ভারতের দক্ষিণের রাজ্য কেরালা সম্প্রতি এক অনন্য মাইলফলক স্পর্শ করেছে। দেশটির সরকারের তথ্য অনুযায়ী, যখন দেশের মাত্র ৩৮ শতাংশ পরিবার ডিজিটাল জ্ঞান সম্পন্ন, তখন কেরালা পরিণত হয়েছে ভারতের প্রথম শতভাগ ডিজিটাল জ্ঞানসম্পন্ন রাজ্যে। এই সাফল্যের পেছনে সবচেয়ে বড় অবদান রেখেছেন সেখানকার প্রবীণ নাগরিকরা।
কেরালা, যে রাজ্যটি ১৯৯১ সালে ভারতের প্রথম সম্পূর্ণ সাক্ষর রাজ্য হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছিল, সেই কেরালাই এখন ডিজিটাল বিপ্লবের পথিকৃৎ। তিন বছর আগে শুরু হওয়া এই যাত্রা শেষ হয়েছে প্রবীণদের অদম্য আগ্রহ ও অংশগ্রহণে।
এই যাত্রার সূচনা হয়েছিল তিরুবনন্তপুরমের কাছে অবস্থিত পুলামপারা গ্রামে। সরকারি প্রকল্পের আওতায় কাজ করা গ্রামীণ শ্রমিকদের মজুরি যখন সরাসরি তাদের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ডিজিটাল মাধ্যমে পাঠানো শুরু হয়, তখন থেকেই সমস্যার সূত্রপাত। নিজেদের বেতন ঠিকঠাক জমা হয়েছে কিনা, তা অনলাইনে দেখার জন্য তাদের ডিজিটাল সাক্ষরতার প্রয়োজন ছিল। পুলামপারা গ্রামের পঞ্চায়েত প্রধান রাজেশ পি.ভি. একটি সাক্ষাৎকারে জানান, গ্রামবাসীদের তাদের বেতন দেখার জন্য ডিজিটাল সাক্ষরতা জরুরি ছিল। আর এই ডিজিটাল বেতন স্থানান্তরই নতুন এক ডিজিটাল শিক্ষার প্রেরণা জোগায়।
২০২২ সালে গ্রাম পঞ্চায়েতের উদ্যোগে একটি ডিজিটাল সাক্ষরতা অভিযান শুরু করা হয়। এই অভিযানটি প্রাথমিকভাবে ৬০ বছর পর্যন্ত বয়সের মানুষের জন্য হলেও প্রবীণরাও এতে যোগ দিতে আগ্রহ দেখান। অবাক করা বিষয় হলো ১০৩ বছর বয়সী মানুষও এই ক্লাসে অংশ নেন। যারা কেবল ফোনকলের জন্য স্মার্টফোন ব্যবহার করতেন, তারা হঠাৎ করে আবিষ্কার করলেন যে মোবাইল ফোন আরও অনেক কাজে ব্যবহার করা যায়। প্রবীণরা খবর দেখা থেকে শুরু করে নিজেদের জীবনকে আরও সমৃদ্ধ করার জন্য ফোনের ব্যবহার শুরু করলেন।
পুলামপারার এই সাফল্য কেরালা জুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। রাজ্য-স্তরের দারিদ্র্য দূরীকরণ ও নারী ক্ষমতায়ন কর্মসূচি ‘কুদুম্বশ্রী’-এর অধীনে স্থানীয় স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলো এই উদ্যোগকে এগিয়ে নিয়ে যায়।
গত বৃহস্পতিবার কেরালা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন এই কর্মসূচির সফল সমাপ্তি ঘোষণা করেন। তিনি বলেন, কেরালাই প্রথম রাজ্য যা ১৯৯১ সালের এপ্রিলে শতভাগ সাক্ষরতা অর্জন করেছিল এবং এখন আমরাই প্রথম শতভাগ ডিজিটাল সাক্ষরতা অর্জন করলাম।
পুলামপারার সেই সফল অভিযানের সাক্ষী ছিলেন ৬৫ বছর বয়সী গৃহিণী পদ্মিনী বিশ্বনাথন। তিনি তার ৭৫ বছর বয়সী স্বামীর সাথে এখন ডিজিটাল দুনিয়া অন্বেষণ করছেন। পদ্মিনী জানান, ডিজিটাল সাক্ষরতা আমার এবং আমার স্বামীর জন্য এক নতুন জগতের দরজা খুলে দিয়েছে। এখন আমি রান্না শিখতে পারি, সেলাই শিখতে পারি এবং অনেক মজার ভিডিও দেখতে পারি। আমার স্বামী খবর দেখতে এবং পুরোনো সিনেমা দেখতে ভালোবাসেন।
পদ্মিনী আরও জানান, আমি এখনও ব্যাংকিংয়ের জন্য ইন্টারনেট ব্যবহার করতে কিছুটা নার্ভাস বোধ করি কিন্তু ডিজিটাল বিশ্ব অন্বেষণ করতে আমার খুব ভালো লাগে। মনে হয়, পুরো পৃথিবী হঠাৎ আমাদের ঘরে চলে এসেছে।
এই অভিযান প্রমাণ করে বয়স কোনো বাধা নয়। কেরালা প্রবীণদের সক্রিয় অংশগ্রহণের মাধ্যমে প্রযুক্তিকে আলিঙ্গন করে এক নতুন উদাহরণ স্থাপন করেছে।
সূত্র: আরব নিউজ
বিডি প্রতিদিন/নাজমুল