চাকরি ফিরে পাওয়ার দাবিতে আন্দোলনরত সশস্ত্র বাহিনীর চাকরিচ্যুতরা দিনভর আন্দোলন শেষে তাঁদের কর্মসূচি স্থগিত করেছেন। গতকাল সন্ধ্যায় রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাব প্রাঙ্গণে তিন শর্তে আন্দোলন স্থগিতের ঘোষণা দেন তাঁরা। সন্ধ্যায় প্রেস ক্লাবে সেনাবাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক শেষে উপস্থিত সাংবাদিকদের কাছে আন্দোলন স্থগিত করার কথা জানানো হয়। আন্দোলনকারীদের পক্ষে আটজন বৈঠকে অংশ নেন। ‘বাংলাদেশ সহযোদ্ধা প্ল্যাটফর্ম’ ব্যানারে চাকরি ফিরে পাওয়াসহ চার দফা দাবিতে সকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে বিক্ষোভ শুরু করেন বিভিন্ন সময় সশস্ত্র বাহিনী থেকে চাকরিচ্যুত একদল ব্যক্তি। দিনভর বিক্ষোভ চলাকালে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে কথা বলতে বিকালে প্রেস ক্লাবে আসেন সেনাবাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। তাঁরা আন্দোলনরতদের সঙ্গে কথা বলে বের হওয়ার সময় তাঁদের গাড়ির সামনে শুয়ে পড়েন আন্দোলনকারীরা। পরে সন্ধ্যা ৬টার দিকে সেনাবাহিনীর উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে পুনরায় বৈঠকে অংশ নেন চাকরিচ্যুত আট সদস্যের প্রতিনিধিদল। সাড়ে ৭টার দিকে সেনা কর্মকর্তারা প্রেস ক্লাব এলাকা ত্যাগ করেন। বিকাল সোয়া ৪টার দিকে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আমিনুর রহমান প্রেস ক্লাবে সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা তাঁদের দাবিদাওয়াগুলো শুনেছি। আমরা সব দাবিদাওয়া নোট করেছি। এগুলো নিয়ে আলোচনা করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ তিনি বলেন, ‘সবাইকে আলাদা আলাদা করে আবেদন করতে বলেছি। আবেদন করার ঠিকানা আমরা দিয়ে গেছি। ইনডিভিজুয়াল কেসের মেরিট (প্রতিটি ঘটনার পরিস্থিতি) অনুযায়ী আমরা বসব, আলাপ-আলোচনা করে যত দ্রুত যতখানি দেওয়া সম্ভব আমরা অ্যাড্রেস করব। এটাও বলেছি যে সেনাবাহিনীর যে আইনশৃঙ্খলা, এটা অবশ্যই মেইনটেন (বজায় রাখা) করতে হবে। আমরা মানবিকভাবে যতটুকু সাহায্য করার করব।’ তাঁরা কি আপনাদের কথা মেনে নিয়েছেন? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আমিনুর রহমান বলেন, ‘হ্যাঁ, তাঁরা মেনেছেন। তাঁরা অপেক্ষা করবেন। আমাদের কার্যক্রম আস্তে আস্তে চলবে।’ আন্দোলনরত একজনকে গ্রেপ্তারের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে এই সেনা কর্মকর্তা বলেন, ‘ওটা একটা আইনগত বিষয়। মামলার বিষয় এবং তাঁকে আমাদের পক্ষ থেকে যতটুকু সহায়তা করা যায় আমরা করব।’ আট শর মতো আবেদন জমা পড়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘যার মধ্যে এক শর বেশি আমরা অ্যাড্রেস করেছি।’
চাকরিচ্যুতদের বিষয়ে সেনাবাহিনীর অবস্থান : বরখাস্ত/অব্যাহতিপ্রাপ্ত সাবেক সেনাসদস্যদের বিক্ষোভের বিষয়ে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করেছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। গত রাতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে পোস্ট করা এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। এতে বলা হয়েছে, গতকাল কতিপয় বরখাস্ত/অব্যাহতিপ্রাপ্ত সাবেক সেনাসদস্য তাদের চাকরিতে পুনর্বহাল, শাস্তি মওকুফ ও আর্থিক ক্ষতিপূরণসহ বিভিন্ন দাবি নিয়ে বিক্ষোভ এবং বিভিন্ন গণমাধ্যমে বক্তব্য প্রদান করেন। শান্তিপূর্ণ সমাধানের উদ্দেশ্যে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একটি প্রতিনিধিদল জাতীয় প্রেস ক্লাবে গমন করেন এবং অত্যন্ত ধৈর্য ও আন্তরিকতার সঙ্গে তাদের বক্তব্য শোনেন। অভিযোগসমূহ কোনো তৃতীয় পক্ষ বা প্রতিষ্ঠানের ব্যানারে না পাঠিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে সরাসরি উপস্থাপনের পরামর্শ দেন।