বক্তব্য দেন সাংবাদিক মুশফিকুল ফজল আনসারী। তিনি বলেন, ‘অনেকটা নিরাপদ স্থানে থেকেই আমরা হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে কথা বলে গেছি। যদিও নানাভাবে আমাদের পরিবারকে হেনস্তা করা হয়েছিল। তবে আমাদের ত্যাগের চেয়েও দেশে অবস্থান করে যারা লড়াই করে গেছেন তাদের অবদান ভোলার নয়। শেখ হাসিনা সরকার নানাভাবে আমাকে প্রভাবিত করতে চেষ্টা করেছিল। প্রলোভন দেখিয়েছিল। কিন্তু নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করাটাই নিজের ব্রত মনে করেছি।’
এ সময় সংবর্ধনার ছবি ফেসবুকে না দেওয়ার অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘সময়টা আনন্দ-উৎসবের নয়। দয়া করে এসব ছবি দিয়ে শহীদদের পরিবারগুলোর মনের কষ্ট বাড়িয়ে দেবেন না। এটা আপনাদের কাছে বিশেষ অনুরোধ। আল্লাহ যেন তাদের সবাইকে শহীদি মর্যাদা দান করেন।’ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর ড. কামরুল আহসান, পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ড. আবদুল লতিফ মাসুম, মানবাধিকারকর্মী নূর খান লিটন, ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অ্যাডভোকেট রেজাউল করিম রেজা, সরকারি কর্মকর্তা কল্যাণ সমিতির নেতা নেয়ামত উল্লাহ, গণ অধিকার পরিষদ নেতা তারেক রহমান, বিশিষ্ট কবি রেজাউদ্দিন স্টালিন, সাংবাদিক নেতৃবৃন্দের মধ্যে কামাল উদ্দিন সবুজ, আবদুল হাই শিকদার, ইলাহি নেওয়াজ খান সাজু, ইলিয়াস খান, কাদের গণি চৌধুরী, শহীদুল ইসলাম, খুরশিদ আলম, জাহাঙ্গীর আলম প্রধান প্রমুখ।