আল্লাহপাকের দরবারে মায়ের মর্যাদা অপরিসীম। হাদিস শরিফে বর্ণিত হয়েছে, জনৈক সাহাবি নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে আরজ করলেন, হে আল্লাহর রসুল! মায়ের মর্যাদা সম্পর্কে কিছু বলুন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, মায়ের চেহারার দিকে মহব্বতের নজরে একবার দেখলে একটি মকবুল হজের সওয়াব আমলনামায় লেখা হয়। সাহাবি জিজ্ঞেস করলেন, দুবার নজর করলে? নবীজি বললেন, দুটি মকবুল হজের সওয়াব আমলনামায় লেখা হয়। সাহাবি জিজ্ঞেস করলেন, একশতবার দেখলে? নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, একশত মকবুল হজের সওয়াব আমলনামায় লেখা হবে।
শরিয়তের মাপকাঠি
আমার আরেকটি মাসয়ালা স্মরণ হয়েছে, তা হলো মসজিদে মহিলাদের জামাতের সহিত নামাজ আদায় করা। আমি জানি এ মাসয়ালা বললে অনেকের মনঃপূত হবে না। ফলে তারা মনে কষ্ট পাবেন। কিন্তু শরিয়তের সহিহ মাসয়ালা হিসেবে এটি বলতে হয়। আল্লাহপাক আপনাদের লেখাপড়া করার তৌফিক দান করেছেন, বর্তমানে বাংলাদেশে ফতোয়ার সব কিতাবাদি বাংলা ভাষায় প্রকাশ হয়ে যাচ্ছে। ওলামায়ে কেরাম ফতোয়ার কিতাবে কী লিখেছেন, তা পড়ুন। হাদিস শরিফে কী এসেছে, তা দেখুন! হজরত আয়েশা সিদ্দিকা রাজিয়াল্লাহু আনহা কী বলেছেন, তা লক্ষ্য করুন! হজরত ওমর ফারুক রাজিয়াল্লাহু আনহু মদিনার মসজিদে কী বলেছেন, সে বিষয়ে চিন্তা করুন! কোনো ব্যক্তি বিশেষের কথা দলিল হতে পারে না, সেটা তার ব্যক্তিগত আমল। মূল দলিল প্রমাণ হলো দুটি- ১. যদি কোনো ব্যক্তিকে দলিল হিসেবে মানতে হয়, তাহলে আসমানের নিচে জমিনের ওপরে একজনকে মানতে হবে। তিনি হলেন আখেরি নবী হজরত মুহাম্মদ মুস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। তাঁর ওঠাবসা, চলাফেরা, কথাবার্তা সবই শরিয়ত। সুতরাং তাঁকে মানতে হবে।
২. আর যদি কোনো জামাতকে ফলো করতে হয়, তাহলে আল্লাহর রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর সাহাবিদের রেখে গেছেন, তাদের ফলো করতে হবে। এরপর রয়েছে সমাজের সমষ্টিগত সিদ্ধান্ত। কোনো এক হাদিসের ব্যাখ্যার ব্যাপারে আমার একটি ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত আছে, অন্যজনের আরেকটি সিদ্ধান্ত আছে, এগুলো গ্রহণযোগ্য নয়। কারণ এমন হলে কেয়ামত পর্যন্ত একেকজন একেক রকম বুঝবে আর একেক রকম আমল করবে। এ অধিকার যদি মানুষকে দেওয়া হয়, তাহলে প্রত্যেকেই কোরআন-হাদিসের অর্থ নিজের বুঝ অনুসারে করবে। আমরা জানি পৃথিবীর সব মানুষের চিন্তা-ভাবনা, গবেষণা ও মেধা একরকম নয়। তাই কোরআন-হাদিস থেকে মাসয়ালা বের করার মধ্যে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়ে যাবে। এভাবে কোরআন-হাদিস একটি খেলনার বিষয় হিসেবে গণ্য হবে। তাই রসুলেপাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন-
সকলের কথা গ্রহণযোগ্য নয়; বরং আমার সাহাবা এবং ওলামায়ে কেরাম যা বলবেন, তা গ্রহণযোগ্য। যদি সকলের যুক্তি ও দলিল অনুসারে শরিয়ত পরিচালনার অধিকার দেওয়া হয়, তাহলে প্রত্যেক এলাকার মধ্যে আলাদা আলাদা শরিয়ত সৃষ্টি হয়ে যাবে। সুতরাং ওলামায়ে কেরামগণ কিছু নিয়মনীতি ও মূলধারা প্রণয়ন করেছেন, সেই নিয়মনীতি ও মূলধারা অনুসারে কোরআন-হাদিস বুঝতে হবে।
মহিলাদের নামাজের জামাতে শরিক হওয়ার ব্যাপারে শরিয়তের দিকনির্দেশনা রয়েছে।
আবু দাউদ শরিফের হাদিসে এসেছে- মহিলারা মসজিদে নামাজের জামাতে শরিক হতে হলে স্বামী ও অভিভাবকের অনুমতিক্রমে যেতে হবে। কারণ তাদের গোপনীয়তার ব্যাপার রয়েছে। তবে মহিলারা মসজিদে যেতে চাইলে তাদের নিষেধ করো না। (নামাজের সময় প্রথমে বালেগ পুরুষদের কাতার হবে, তারপর নাবালেগ ছেলেদের কাতার, তারপর হবে মহিলাদের কাতার)। কিন্তু আমি (রসুল) চাই না যে, মহিলারা মসজিদে এসে জামাতে শরিক হোক, বরং আমার চাহিদা হলো- তারা মসজিদে না গিয়ে তাদের ঘরের সবচেয়ে নির্জন কক্ষে নামাজ আদায় করুক। তারা যদি নিজেদের ঘরের নির্জন কক্ষে নামাজ আদায় করে নেয়, তাহলে মসজিদে নামাজ পড়ার সওয়াব তারা পাবে। মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়া হচ্ছে মহিলাদের মনের আবেগ ও চাহিদা; আর ঘরে বসে নামাজ পড়া হচ্ছে নবীর মনের চাহিদা। আল্লাহর রসুল চান যে, মহিলারা ঘরে নামাজ আদায় করুক। এজন্য তাদের ওপর জুমা ফরজ করা হয়নি এবং ঈদের নামাজ ওয়াজিব করা হয়নি।
লেখক : আমির, আল হাইআতুল উলয়া ও বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশ
বিডি প্রতিদিন/এমআই