মাহে রমজান আমাদের জীবনে দিয়েছে অপার মহিমা। বরকত, রহমত, নাজাত ও মাগফিরাতের মাস রমজান। তাই এ মাসের প্রস্তুতি গ্রহণ মুমিন মুসলমান হিসেবে আমাদের জন্য অতীব জরুরি। আর যেহেতু ইবাদতের মাস রমজান সুতরাং নবী করিম (সা.)-এর আদর্শ মেনে কিছু প্রস্তুতি আমাদের নেওয়া অত্যাবশক। রসুল (সা.) রমজান পাওয়ার জন্য রজব মাস থেকেই দোয়া করতেন। হজরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুল (সা.) বলতেন, ‘হে আল্লাহ! রজব ও শাবান আমাদের জন্য বরকতময় করুন এবং আমাদের রমজান পর্যন্ত পৌঁছে দিন।’ (তাবারানি।
আল্লাহ বলেন, ‘হে ইমানদারগণ! তোমাদের ওপর রোজা ফরজ করা হয়েছে, যেভাবে তোমাদের আগের লোকদের (নবী ও রসুলদের উম্মতদের) ওপর ফরজ করা হয়েছিল।’ (সুরা বাকারা, আয়াত ১৮৩)
রমজান আগমনের জন্য আল্লাহর রসুল দিনক্ষণ গণনা করতেন। হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘আল্লাহর রসুল শাবান মাসের দিন- তারিখের হিসাবের প্রতি এত বেশি খেয়াল রাখতেন, যা অন্য মাসের ক্ষেত্রে করতেন না।’ (আবু দাউদ)। রমজানের বৈশিষ্ট্য হলো ফরজ রোজা পালন, কোরআন নাজিল হওয়া, জান্নাতের দরজা খুলে দেওয়া, জাহান্নামের দরজা বন্ধ হওয়া, শয়তানকে শৃঙ্খলাবদ্ধ করা, বিশেষ রজনী লাইলাতুল কদর পাওয়া। মুমিন মুসলমানের দোয়া কবুল হওয়া, জাহান্নামের আজাব থেকে মুক্তি পাওয়া, আল্লাহর ক্ষমা পাওয়া, রমজানের ওমরাহে হজের সমান সওয়াব পাওয়া ইত্যাদি। মহান আল্লাহ বলেন, ‘তোমাদের মধ্যে যে লোক এ মাসটি পাবে, সে এ মাসে রোজা রাখবে।’ (সুরা বাকারা, আয়াত ১৮৫)।
রমজানের অন্যতম বৈশিষ্ট্য এটি কোরআন নাজিলের মাস। রমজানের এক সম্মানিত রাতে (লাইলাতুল কদর) আল্লাহতায়ালা উম্মতে মুহাম্মদীর জীবন পরিচালনার গাইডলাইন হিসেবে মহাগ্রন্থ আল কোরআন নাজিল করেন। আল্লাহ বলেন, ‘শপথ সুস্পষ্ট কোরআনের, আমি একে নাজিল করেছি এক বরকতময় রাতে, নিশ্চয়ই আমি সতর্ককারী।’ (সুরা দুখান, আয়াত ২-৩)।
সুরা আল কদরে আল্লাহ বলেন, ‘অবশ্যই আমি এ গ্রন্থটি এক মর্যাদাপূর্ণ রাতে নাজিল করেছি। তুমি কি জান সেই মর্যাদাপূর্র্ণ রাতটি কী? মর্যাদাপূর্ণ রাতটি হচ্ছে হাজার মাসের চেয়েও উত্তম।’ (আয়াত ১-৩)। সুবহানাল্লাহ! রমজানের শেষ দশকের বেজোড় যে কোনো একটি রাত হলো লাইলাতুল কদর।
সুতরাং এ বরকতময় ও মর্যাদাপূর্ণ মাসে আমরা মানুষের কল্যাণে বেশি করে নেক আমল করি। ব্যবসায় অধিক লাভ ও মুনাফার আশায় ধনসম্পদ পুঞ্জীভূত না করি। আল্লাহ বলেন, ‘যারা সোনা রুপা জমা করে এবং আল্লাহর রাস্তায় খরচ করে না তাদের জন্য আপনি কঠিন ও যন্ত্রণাদায়ক শাস্তির খবর দিন।’ (সুরা তওবা, আয়াত ৩৪)
রমজান হলো ক্ষমা পাওয়া এবং আত্মশুদ্বির মাস। রমজান পাওয়ার পরও যে নিজেকে পাপ থেকে মুক্ত করতে পারল না তার মতো হতভাগা আর কেউ নেই। রসুল (সা.) বলেছেন, ‘ওই ব্যক্তির নাম ধুলায় ধূসরিত হোক, যার সামনে আমার নাম নেওয়া হলো অথচ সে আমার প্রতি দরুদ পড়ল না, ওই ব্যক্তির নাম ধুলায় ধূসরিত হোক, যার কাছে রমজান এসে চলে গেল অথচ তার পাপগুলো ক্ষমা করিয়ে নিতে পারল না, আর যে তার বৃদ্ধ মাতা-পিতাকে পেল কিন্তু তাদের মাধ্যমে জান্নাত উপার্জন করতে পারল না।’ (তিরমিজি)
এ মাসে মানুষের নেক আমল বাড়িয়ে দেওয়া হয়। আল্লাহ বলেন, ‘রোজা আমার জন্য, সুতরাং তার প্রতিদান আমি নিজেই প্রদান করব।’ (বুখারি।
রসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি বাজারে পণ্যের অভাবের সময় পণ্য মজুদ করে রাখে সে বড় পাপী।’ (মুসলিম)। সুতরাং বাজারে মূল্যবৃদ্ধি ও মজুদদারি করা থেকে যেন আমরা বিরত থাকি।
রসুল (সা.) আরও বলেন, ‘যে ব্যক্তি রমজানে কোনো একটি নফল ইবাদত করল, সে যেন অন্য মাসের একটি ফরজ আদায় করল। আর রমজানে যে ব্যক্তি একটি ফরজ আদায় করল, সে যেন অন্য মাসের ৭০টি ফরজ আদায় করল।’ (ইবনে খুজায়মা)।
রসুল (সা.) আরও বলেন, ‘রমজানের ওমরাহ আমার সঙ্গে হজ আদায়ের সমতুল্য।’ সুবহানাল্লাহ! হাদিসে এসেছে, জান্নাতে একটি দরজা আছে যার নাম ‘রাইয়ান’। একমাত্র রোজাদাররাই এ দরজা দিয়ে জান্নাতে প্রবেশ করবে। হাদিসে এসেছে, ‘তিন ব্যক্তির দোয়া ফেরত দেওয়া হয় না- রোজদার, (ইফতারের সময়), ন্যায়পরায়ণ শাসক ও মজলুমের দোয়া।’
সুতরাং আল্লাহ রব্বুল আলামিন আমাদের সবাইকে রমজানের পবিত্রতা মেনে রোজা আদায় এবং বরকত, রহমত, মাগফিরাত ও নাজাত লাভের তৌফিক দান করুন।
লেখক : অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংকার।
বিডি প্রতিদিন/আবু জাফর