দ্বিতীয় হাসান মসজিদ মরক্কোর কাসাব্লাংকায় অবস্থিত। এটি আফ্রিকার মধ্যে সবচেয়ে বড় এবং পৃথিবীর সপ্তম বৃহত্তম মসজিদ। আটলান্টিক সাগরের তীরে অবস্থিত হাসান মসজিদটি এমনভাবে নির্মাণ করা হয়েছে, যার একটি অংশ আছে সাগরের পানির ওপর। ফলে মুসল্লিরা নামাজ যেমন পড়তে পারেন, তেমনি ইচ্ছা হলে অনায়াসে আটলান্টিকের অপরূপ শোভা উপভোগ করতে পারেন।
মসজিদটি ২২ একর জমির ওপর স্থাপিত হয়েছে। সাগরের ঢেউ যাতে মসজিদের কোনো ক্ষতি করতে না পারে-সে জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাও গ্রহণ করা হয়েছে। রাজা দ্বিতীয় হাসানের উদ্যোগে মসজিদটির কাজ শুরু হয় ১৯৮৬ সালের ১২ জুলাই। দিন-রাত দুই হাজার ৫০০ শ্রমিক সাত বছর ধরে মসজিদ নির্মাণের কাজ করেন। অবশেষে মসজিদের নির্মাণকাজ শেষ হয় ১৯৯৩ সালে। এর বাইরে এই বিশাল মসজিদ নির্মাণ এবং সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য কাজ করে ১০ হাজার শিল্পী ও কারিগর। মসজিদের স্থপতি ছিলেন ফরাসি স্থাপত্যবিদ মাইকেল পিনসাউ। দ্বিতীয় হাসান মসজিদ নির্মাণে ব্যয় হয়েছিল ৫৮৫ মিলিয়ন ইউরো।
বিভিন্ন ব্যক্তি ও পেশার ১২ মিলিয়ন মানুষ এই মহৎ কাজে আর্থিক সহায়তা প্রদান করেন। এঁদের প্রত্যেককে রসিদ ও সার্টিফিকেট প্রদান করা হয়। এর পরও এই বিশাল কাজের ব্যয়ভার বহন করতে এগিয়ে আসে কুয়েত ও সৌদি আরব। ২২ একর জায়গার ওপর নির্মিত মসজিদটির এক-তৃতীয়াংশই সাগরের কোলঘেঁষে পানির ওপর নির্মিত। মনে হয় ঢেউয়ের বুকে যেন মসজিদটি দুলছে। আর মুসল্লিরা নামাজ পড়ছেন সেই পানির ওপর। নির্মাণশৈলীতেও অনন্য এই মসজিদের তিন ভাগের এক ভাগই সাগরের ওপর অবস্থিত।
মূল মসজিদটি লম্বায় ৬৬০ ফুট এবং প্রস্থে ৩৩০ ফুট। এর মিনারের উচ্চতা ৬৮৯ ফুট, যা বিশ্বের মধ্যে সর্ববৃহৎ। দ্বিতীয় হাসান মসজিদের আরেকটি অনন্য বৈশিষ্ট্য হলো এখানে আরো বেশ কয়েকটি স্থাপনা যুক্ত করা হয়েছে। ৫২ হাজার ১০০ বর্গফুট এলাকাজুড়ে একটি অত্যাধুনিক মাদরাসা নির্মাণ করা হয়েছে। আছে একটি অনবদ্য মিউজিয়াম, যাতে মরক্কোর দীর্ঘ ইতিহাস প্রস্ফুটিত হয়েছে। আছে একটি বিশাল লাইব্রেরি, যেটিকে ইসলামী বিশ্বের সবচেয়ে বড় ও সমৃদ্ধ লাইব্রেরি হিসেবে গণ্য করা হয়।
মসজিদ চত্বরে পারিবারিক বনভোজন করার জন্য উপযুক্ত স্থাপনাসহ ৪১টি ঝরনা নির্মাণ করা হয়েছে, যা গোটা পরিবেশকে আরো নয়নাভিরাম করে তুলেছে। দ্বিতীয় হাসান মসজিদের মুসল্লি ধারণক্ষমতা এক লাখ পাঁচ হাজার। মসজিদের ভেতরের অংশে ২৫ হাজার এবং বাইরের অংশে ৮০ হাজার মুসল্লি একসঙ্গে নামাজ পড়তে পারেন।
মসজিদের মিনারের উচ্চতা ২১০ মিটার (৬৯০ ফুট)। দীর্ঘ ৩০ কিলোমিটার তথা ১৯ মাইল দূর থেকেই মিনার দেখা যায়। মসজিদের সুউচ্চ মিনার ৬০ তলা সমপরিমাণ উঁচু। মসজিদের ফ্লোর থেকে ছাদের উচ্চতা দীর্ঘ ৬৫ মিটার। ডিজিটাল পদ্ধতিতে মসজিদের ছাদ খুলে যায় বিধায় এর ভেতরে আলো-বাতাস প্রবেশ করতে পারে। তবে বৃষ্টির সময় মসজিদের ছাদ বন্ধ থাকে।
মরক্কোর দ্বিতীয় হাসান মসজিদ বিশ্বের পরিবেশবান্ধব মসজিদগুলোর অন্যতম। মসজিদের বিদ্যুৎ, পানি সংরক্ষণ, অজু ও বায়ু চলাচলব্যবস্থা দূষণ নিয়ন্ত্রণের উপযোগী করে তৈরি করা হয়েছে। মসজিদের ছাদে বৃষ্টির পানির জন্য জলাধার বানানো হয়েছে এবং পানি পুনর্ব্যবহারের ব্যবস্থাও রয়েছে। গরমের দিনে বড় বড় জানালা দিয়ে সাগরের নির্মল বাতাস সহজে মসজিদের ভেতরে প্রবেশ করে। ফলে বিদ্যুৎ খরচও খুব কম হয়। সাগরের তীরে মসজিদটির অবস্থানের কারণে এই সাশ্রয় সম্ভব হয়েছে।
বিডি-প্রতিদিন/আব্দুল্লাহ