হজরত ওয়ায়েস করনির (রহ) আবেগ ছিল নবীজির সঙ্গে সাক্ষাৎ করে সাহাবির মর্যাদা অর্জন করার, কিন্তু নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নির্দেশ হলো মায়ের সেবা করে মায়ের সন্তুষ্টি অর্জনের। তাই তিনি নিজের আবেগ কোরবানি করে নবীজির নির্দেশের ওপর আমল করেছেন। ফলে তিনি নবী (সা.)-এর প্রিয়পাত্র হয়ে যান। আল্লাহপাক আমাদেরকে নবী (সা.)-এর প্রিয়পাত্র হওয়ার তৌফিক দান করুন। তৃতীয় আরেকটি জামাত আছে যারা নবী (সা.) যুগে জন্মগ্রহণ করেননি, যেমন আলকামা বিন আসওয়াদ (রহ.) সম্পর্কে অনেকের ধারণা যে, তিনি নবীজির ওফাতের পর জন্মগ্রহণ করেছেন এবং ইমান এনেছেন। সাহাবিদের সঙ্গে চলাফেরা ও ওঠাবসা করেছেন। এমন লোকদের তাবেয়ি বলা হয়। সর্বজনস্বীকৃত চার মাজহাবের ইমামদের মধ্যে শুধু হানাফি মাজহাবের প্রবর্তক ইমাম আবু হানিফা (রহ.) তাবেয়ি ছিলেন, অন্য কেউ এ মর্যাদার আসনে সমাসীন হতে পারেননি। নবী করিম (সা.) ইরশাদ করেছেন-
আমার যুগ, সাহাবিদের যুগ এবং তাবেয়িদের যুগ- এ তিন যুগে কোনো গোমরাহি থাকবে না। এ তিন যুগে যারা ইসলাম ধর্মের কাজ করবে, তারা সত্যের ওপর প্রতিষ্ঠিত থাকবে। তোমরা তাদের কথা বিশ্বাস করবে এবং মেনে চলবে। ইমাম আবু হানিফা (রহ.) কুফার অধিবাসী ছিলেন। বয়সের দিক দিয়ে দ্বিতীয় পর্যায়ে ছিলেন হজরত ইমাম মালেক (রহ)। তিনি ছিলেন মদিনার ইমাম। মদিনার জান্নাতুল বাকিতে রসুল (সা.)-এর আদরের সাহেবজাদা হজরত ইবরাহিম (রা.) কবরের পাশেই তাঁর কবরটি অবস্থিত। সেখানে তাঁকে দাফন করা হয়েছে। তিনি তাবেয়ি ছিলেন। বয়সের দিক দিয়ে তৃতীয় ছিলেন ইমাম মুহাম্মাদ বিন ইদ্রিস শাফী (রহ)। তিনি জন্মগতভাবে মক্কার কুরাইশ বংশের ছিলেন; কিন্তু পরবর্তীতে তিনি দীন ইসলামের খাতিরে মিসর চলে যান এবং সেখানেই তাঁর মৃত্যু হয়। আর সেখানেই তাঁকে দাফন করা হয়েছে। চতুর্থ ইমাম হলেন ইমাম আহমাদ বিন হাম্বল (রহ.)। তিনি হাদিস ও ফিকাহ উভয় বিষয়েই ইমাম ছিলেন। তিনি বাগদাদের অধিবাসী ছিলেন এবং সেখানেই তাঁর কবর রয়েছে। তাঁর হাতে লিখিত ‘মুসনাদে আহমাদ’ নামে একটি হাদিসের কিতাব রয়েছে।
পৃথিবীর মধ্যে সবচেয়ে সফলকাম ব্যক্তি সে, যে নিষ্পাপ। অন্যরা পৃথিবীতে যত পদমর্যাদা, ক্ষমতা ও অর্থকড়ির মালিক হোক না কেন, তার মতো সফলকাম দ্বিতীয় কেউ নেই। কোনো ব্যক্তি দুনিয়ার সবকিছুর মালিক হলো কিন্তু গুনাহমুক্ত হতে পারল না, তাহলে সে প্রকৃতপক্ষে নিস্ফল ও ব্যর্থ হলো। পৃথিবীর সাধারণ মানুষ নিষ্পাপ নয়। কিন্তু আল্লাহ রব্বুল আলামিন চান যে, বান্দারা যখন আমার কাছে হাজির হবে, তখন নিষ্পাপ হয়ে হাজির হোক। এ কথাটা আল্লাহপাক কোরআনের ভাষায় এভাবে উল্লেখ করেছেন- ‘খাঁটি মুসলমান হয়ে আমার কাছে উপস্থিত হও’ গুনাহ নিয়ে আমার কাছে এসো না, তাহলে চরম ক্ষতিগ্রস্ত হবে। আল্লাহপাক বড় দয়ালু, তিনি জানেন যে, বান্দাদের দ্বারা গুনাহ হয়ে যাবে, তাই তিনি গুনাহমুক্ত হওয়ার পদ্ধতি বলে দিয়েছেন, বলে দিয়েছেন গুনাহমুক্ত হওয়ার জন্য কী করতে হবে। পিতা-মাতা নিজ সন্তানকে যেমন নিরপরাধ রাখতে চায়, আল্লাহপাকও তেমনি তাঁর বান্দাদের গুনাহমুক্ত রাখতে চান।
হজরত আবুজর গিফারি (রা.) একজন আশ্চর্য ধরনের মানুষ ছিলেন। তিনি নবী করিম (সা.)-এর সঙ্গে থাকতেন আর বিভিন্ন ধরনের প্রশ্ন করতেন। একদিন তিনি প্রশ্ন করলেন, হে আল্লাহর রসুল! গুনাহ-মুক্তি ব্যতীত তো কেউ জান্নাতে যেতে পারবে না। তাই আমাদেরকে এমন একটি আমল শিখিয়ে দিন, যে আমল করে আমরা যে কোনো মুহূর্তে নিষ্পাপ অবস্থায় আল্লাহপাকের দরবারে হাজির হতে পারি। নবীজি তৎক্ষণাৎ তার প্রশ্নের কোন উত্তর দেননি। সম্মুখে অগ্রসর হতে থাকলেন, কিছুদূর অগ্রসর হওয়ার পর পথিমধ্যে একটি বৃক্ষের নিচে দাঁড়ালেন। পাশেই একটি শুকনা ডাল পড়ে ছিল। নবী (সা.) সেই ডালটি হাতে উঠিয়ে ঝাঁকি দিলেন, সঙ্গে সঙ্গে ডালের সব পাতা ঝরে গেল। এরপর নবীজি হজরত আবুজর গিফারি (রা.)-কে লক্ষ্য করে তিনবার বললেন, হে আবুজর! তিনিও তিনবার উত্তরে বললেন, আমার সৌভাগ্য যে, আমি আপনার পাশে আছি। অতঃপর নবী (সা.) বললেন, হে আবুজর! তুমি দেখেছ কীভাবে শুকনা ডালের পাতা ঝরে গেল? যে মুসলমান আল্লাহপাকের সন্তুষ্টি লাভের জন্য নামাজের ফরজ, ওয়াজিব, সুন্নত ও মুস্তাহাব সযত্নে আদায় করবে এবং বেদাত ও মুনকারাত বর্জন করবে, মনগড়াভাবে নামাজ পড়বে না, ভালোভাবে শিখে মশ্ক করে তার শক্তি-সামর্থ্য অনুযায়ী সহিহভাবে নামাজ আদায় করবে, সে আমার যে কোনো যুগের যে কোনো ধরনের উম্মত হোক- নামাজ পড়ার পর তার শরীরের সব গুনাহ শুকনা পাতার মতো ঝরে যাবে।
লেখক : আমির, আল হাইআতুল উলয়া ও বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশ
বিডি প্রতিদিন/এমআই