২ ডিসেম্বর, ২০২০ ১৫:০৪

দারিদ্র্য বিমোচনে ইসলাম কী বলে

নূর মুহাম্মদ রাহমানী

দারিদ্র্য বিমোচনে ইসলাম কী বলে

গত ডিসেম্বরে চীনের উহানে শুরু হওয়া করোনা সংক্রমণের বছর পূর্তি হতে চলছে। এখনো মানুষ এ মহামারী-মুক্ত হতে পারছে না। মিলছে না আশার আলো। ইদানীং নতুন করে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ বা সেকেন্ড ওয়েভের আলোচনা যেন জনমনে আরও আতঙ্ক বাড়িয়ে তুলছে। সবখানে বয়ে চলেছে রিক্ততার বাতাস। অর্থনীতিতে ধস নেমেছে চরমভাবে। তবে এতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সমাজের নিম্নবিত্ত মানুষ। একাধিক গবেষণা সংস্থার জরিপ বলছে, গত সাত মাসে বেশির ভাগ মানুষেরই আয় কমেছে কভিডের কারণে। দারিদ্র্যসীমার আরও নিচে অসহায়ভাবে নেমে যাচ্ছে নিম্নবিত্তরা। সমাজের ধনী অংশের আয় কমেছে যৎসামান্যই। ফলে দ্রুত বাড়ছে ধনী-গরিবের বৈষম্য। সূত্র : বাংলাদেশ প্রতিদিন, ১৬ নভেম্বর, ২০২০। ইসলাম সর্বজনীন ধর্ম। এতে রয়েছে মানবজীবনের সবকিছুর সমাধান। এমনকি অর্থনৈতিক বিষয়েও রয়েছে সুষ্ঠু নীতিমালা। ইসলামের জাকাত ও দান-সদকার নীতিমালা সম্পদের সুষ্ঠু বণ্টনের উত্তম ও উপযোগী মাধ্যম। জাকাত দারিদ্র্য বিমোচন ও সম্পদের প্রবাহ তৈরি করে। ধনী-গরিবের বৈষম্য দূর করে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘যাতে তোমাদের বিত্তবানদের মাঝেই শুধু সম্পদ আবর্তন না করে।’ সুরা হাশর, আয়াত ৭। জাকাত প্রদান কোনো দয়া ও করুণার বিষয় নয়, এটা গরিব-অসহায় মানুষের অধিকার। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘তাদের ধনসম্পদে ছিল প্রার্থী ও বঞ্চিতের হক বা ন্যায্য অধিকার।’ সুরা জারিয়াত, আয়াত ১৫-১৯। সঠিকভাবে জাকাত পরিশোধ করলে সমাজে অর্থনৈতিক ভারসাম্য সৃষ্টি হবে। পরস্পর সম্প্রীতি ও হৃদ্যতা তৈরি হবে। জাকাত ছাড়াও পুণ্য অর্জন ও মানবিকতার খাতিরে বিভিন্নভাবে সাহায্য -সহযোগিতা করে অসহায়-অনাথ মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে। তাহলে ক্ষুধার জ্বালায় তাদের ধুঁকে ধুঁকে মরতে হবে না। তারাও মোটামুটিভাবে সমাজে দাঁড়িয়ে থাকতে পারবে। দারিদ্র্য দূর করতে হলে ব্যক্তিগত আমলের প্রতিও যত্নবান হতে হবে। আল্লাহর ইবাদতের জন্য ফারেগ হতে হবে। স্বীয় রবের ইবাদতের জন্য হৃদয়কে পরিপূর্ণ একাগ্র করার ক্ষেত্রে অধিক যত্নবান হতে হবে। হজরত আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবীজি (সা.) একটি হাদিসে কুদসিতে বলেন, ‘আল্লাহ বলেন, হে বনি আদম! তুমি আমার ইবাদতের জন্য নিজেকে ফারেগ কর। (তাহলে) আমি তোমার সিনাকে সম্পদশালী করে দেব এবং তোমার দারিদ্র্য দূর করে দেব। আর যদি তা না কর তাহলে তোমার হাত (অর্থহীন) কাজে ব্যস্ত করে দেব আর লোকের কাছে তোমাকে মুখাপেক্ষী করে রাখব।’ তিরমিজি। অভাব অনটনে আল্লাহর শরণাপন্ন হলে তিনি অবশ্যই তাকে রিজিক দেবেন। হজরত ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুল (সা.) বলেছেন, ‘অভাব অনটন যার ওপর হানা দেয় এরপর সে যদি তা জনসমক্ষে প্রকাশ করে তবে তার এ অভাব দূরীভূত হবে না। আর যে ব্যক্তি তার অভাব সম্পর্কে আল্লাহর শরণাপন্ন হয়, তাহলে শিগগিরই হোক কি বিলম্বে আল্লাহ তাকে রিজিক দেবেনই।’ আবু দাউদ ও তিরমিজি।

দারিদ্র্য দূরীকরণে নিয়ম করে কায়মনোবাক্যে দোয়া করা অব্যাহত রাখতে হবে। দোয়ার ক্ষেত্রে রসুল (সা.)-এর শেখানো দোয়াগুলো প্রাধান্য দিতে হবে। বিশিষ্ট তাবেয়ি মাকহুল আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণনা করেন, রসুল (সা.) একবার আমাকে বলেন, ‘লা হাওলা ওয়ালা কুওয়্যাতা ইল্লাবিল্লাহি’ বেশি বেশি বলবে। কেননা তা জান্নাতের ভান্ডারের বাক্যবিশেষ। মাকহুল বলেন, ‘যে বলবে, ‘লা হাওলা ওয়ালা কুওয়্যাতা ইল্লাবিল্লাহি ওয়ালা মানজাআ মিনাল্লাহি ইল্লা ইলাইহি’ আল্লাহ তার সত্তরটি কষ্ট দূর করে দেবেন, যার তুচ্ছটা হলো দারিদ্র্য।’ তিরমিজি।

লেখক : মুফতি ও মুহাদ্দিস, জামিয়া আরাবিয়া দারুল উলুম বাগে জান্নাত চাষাঢ়া, নারায়ণগঞ্জ।

সর্বশেষ খবর