৮ ডিসেম্বর, ২০২১ ০৮:১৮

জ্ঞানের অভাবে মানুষ যেভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়

আল্লামা মাহ্‌মূদুল হাসান

জ্ঞানের অভাবে মানুষ যেভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়

সঠিক জ্ঞানের অভাবে মানুষ কেবল পাপাচারিতায়ই লিপ্ত হয় না; বরং তওবা ও তাকওয়া থেকেও বঞ্চিত হয়। সে গুনাহ ও পাপাচারিতাকে সওয়াবের আমল মনে করে সম্পাদন করে এবং চির-গুমরাহী ও ধ্বংসের কবলে আক্রান্ত হয়।

সঠিক জ্ঞানের অভাবেই মানুষ কবরে গাছের ডাল প্রোথিত করে কবরস্থ ব্যক্তির নাজাত কামনা করে। একই আকিদায় কবরে ফুল ছড়ায়, গিলাফ দেয়, আরও কত কিছু করে। তারা মনে করে গাছের ডাল ও ফুলের জিকিরের বরকতে কবরের আজাব দূর হয়ে যায় বলেই তো রসুল (সা.) দুজনের কবরে নিজ হাতে বৃক্ষশাখা প্রোথিত করে বলেছিলেন, ডালগুলো শুকানোর আগেই কবরস্থ ব্যক্তিদ্বয়ের কবরের আজাব দূর হয়ে যাবে। ডাল-ফুলের জিকিরের এই বরকত! সুতরাং এরূপ করা নেক আমল হবে না কেন?

মুক্তির জন্য এরূপ করা যথেষ্ট নয়; বরং নেক আমল করা একান্ত জরুরি। এরূপ কর্মকান্ড করে আর আমল না করে মুক্তির কামনা করা নিতান্ত বোকামি ছাড়া কিছু নয়। যদি এরূপ করার দ্বারা মুক্তির পথ সুগম হতো তাহলে এতসব মুজাহাদা-মেহনতের নির্দেশ করা হতো না, আমলের প্রয়োজন হতো না; বরং এ রকম ব্যবস্থার অসিয়ত করে গেলেই চলত।

এতটুকু কর্মকান্ড যথেষ্ট হলে সাহাবা ও পরবর্তী বুজুর্গানে দীনের কবরেও এরূপ করার সম্ভাবনা ছিল; কিন্তু এরূপ করা হলো না কেন? রসুলের হাদিসের মর্মকথা বুঝতে হবে। যে দুজনের কবরে তিনি ডাল প্রোথিত করেছিলেন তাদের দুজনের কবরে আজাব হওয়ার কারণ ছিল দুটি। একটি কারণ ছিল প্রস্রাবের ক্ষেত্রে অসতর্কতা অবলম্বন। এ লোকটি প্রস্রাবের ব্যাপারে ছিল খুবই অসতর্ক। যেমন বর্তমান যুগেও অনেক মুসলমান অনর্থক দাঁড়িয়ে প্রস্রাব করে। এতে তাদের লজ্জাবোধ হয় না।

বর্বরতার যুগে কাফিররা দাঁড়িয়ে প্রস্রাব করত আর বলত, বসে বসে প্রস্রাব করা মহিলাদের কাজ। তারা বিশ্বনবী ও সাহাবিদের বসে বসে প্রস্রাব করার কারণে ভর্ৎসনা করত। তাই দাঁড়িয়ে প্রস্রাব করা বিজাতীয় অনুকরণের শামিল। দাঁড়িয়ে প্রস্রাব করা শরিয়তসম্মত নয়। রসুলের সুন্নাতের খেলাফ দাঁড়িয়ে প্রস্রাব করলে প্রস্রাব জমিনে ছড়িয়ে পড়ে, ছিটে কাপড়ে লাগে, এতে কাপড় নাপাক হয়ে যায়; সে কাপড়ে নামাজ আদায় করলে নামাজ দুরস্ত হয় না। বিশেষ অসুবিধার কারণে দাঁড়িয়ে প্রস্রাব করতে হলে সেটা হবে স্বতন্ত্র ব্যাপার।

প্রস্রাব-পায়খানার পর পবিত্রতা লাভের তাগিদেই ঢিলা ব্যবহার করাকে সুন্নাত বলা হয়েছে। ঢিলা-কুলুখ ব্যবহারের কারণেই কুবাবাসীরা আল্লাহ ভাষায় প্রশংসা লাভে ধন্য হন। হজরত সালমান ফারসির বিশুদ্ধ হাদিসেও ঢিলার প্রতি গুরুত্ব আরোপিত হয়েছে। কিন্তু একশ্রেণির লোক ঢিলা-কুলুখ ব্যবহারকে বিদাত বলে মন্তব্য করতে লজ্জাবোধ করে না।

তবে কি রসুল বিদাতের নির্দেশ দিয়েছেন, আর আল্লাহ বিদাতিদের প্রশংসা করে আয়াত নাজিল করেছেন? অন্যদিকে একশ্রেণির লোক ঢিলা-কুলুখ ব্যবহারের ব্যাপারে সীমা লঙ্ঘন করে। তারা ঢিলা-কুলুখ ধরে মিসওয়াক করে, কথাবার্তাও বলে, ফরজ তরক হয়ে যায় সেদিকে খবর থাকে না, জামাত চলে যাচ্ছে কোনো পরোয়া নেই।

লেখক : আমির, আল হাইআতুল উলয়া ও বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশ।

বিডি প্রতিদিন/আবু জাফর

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর