বর্তমান সময়ে আমরা সবাই এত বেশি কর্মব্যস্ত থাকি যে, অনেকেই নিজের স্বাস্থ্য সম্পর্কে খুব বেশি চিন্তা করার সময় ও সুযোগ পাই না। আপনার মতো অনেকেই একটু খারাপ বোধ করলে, মাথা ধরলে, ঘুম কম হলে, কাজে অনীহা দেখা দিলে, চলতে ফিরতে অসুবিধা বোধ করলে, তখন মনে হয় প্রেসারটা (রক্তচাপ) চেক করানো দরকার। এ সময় প্রেসার চেক করে ‘হাই’ পেলে আমরা অনেকেই চিন্তা করি কাজের চাপ কমালে, দুশ্চিন্তা বা টেনশন কমালে প্রেসার আবার ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু সমস্যা কমে গেলে তখনই প্রেসার চেক করার কথা ভুলে গিয়ে আবার কাজকর্মে নিমজ্জিত হয়ে যাই। এভাবে কারও কারও অনেক বছর অতিক্রান্ত হয়ে যায় কিন্তু ডাক্তার দেখানো বা চেকআপ করার সুযোগ ও সময় মেলে না। আবার অনেকেই মনে করেন ডাক্তার দেখালে নিজেকে অসুস্থ ভাবতে হবে এবং ওষুধপত্র সেবন করতে হবে, তার চেয়ে এমনি ভালো আছি, ওষুধ খেতে হচ্ছে না এবং নিজেকে রোগী হিসেবে ভাবতে হচ্ছে না, নিজেকে সুস্থ ভেবেই স্বাভাবিক জীবনযাপন করছি এবং মনোবলও ঠিক আছে কারণ মনোবল কমে গেলে কাজকর্মে ব্যাঘাত ঘটবে। আপনার ভাবনাটি একেবারে অমূলক তা বলছি না, তবে প্রাথমিক অবস্থায় চিকিৎসা গ্রহণ করলে অনেক ধরনের স্বাস্থ্যঝুঁকি ও স্বাস্থ্যগত দুর্ঘটনা এড়ানো সম্ভব।
উচ্চ রক্তচাপ ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পেয়ে থাকে তার জন্য কয়েক বছর থেকে যুগ যুগ সময় লেগে যেতে পারে এবং এ বৃদ্ধিকালীন রোগী আপাতত স্বাভাবিক জীবনযাত্রা অব্যাহত রাখতে পারেন। অনেকের শরীরে উচ্চ রক্তচাপজনিত কোনো ধরনের লক্ষণই দেখা দেয় না, তখন ব্যক্তি নিজেও বুঝতে পারে না যে তিনি উচ্চ রক্তচাপজনিত রোগে ভুগছেন। দীর্ঘ সময় ধরে কারও রক্তচাপ বেশি থাকলে, রক্তনালির নমনীয়তা কমতে থাকে, রক্তনালি আস্তে আস্তে শক্ত আকার ধারণ করে ফলে শরীরের বিভিন্ন অংশে রক্ত প্রবাহের পরিমাণ কমতে থাকে, ব্যক্তির জৈবিক বয়স দ্রুত বৃদ্ধি পেতে থাকে, মানে বয়সের তুলনায় ব্যক্তি বেশি বৃদ্ধ হয়ে যেতে থাকেন। উচ্চ রক্তচাপের প্রভাবে হার্টকে সমান কাজ করার জন্য আরও বেশি শক্তি প্রয়োগ করে কাজ করতে হয় ফলে, হার্টের দৈহিক গঠন বৃদ্ধি পেতে থাকে, মাংসপেশির পরিমাণ বৃদ্ধির ফলে হার্টের খাদ্য গ্রহণের প্রয়োজন বেড়ে যায়, যার জন্য হার্টে রক্ত সরবরাহের আনুপাতিক ঘাটতি দেখা দেয় এবং ব্যক্তি দিনে দিনে হার্টের অসুস্থতায় ভুগতে শুরু করে, একপর্যায়ে পরিশ্রমে অতি সহজেই ক্লান্তি বোধ করে, অলসতা বৃদ্ধি পায়, কর্মস্পৃহা কমে যায়, কেউ কেউ হাঁটতে চলতে গেলে অথবা সিঁড়িতে ওপরে উঠতে গেলে বুকব্যথা বা বুকে চাপ অনুভব করেন। কারও কারও পায়ে পানি জমে পা ফোলে যায়। রক্তচাপ বৃদ্ধিজনিত কারণে কিডনির কার্যকারিতা দিনে দিনে কমতে থাকে, এতেও ব্যক্তি দিনে দিনে বয়স অনুপাতে বেশি দুর্বল হয়ে পরেন। উচ্চ রক্তচাপের সবচেয়ে মারাত্মক জটিলতা হলো যে, এর ফলে রোগী স্ট্রোক বা প্যারালাইসিসে আক্রান্ত হয়ে থাকেন। ফলে রোগীকে পঙ্গু জীবনযাপন করতে হয় এবং রোগী অন্যের সাহায্য ব্যতীত বেঁচে থাকতে পারেন না। এটা মানবজীবনের সবচেয়ে কঠিন ও অসহায় মুহূর্ত এবং এর জন্য সীমাহীন মনোকষ্ট হয়ে থাকে। উচ্চ রক্তচাপের আরও একটি মারাত্মক জটিলতা হলো হঠাৎ হার্ট অ্যাটাক হওয়া, মানে কোনো ধরনের পূর্ব সংকেত ছাড়াই রোগীর বুকব্যথা, শ্বাসকষ্ট ও অস্থিরতা মারাত্মক পর্যায়ে শুরু হয়ে যায়। উচ্চ রক্তচাপ দেখা দিলে প্রাথমিক অবস্থায় চিকিৎসা নিতে হবে। তার সঙ্গে সঠিক খাদ্যাভ্যাস ও স্বাস্থ্যসম্মত জীবনযাপন পদ্ধতি অনুসরণ করতে পারলে ধীরে ধীরে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। তাই অবহেলা না করে রক্তচাপ নিয়ে প্রাথমিক অবস্থা থেকেই যত্নবান ও সচেতন হতে হবে।
-ডা. এম শমশের আলী, চিফ কনসালটেন্ট, শমশের হার্ট কেয়ার, শ্যামলী, ঢাকা