ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে ব্রিটেনের পদত্যাগ বা ব্রেক্সিট নিয়ে যুক্তরাজ্যের রাজনীতি এক বিরল সঙ্কটের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। প্রথা ভেঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের সরকার আগামী পাঁচ সপ্তাহের জন্য সংসদের কার্যক্রম স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে এবং সে লক্ষ্যে নির্দেশ দিতে ব্রিটেনের রানীকে পরামর্শ দেয়া হচ্ছে বলে জানা যাচ্ছে। কিন্তু এই সিদ্ধান্তে উত্তাল হয়ে উঠেছে ব্রিটেন। বিক্ষোভ-প্রতিবাদ আর সরকারের সমালোচনায় মুখর রয়েছে দেশটির রাজপথ।
এরই মাঝে, প্রশাসনের একতরফা সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে পিটিশন দাখিল করা হয়েছে। যাতে সই করেছেন লাখো ব্রিটিশ। বুধবার, প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের পার্লামেন্ট মুলতবি রাখার প্রস্তাবে সম্মতি দেন রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথ।
তবে প্রধানমন্ত্রী জনসনের এই সিদ্ধান্তের কথা জানতে পেরে চরম ক্ষিপ্ত হয়েছে ব্রিটেনের প্রায় সবগুলো বিরোধী দল। তারা মনে করছে, কোন চুক্তি ছাড়াই ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে ব্রিটেনকে বের করে আনার যে পরিকল্পনা প্রধানমন্ত্রী জনসন করছেন, বিরোধীদের হস্তক্ষেপে তা যেন সংসদে আটকে না যায়, তার জন্যই সংসদের অধিবেশন স্থগিত করার বিরল এই সিদ্ধান্ত তিনি নিয়েছেন।
প্রধান বিরোধী দল লেবার পার্টির নেতা জেরেমি করবিন বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী ব্রিটেনের গণতন্ত্রকে চরম হুমকির মুখে ফেলেছেন। সংসদের স্পিকার জন বারকো মন্তব্য করেছেন, এই পদক্ষেপ সংবিধান লঙ্ঘনের সামিল হবে।
সবচেয়ে ক্রুদ্ধ প্রতিক্রিয়া এসেছে বিরোধীদল এসএনপি নেত্রী ও স্কটল্যান্ডের মুখ্যমন্ত্রী নিকোলা স্টারজনের কাছ থেকে। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী একটা স্বৈরশাসকের মত আচরণ করছেন। এটা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।
তিনি আরও বলেন, তিনি কিছু বাড়িয়ে বলছেন না। কিন্তু যদি সংসদের এমপিরা প্রধানমন্ত্রীকে ঠেকাতে না পারেন, তাহলে ব্রিটেনের সংসদীয় গণতন্ত্রের মৃত্যু হবে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
অন্যদিকে, প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন বলেন- ব্রেক্সিটের সাথে সংসদ স্থগিত রাখার কোনো সম্পর্ক নেই। সরকারের সংসদীয় কার্যক্রমের স্বার্থে, জাতীয় স্বার্থে এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
জনসন উল্লেখ করেন, এই দেশকে এগিয়ে নিতে সরকারের যে পরিকল্পনা তা বাস্তবায়ন শুরুর জন্য তিনি ৩১শে অক্টোবর পর্যন্ত অপেক্ষা করতে চান না।
তিনি বলেন, তার সরকার একটি নতুন সরকার। দেশের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, নিরাপত্তা, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্য তাদের অনেক পরিকল্পনা রয়েছে, যেগুলোর জন্য প্রয়োজন নতুন আইন। ফলে রানীর ভাষণের আয়োজন করা হয়েছে ১৪ই অক্টোবর, সে কারণেই কয়েক সপ্তাহ সংসদ স্থগিত থাকবে এবং ব্রেক্সিটের সাথে এর কোনো সম্পর্ক নেই। কিন্তু বিরোধীরা তার এই যুক্তি গ্রহণ করছেন না। তাদের কথা, চুক্তি ছাড়া ব্রেক্সিট করাই সরকারি দলের আসল লক্ষ্য।
লন্ডনে ব্রিটিশ রাজনীতির একজন বিশ্লেষক ড. মুশতাক খান বিবিসি বাংলাকে বলেন, এই ধরনের সঙ্কট ব্রিটেনের বহু বছরের রাজনীতির ইতিহাসে খুবই বিরল।
তার মতে, বিরোধীদের পক্ষে তেমন কিছু করা কঠিণ কারণ প্রধানমন্ত্রী যা করছেন আইন মেনেই তা করছেন।
বিডি প্রতিদিন/এনায়েত করিম