বয়স ৪০ পেরিয়ে গেছে। মাঝে মাঝে বুকটা বেশ জ্যাম হয়ে ওঠে, বিশেষ করে একটু দ্রুত হাঁটতে গেলে অথবা তাড়াহুড়া করে স্বাভাবিক কাজকর্ম সম্পাদন করতে গেলে কারও কারও হাঁটার সময় বুকে চাপ হয় আবার একটু থেমে গেলে দুয়েক মিনিটের মধ্যে বুকের চাপ কমে গিয়ে স্বাভাবিক হয়ে যায়। কেউ কেউ একটু ঢেঁকুর তোলার চেষ্টা করেন এবং ঢেঁকুর উঠলে চাপ কমে যায়, তাই এটাকে গ্যাসের লক্ষণ মনে করে গ্যাসের মেডিসিন গ্রহণ করে থাকেন। এ সময় কেউ কেউ আবার দাঁড়িয়ে একটু আড়মোড়া ভাঙার চেষ্টা করেন, তাতেও চাপ কমে যায়। তাই ভাবতে থাকেন এটা তেমন কিছু নয়। কারও কারও বেলায় একটু পরিশ্রম করতে গেলে হার্টবিট বেড়ে যায় বা হার্টের গতি বৃদ্ধি পায়। ফলশ্রুতিতে বুকটা একটু ধড়ফড় করে কিন্তু এক্ষেত্রেও পরিশ্রম বন্ধ করলে অল্প সময়েই ব্যক্তি আবার স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসেন। তবে একই মাত্রার পরিশ্রম করলে অনেক সময়ই কোনোরূপ কষ্ট বোধ করেন না, তাই এটাকে কোনো রোগের লক্ষণ বলে মনেই হয় না। সে কারণে চিকিৎসা গ্রহণের প্রয়োজনও বোধ করেন না। কেউ কেউ একটু দ্রুত হাঁটার সময় বা সিঁড়ি অথবা পাহাড় বেয়ে উপরে উঠতে গেলে বুকব্যথা অথবা শ্বাসকষ্ট বা বুক ধড়ফড় অনুভব করেন। এক্ষেত্রে একটু থেমে গেলে এসব উপসর্গ খুব দ্রুত নিরাময় হয়ে যায়। এ ধরনের উপসর্গ আসলে হৃদরোগের প্রাথমিক লক্ষণ। প্রাথমিক অবস্থায় বিশেষ কিছু পরিবেশ ও পরিস্থিতিতে হৃদরোগের লক্ষণগুলো পরিশ্রমকালীন পরিলক্ষিত হয়ে থাকে এবং পরিশ্রম করা বন্ধ করে দিলে দুই-তিন মিনিটের মধ্যেই ব্যক্তি স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসেন। তাই অনেকেই প্রাথমিক অবস্থাকে তেমন গুরুত্ব না দিয়ে স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে থাকেন। হৃদরোগের প্রাথমিক লক্ষণগুলোর স্বভাব খুবই গোলমেলে কারণ একই ধরনের বা একই মাত্রার পরিশ্রম করতে গেলে কখনো এসব উপসর্গ দেখা দেয় আবার কখনো দেখা দেয় না। ব্যক্তি যদি দুশ্চিন্তাগ্রস্ত থাকেন অথবা টেনশনে থাকেন তবে এসব উপসর্গ বেশি পরিলক্ষিত হয়ে থাকে। বিরূপ আবহাওয়ায় পেট ভরে খাওয়ার পর, অন্য কোনো অসুস্থতার সময় যেমন জ্বর-সর্দি-কাশি, পেট খারাপ অথবা হাইপ্রেসারের রোগীদের প্রেসার খুব বেড়ে গেলে বা খুব কমে গেলে এবং ডায়াবেটিকস রোগীদের রক্তের সুগার খুব বেশি বৃদ্ধি পেলে অথবা খুব কমে গেলে অতি সহজেই হৃদরোগের বর্ণিত লক্ষণগুলোর প্রকাশ ঘটে। ফুরফুরে মেজাজে থাকলে, মন খুশি থাকলে, দুশ্চিন্তামুক্ত থাকলে সাধারণভাবে হৃদরোগের প্রাথমিক লক্ষণগুলো পরিলক্ষিত হয় না। খালি পেটে, সুন্দর আবহাওয়ায়, উত্ফুল্ল চিত্তে, শারীরিক সুস্থতায়, বিশ্রামের পরবর্তী সময়ে সাধারণভাবে একই মাত্রার পরিশ্রমেও এসব লক্ষণ পরিলক্ষিত হয় না। এক্ষেত্রে অনেকে ভেবে থাকেন হয়তোবা গ্যাস সৃষ্টি হওয়ার ফলে কখনো কখনো এ ধরনের সমস্যা পরিলক্ষিত হয়ে থাকে, তা মোটেই সঠিক নয়।
ডা. এম শমশের আলী, সিনিয়র কনসালটেন্ট (প্রা.), ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, শমশের হার্ট কেয়ার এবং মুন ডায়াগনস্টিক সেন্টার, বাবর রোড, শ্যামলী।