গত বছর জুলাই-আগস্টের আন্দোলন দমনে নির্বিচার অস্ত্র ব্যবহার করে ভাবমূর্তির সংকটে থাকা পুলিশ বাহিনীকে আর কোনো মারণাস্ত্র না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। গতকাল সচিবালয়ে আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির নবম সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানান লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।
সভা শেষে সাংবাদিকদের উপদেষ্টা বলেন, আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠকে একটি সিদ্ধান্ত নিয়েছি। পুলিশের হাতে যেন আর কোনো মারণাস্ত্র না থাকে, এগুলো তাদের জমা দিয়ে দিতে হবে। অস্ত্র থাকবে আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন সদস্যদের হাতে। তাদের কাজ কিন্তু অন্য পুলিশের থেকে একটু ভিন্ন। এ ছাড়া এলিট ফোর্স র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) পুনর্গঠন করা হবে। র্যাব পুনর্গঠন করতে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। মারণাস্ত্র বিষয়ে কবে থেকে সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হবে জানতে চাইলে উপদেষ্টা বলেন, কেবল মিটিংয়ে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হলো। সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে তো একটু সময় লাগে। জাহাঙ্গীর আলম বলেন, পুলিশের কাছে রাইফেলও থাকবে না তা নয়। তাদের কাছে রাইফেল থাকবে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সংক্রান্ত প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মো. খোদা বখস চৌধুরীর নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ কমিটি অন্য বিষয়ের সঙ্গে পুলিশকে মরাণাস্ত্র না দেওয়ার সিদ্ধান্তের বিষয়টি দেখবে বলেও জানান স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা।
র্যাব পুনর্গঠন নিয়েও স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, র্যাব এখনকার নামে থাকবে কি না, বর্তমান পোশাক থাকবে কি না, পুনর্গঠন কীভাবে হবে এসব পর্যালোচনা করতে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সরকারী লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) আবদুল হাফিজকে প্রধান করে একটি কমিটি গঠন করে দেওয়া হয়েছে। এ কমিটি হবে পাঁচ থেকে ছয় সদস্যের। বিভিন্ন বাহিনী থেকে কমিটির সদস্য করা হবে। এ কমিটি চাইলে সদস্য সংখ্যা বাড়াতে পারবে। এ কমিটি র্যাবের নাম থাকবে কি থাকবে না, তাদের কার্যক্রম কেমন হবে এসব ঠিক করবে। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, গার্মেন্টশ্রমিকদের বেতন-ভাতা ঈদের আগে পরিশোধ করতে হবে। তবে তাদের অবৈধ দাবি বরদাশত করা হবে না। কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ ছাড়া গরুর হাটে চাঁদাবাজি বন্ধে প্রতি হাটে ১০০ আনসার সদস্য রাখতে হবে। যাত্রীরা যেন নির্বিঘ্নে যেতে পারেন, সে বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। রাস্তায় যেন চাঁদাবাজি না হয়।
বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) প্রধান মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী বলেন, গত কয়েকদিনে বিএসএফ ২০২ জনকে বাংলাদেশে ঠেলে দিয়েছে। এদের মধ্যে পাঁচজন ভারতীয়। সুপরিকল্পিতভাবে ভারত পুশইন চালিয়ে যাচ্ছে। বিষয়গুলো পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে সে দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে জানানো হয়েছে। এখনো বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে মানুষজনকে বাংলাদেশে পাঠানোর চেষ্টা করা হচ্ছে তবে বিজিবি সতর্ক রয়েছে বলে জানান তিনি। আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির সদস্য ছাড়াও বিভিন্ন বাহিনীর প্রধানরা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।