কলম্বোর প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে কোনো মহানাটকীয় ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা আর খুব একটা নেই। বাংলাদেশ বনাম শ্রীলঙ্কার টেস্ট ম্যাচটিতে অনিবার্য হারের দিকেই এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। তৃতীয় দিনের খেলা শেষে বাংলাদেশ দল নিজেদের দ্বিতীয় ইনিংসে ৬ উইকেটে ১১৫ রান সংগ্রহ করেছে, যেখানে ইনিংস পরাজয় এড়াতে তাদের প্রয়োজন আরও ৯৬ রান।
ক্রিজে থাকা শেষ স্বীকৃত ব্যাটার লিটন দাস। ১৩ রান নিয়ে অপরাজিত তিনি। তার সঙ্গী হিসেবে মেহেদী হাসান মিরাজ দিনের শেষ বলে এলবিডব্লিউর শিকার হওয়ায় বাংলাদেশের ইনিংস পরাজয়ের শঙ্কা যেন আরও গভীর হয়েছে।
কলম্বোর পড়ন্ত বিকেলে যখন বাংলাদেশের ইনিংস দেয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়া অবস্থায়, তখন আশার ক্ষীণ প্রদীপ জ্বালিয়ে রেখেছিলেন মেহেদী হাসান মিরাজ। লিটন দাসের সঙ্গে তার জুটি যদি কিছুটা দীর্ঘ হতো, তবে হয়তো মিরাজ ম্যাজিকে নতুন কোনো গল্পের জন্ম দিত বাংলাদেশ। কিন্তু দিনের একদম শেষ বলে থারিন্ডু রথনায়েকে'র বলে এলবিডব্লিউ হয়ে মাত্র ১১ রানেই সাজঘরে ফিরে যান মিরাজ। এই একটি আউটই যেন পুরো দলের মনোবলকে আরও দুর্বল করে দিয়েছে। প্যাভিলিয়নে ফিরতে থাকা মিরাজের বিষণ্ণ মুখচ্ছবিই বলে দিচ্ছিল, বাংলাদেশের সামনে এখন কেবলই এক দীর্ঘ, অন্ধকার সুড়ঙ্গ।
এই দলের সবচেয়ে অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান, মুশফিকুর রহিম। তার উপর ভরসা ছিল পুরো দেশের। শুরুটাও করেছিলেন দারুণ। দেখেশুনে খেলছিলেন, উইকেটে সেটও হয়েছিলেন। মনে হচ্ছিল, এবার হয়তো মুশফিকই ত্রাতা হয়ে আসবেন। কিন্তু ৫৩ বলে খেলা তার ২৬ রানের ইনিংসটির সমাপ্তি ঘটলো প্রভাত জয়সুরিয়ার এক অসাধারণ ডেলিভারিতে বোল্ড হয়ে। বলটি বুঝতে পারেননি মুশফিক, ব্যাট ও প্যাডের ফাঁক দিয়ে ঢুকে স্টাম্প ভেঙে দিল। মুশফিকের বিদায়, আর ১০০ রান তুলতেই ৫ উইকেট হারানো – এই দৃশ্যগুলো যেন বাংলাদেশের শেষ আশার সমাধি রচনা করে দিল।
২১১ রানের বিশাল লিড মাথায় নিয়ে যখন বাংলাদেশ দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিংয়ে নামে, তখন থেকেই চাপ ছিল পাহাড়সমান। এনামুল হক বিজয়, যিনি আগের তিন ইনিংসে শূন্য, চার, শূন্য রানে আউট হয়েছিলেন, এবার নতুন কৌশল নিয়েছিলেন। রক্ষণাত্মক ভঙ্গিকে দূরে ঠেলে বেছে নিয়েছিলেন আক্রমণাত্মক স্টাইল। কয়েকটি বাউন্ডারি হাঁকালেও ইনিংস বড় করতে পারেননি। ১৯ বলে ১৯ রান করে আসিথা ফার্নান্দোর শিকার হন।
বিজয়ের আউটের পরপরই চা বিরতির ঘণ্টা বাজে। বিরতির পর সাদমান ইসলাম, যিনি ১২ রান নিয়ে অপরাজিত ছিলেন, প্রভাত জয়সুরিয়ারে কভার ড্রাইভ করতে গিয়ে ক্যাচ তুলে দেন। ৩১ রানেই ২ উইকেট হারায় বাংলাদেশ। এরপর মুমিনুল হক, অভিজ্ঞ এই ব্যাটারও ১৫ রানে ধনঞ্জয়া ডি সিলভার বলে খোঁচা মেরে স্লিপে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন। অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত, তার কাছ থেকেও ভরসা মিলল না। ১৯ রান করে ধনঞ্জয়া ডি সিলভার বলে এলবিডব্লিউ হয়ে তিনিও দলের বিপদ বাড়ালেন।
দিনের শুরুতে শ্রীলঙ্কা ২ উইকেটে ২৯০ রান নিয়ে তৃতীয় দিনের খেলা শুরু করে। প্রথম ইনিংসে ৪৫৮ রানে থামে লঙ্কানদের ইনিংস। এতে স্বাগতিকরা ২১১ রানের বিশাল লিড পায়। এর আগে, বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতায় প্রথম ইনিংসে মাত্র ২৪৭ রানেই গুটিয়ে গিয়েছিল টাইগাররা।
এখন একটাই প্রশ্ন, এই কঠিন পরিস্থিতিতে লিটন দাস কি পারবেন অলৌকিক কিছু ঘটাতে? নাকি কলম্বো টেস্টে ইনিংস পরাজয়ের তিক্ত স্বাদ নিয়েই মাঠ ছাড়তে হবে টাইগারদের?
বিডি প্রতিদিন/নাজমুল