১২ আগস্ট, ২০২২ ০৭:৪৯

কোরআনের আলোকে জান্নাতের বিবরণ

মুফতি হেলাল উদ্দীন হাবিবী

কোরআনের আলোকে জান্নাতের বিবরণ

জান্নাত আরবি শব্দ। এর আভিধানিক অর্থ উদ্যান, বাগান, আরামদায়ক স্থান ইত্যাদি। শরিয়তের পরিভাষায়, পার্থিব জীবনাবসানের পর মোমিনের চিরস্থায়ী জীবনের জন্য মহান আল্লাহ যে সুখময় আবাস প্রস্তুত করে রেখেছেন তাকে জান্নাত বলা হয়। বিচার দিবসে দয়াময় আল্লাহ যাদের আমলনামার প্রতি সন্তুষ্ট হবেন তাদের দান করবেন ফুলে ফলে সুশোভিত, সুরম্য অট্টালিকাসংবলিত মনোমুগ্ধকর সুবিশাল ও চিরস্থায়ী শান্তির নীড় বিলাসবহুল জান্নাত; যার তলদেশে প্রবাহিত বিভিন্ন ধরনের নদী-নালা ও ঝরনাধারা। সেখানে আনন্দ উপভোগের সব রকমের জিনিসই থাকবে বিদ্যমান। পূরণ করা হবে অন্তরের সব অভিলাষ। আর সেখানের বাসিন্দারা হবেন সার্বিক অকল্যাণ থেকে সর্বদা মুক্ত। মহান আল্লাহ জান্নাতের নিয়ামতরাজির বিবরণ কোরআনুল আজিমের বিভিন্ন আয়াতে উল্লেখ করেছেন। কোরআনে জান্নাতের সংখ্যা আট-

১. জান্নাতুল ফিরদাউস : যারা ইমান আনে ও সৎকর্ম করে তাদের আপ্যায়নের জন্য আছে ‘জান্নাতুল ফিরদাউস’। সেখানে তারা চিরকাল থাকবে, সেখানে থেকে তারা অন্য কোথাও যেতে চাইবে না। (সুরা কাহাফ, আয়াত ১০৭-১০৮)

২. দারুল মাকাম : যিনি স্বীয় অনুগ্রহে আমাদের ‘দারুল মাকাম’ তথা স্থায়ী আবাস দিয়েছেন, যেখানে কোনো কষ্ট-ক্লেশ আমাদের স্পর্শ করবে না। (সুরা ফাতির, আয়াত ৩৫)

৩. দারুল কারার : হে আমার সম্প্রদায়! এই পার্থিব জীবন তো অস্থায়ী উপভোগের বস্তু এবং আখেরাতই হচ্ছে ‘দারুল কারার’ তথা চিরস্থায়ী আবাস। (সুরা   মোমিন, আয়াত ৩৯)

৪. দারুস সালাম : আর আল্লাহ আহ্বান করেন ‘দারুস সালাম’ তথা শান্তির আলয়ের দিকে এবং যাকে ইচ্ছা সরল পথে পরিচালিত করেন। (সুরা ইউনুস, আয়াত ২৫)

৫. জান্নাতুল মাওয়া : তার কাছে ‘জান্নাতুল মাওয়া’ অবস্থিত। যখন কুল গাছটি যা আচ্ছাদিত করার তা আচ্ছাদিত করেছিল। তার (রসুলের) দৃষ্টিবিভ্রম হয়নি এবং সীমালঙ্ঘনও করেনি। (সুরা নাজম, আয়াত ১৫-১৭)

৬. দারুন নাইম : হে আমার পালনকর্তা! আমাকে প্রজ্ঞা দান করুন এবং সৎকর্মশীলদের অন্তর্ভুক্ত করুন এবং আমাকে পরবর্তীদের মধ্যে সত্যভাষী করুন। আর আমাকে ‘জান্নাতুন নাইম’ তথা নিয়ামতপূর্ণ জান্নাতের অধিকারীদের অন্তর্ভুক্ত করুন। (সুরা শুআরা, আয়াত ৮৩-৮৫)

৭. দারুল খুলদ : যখন তাদের বাঁধা অবস্থায় (জাহান্নামের) কোনো সংকীর্ণ স্থানে নিক্ষেপ করা হবে তখন তারা মৃত্যু কামনা করবে। (তখন তাদের বলা হবে) আজ তোমরা কেবল একবারের জন্য মৃত্যু কামনা কোরো না, বরং বহুবার মৃত্যু কামনা করতে থাক। বলুন, এটা উত্তম নাকি ‘জান্নাতুল খুলদ’ তথা চিরস্থায়ী আবাস, যার প্রতিশ্রুতি মুত্তাকিদের দেওয়া হয়েছে? এটাই তো তাদের পুরস্কার ও প্রত্যাবর্তনস্থল। সেখানে তারা স্থায়ীভাবে বসবাসরত থেকে যা চাইবে তা-ই পাবে। এ প্রতিশ্রুতি পূরণ আপনার প্রতিপালকেরই দায়িত্ব। (সুরা ফুরকান, আয়াত ১৩-১৬)

৮. জান্নাতুল আদন : (হে নবী!) আমি আপনার প্রতি যে কিতাব অবতীর্ণ করেছি তা সত্য, এটা পূর্ববর্তী কিতাবগুলোর সত্যায়নকারী। নিশ্চয়ই আল্লাহ তাঁর বান্দাদের সবকিছু জানেন ও দেখেন। এরপর আমি এ কিতাবের ওয়ারিশ বানিয়েছি আমার বান্দাদের মধ্যে তাদের, যাদের আমি মনোনীত করেছি। তাদের মধ্যে কতক তো নিজের প্রতি অত্যাচারী, কতক মধ্যমপন্থি এবং কতক আল্লাহর ইচ্ছায় সৎকর্মে অগ্রগামী। এটাই (আল্লাহর) মহা অনুগ্রহ। তারা প্রবেশ করবে ‘জান্নাতুল আদন’ তথা স্থায়ী বসবাসের জান্নাতে। সেখানে তাদের স্বর্ণনির্মিত কঙ্কন ও মুক্তা দ¦ারা অলংকৃত করা হবে এবং সেখানে তাদের পোশাক হবে রেশমের। (সুরা ফাতির, আয়াত ৩১-৩৩)।

সম্মানিত পাঠক! মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি ও সাক্ষাৎ লাভ এবং জান্নাত প্রাপ্তির পূর্বশর্ত হলো আল্লাহর হুকুম ও রসুলুল্লাহ (সা.)-এর সুন্নাহর পূর্ণাঙ্গ অনুসরণ। আর মহান রবের আনুগত্য ও দীনের প্রয়োজনে সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকারে সর্বদা প্রস্তুত থাকা। আল্লাহ এ সম্পর্কে কোরআনে ইরশাদ করেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ মোমিনের কাছ থেকে তাদের জীবন ও সম্পদ কিনে নিয়েছেন, তাদের জন্য রয়েছে জান্নাত- এটার বিনিময়ে। (সুরা তওবা, আয়াত ১১১)

লেখক : খতিব, মাসজিদুল কোরআন জামে মসজিদ, কাজলা (ভাঙ্গা প্রেস), যাত্রাবাড়ী, ঢাকা।


বিডি প্রতিদিন/ ওয়াসিফ

সর্বশেষ খবর