বিশ্বের দীর্ঘতম সাসপেনশন ব্রিজ নির্মাণে চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে ইতালির সরকার। প্রায় ১৩.৫ বিলিয়ন ইউরো (১৫.৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার) ব্যয়ে নির্মিতব্য এই ‘মেসিনা ব্রিজ’ ইতালির বুট আকৃতির মূলভূখণ্ডের দক্ষিণ প্রান্ত কালাব্রিয়া এবং দ্বীপ রাজ্য সিসিলিকে সংযুক্ত করবে।
৩.৩ কিলোমিটার দীর্ঘ এই সেতু নির্মাণ হবে ভূমধ্যসাগরের অন্যতম ভূমিকম্পপ্রবণ এলাকায়। তবে প্রকল্প ডিজাইনাররা দাবি করেছেন, সেতুটি শক্তিশালী ভূমিকম্প প্রতিরোধে সক্ষম হবে।
প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি বুধবার এক ঘোষণায় বলেন, এই প্রকল্প বর্তমান ও ভবিষ্যতের ইতালির জন্য একটি বিনিয়োগ। আমরা চ্যালেঞ্জ উপভোগ করি, যদি তার যথার্থতা থাকে।
মেসিনা ব্রিজে থাকবে দুইটি রেললাইন এবং উভয় পাশে তিনটি করে গাড়ি চলাচলের লেন। ৪০০ মিটার (১৩০০ ফুট) উচ্চতার দুইটি টাওয়ারের মাধ্যমে স্থাপিত হবে এই সেতু।
সরকার চাইছে প্রকল্পটিকে সামরিক ব্যয়ের আওতায় আনা হোক, যাতে এটি ন্যাটোর ৫ শতাংশ জিডিপি ব্যয় লক্ষ্যমাত্রায় যুক্ত হয়।
পরিবহনমন্ত্রী ও লেগা পার্টির নেতা মাত্তেও সালভিনি বলেন, আমাদের লক্ষ্য ২০৩২ থেকে ২০৩৩ সালের মধ্যে ব্রিজটি নির্মাণ সম্পন্ন করা। এই প্রকল্প বছরে প্রায় ১ লাখ ২০ হাজার কর্মসংস্থান সৃষ্টি করবে এবং দক্ষিণ ইতালির অর্থনীতিতে গতি আনবে।
তবে প্রকল্পটি এখনও ইতালির কোর্ট অফ অডিটরস এবং জাতীয় ও ইউরোপীয় পরিবেশ সংস্থার চূড়ান্ত অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। তাছাড়া সেতুর দুই পাশের যেসব অঞ্চলের মানুষদের সম্পত্তি অধিগ্রহণ করা হবে, তাদের মতামত গ্রহণ করাও বাধ্যতামূলক।
বেশ কিছুবার এই প্রকল্প স্থগিত হয়েছে অতীতেও। প্রথম পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছিল প্রায় ৫০ বছর আগে। কিন্তু ব্যয় পরিবেশগত প্রভাব, নিরাপত্তা এবং মাফিয়ার হস্তক্ষেপ নিয়ে উদ্বেগের কারণে তা কখনও বাস্তবায়ন হয়নি।
স্থানীয় রাজনীতিকদের মধ্যে বিরোধিতাও স্পষ্ট। ডেমোক্র্যাটিক পার্টির (পিডি) সিনেটর নিকোলা ইরতো একে “বিতর্কিত ও বিভাজনমূলক” প্রকল্প আখ্যা দিয়ে বলেন, এটি স্থানীয় পরিবহন, আধুনিক অবকাঠামো, নিরাপদ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও মানসম্মত স্বাস্থ্যসেবার মতো গুরুত্বপূর্ণ খাত থেকে বাজেট সরিয়ে নিচ্ছে।
ভিলা সান জোভান্নি শহরের মেয়র জিউসি কামিনিতি বলেন, সেতুর নির্মাণ তাদের শহরে প্রভাব ফেলবে এবং আরও সময় নিয়ে আলোচনার প্রয়োজন ছিল।
এদিকে নো টু দ্য ব্রিজ নামের একটি ক্যালাব্রিয়ান জন-আন্দোলন সংগঠন এই সিদ্ধান্তকে প্রযুক্তিগত মূল্যায়নের ফল নয় বরং রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত হিসেবে অভিহিত করেছে।
তাদের মতে, সেতু নির্মাণে দৈনিক লক্ষ লক্ষ লিটার পানি ব্যবহার হবে অথচ সিসিলি ও কালাব্রিয়াতে প্রায়ই খরা দেখা দেয়।
বর্তমানে ট্রেন পারাপারের একমাত্র উপায় হল ফারিতে তুলে ৩০ মিনিটে সমুদ্র পার করে দেওয়া। এই দীর্ঘমেয়াদি প্রকল্পের বাস্তবায়ন যদি শেষ পর্যন্ত হয়, তবে তা ইতালির দক্ষিনাঞ্চলের জন্য এক নতুন যুগের সূচনা হতে পারে।
সূত্র: বিবিসি
বিডি প্রতিদিন/নাজমুল