পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) প্রধান কার্যালয় থেকে টাকা গায়েবের ঘটনায় ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) দুই অতিরিক্ত কমিশনারের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। তারা হলেন- এসবির তৎকালীন অতিরিক্ত ডিআইজি (অর্থ) মো. সরোয়ার এবং তৎকালীন বিশেষ পুলিশ সুপার (অর্থ) এস এন নজরুল ইসলাম। একই সঙ্গে এসবির সাবেক প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি মনিরুল ইসলামের স্টাফ অফিসার মোহাম্মদ আশরাফের বিরুদ্ধেও অনুসন্ধান শুরু করেছে সংস্থাটি। তাদের স্ত্রী ও নির্ভরশীলদের সম্পদ অর্জনের তথ্যও সংগ্রহের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন দুদক কর্মকর্তারা।
গত ৪ মে দুদকের দৈনিক ও সাম্প্রতিক অভিযোগ সেলের পরিচালক ঈশিতা রনির এক চিঠিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। দুদকের মহাপরিচালকের (বিশেষ তদন্ত) কাছে পাঠানো ওই চিঠিতে প্রায় ২৫ কোটি টাকা লোপাটের ঘটনায় এসবি সাবেক প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি মনিরুল ইসলামের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় অনুসন্ধানের কথা বলা হয়।
জানতে চাইলে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ট্রাফিক) মো. সরোয়ার বলেন, এসবিতে ওইসময় কোনো টাকা লোপাটের ঘটনা ঘটেনি। ৫ আগস্টের পর একটা পক্ষ আমাদের হেয় করার জন্য এমন প্রচারণা চালিয়েছে। অপর অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম) এস এন নজরুল ইসলাম বলেন, ১ হাজার ভাগ সত্য যে, সেখানে কোনো টাকা ছিল না এবং লোপাটের ঘটনাও ঘটেনি। পুলিশ সদরদপ্তর তদন্ত করেছে, তারা তদন্ত করে অভিযোগের কোনো সত্যতা পায়নি। দুদকও তদন্ত করে দেখতে পারে, এতে আমাদের কোনো আপত্তি নেই।
দুদক সূত্র জানায়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন দমনে ব্যয় করার জন্য গত বছরের ৩ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের কাছ থেকে ২৫ কোটি টাকা এনে নিজের কক্ষে রেখেছিলেন তৎকালীন এসবি প্রধান মনিরুল ইসলাম। কিন্তু সেই টাকা বিতরণ করার আগেই ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতন হয়। ওই দিন থেকে আর অফিসে যাননি মনিরুল। কিন্তু তার কক্ষে ২৫ কোটি টাকা থাকার তথ্যটি এসবির কয়েকজন কর্মকর্তা জানতেন। তারা এসবি কার্যালয়ের ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরা ও ইন্টারনেট বন্ধ রেখে ৬ থেকে ১২ আগস্টের মধ্যে কোনো এক সময়ে মনিরুলের কক্ষ থেকে ওই টাকা সরিয়ে নেন।
দুদকের কর্মকর্তারা জানান, প্রাপ্ত গোয়েন্দা নথিতে দেখা গেছে- এসবির সাবেক প্রধান মনিরুল ইসলাম এবং মো. সরোয়ার ছিলেন একই ব্যাচের কর্মকর্তা। সরোয়ার ভিন্ন মতাদর্শের কারণে সে সময় তার পদোন্নতি হয়নি। কিন্তু দুজনের মধ্যে সম্পর্ক বেশ ভালো ছিল। সরোয়ারকে ব্যাচমেট হওয়া মনিরুল প্রভূত কর্তৃত্ব প্রদান করেন। অন্যদিকে এসবির ডিআইজি (প্রশাসন) কুদ্দুস আমিন ছিলেন ১৭তম ব্যাচের। ফলে প্রশাসনিক এবং অফিশিয়াল বিষয়ে সরোয়ার এবং কুদ্দুস আমিনের মধ্যে দ্বন্দ্ব শুরু হয়। আর নজরুল ইসলামও ছিলেন ভিন্ন মতাদর্শের। তাই তারও সেই আমলে পদোন্নতি হয়নি। ৫ আগস্টের পর কুদ্দুস আমিন ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। ৬ আগস্ট এসবি অফিসে মো. সরোয়ার সব কর্মকর্তার সঙ্গে মিটিং করেন। তখন প্রশ্ন ওঠে, ডিআইজির (প্রশাসন) দৃষ্টি আকর্ষণ না করে তিনি কীভাবে মিটিং ডাকেন এবং এ নিয়ে তমুল হট্টগোল হয়। গোয়েন্দা অনুসন্ধানে যে কক্ষে ২৫ কোটি টাকা রাখা হয়েছিল এবং কথিত সিন্দুক পরিদর্শন করা সম্ভব হয়নি। ৬ আগস্ট থেকে ১২ আগস্ট পর্যন্ত সিসি ক্যামেরা এবং ইন্টারনেট সেবা বন্ধ ছিল কি না তার নির্ভরযোগ্য তথ্য পাওয়া যায়নি। একই সঙ্গে ডিজিটাল ফরেনসিকেরও কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। জানা গেছে, এর আগে ওইসব টাকা সরিয়ে নেওয়ার ঘটনা তদন্তে পুলিশ সদর দপ্তর তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছে। পুলিশ সদর দপ্তরের স্পেশাল সিকিউরিটি অ্যান্ড প্রোটেকশন ব্যাটালিয়নের (এসপিবিএন) ডিআইজি গোলাম কিবরিয়াকে (অতিরিক্ত আইজিপি সুপার নিউমারারি) কমিটির প্রধান করা হয়।