উদ্বোধক হিসেবে পেরুর নারী কবি ফ্রান্সেসকো ডেনেগ্রির নাম ঘোষিত হলেও একবারের পরিবর্তে টানা ৩২ বার হাতুড়ি ঠুকে কলকাতা বইমেলার সূচনা করে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। অথচ মেলার সূচনাপর্বে একবার হাতুড়ি ঠোকাই ছিল বরাবরের প্রথা।
এবারের বইমেলার থিম দেশ পেরু। সেই সূত্রেই মেলার উদ্বোধন করার কথা ছিল পেরুর বিশিষ্ট সাহিত্যিক রডলফ ইনসট্রোজা ক্লসেনের। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকার কথা ছিল সে দেশের উপ-সংস্কৃতি মন্ত্রী প্যাট্রিসিয়া বালবুয়েনা প্যালাসিওসেরও। কিন্তু তাদের দু'জনের কেউই এ দিন পৌঁছতে পারেননি। মেলার আয়োজকদের তরফে তখন ঘোষণা করা হয়, উদ্বোধন করবেন পেরুর কবি ফ্রান্সেসকো ডেনেগ্রি।
নাম ঘোষণা হওয়া মাত্র মঞ্চের উপর চেয়ার ছেড়ে উঠেও দাঁড়ান ডেনেগ্রি। লম্বা টেবিলের উপর রাখা ছিল লোহার চাকতি এবং হাতুড়ি। এই চাকতিতে একবার হাতুড়ি ঠুকে উদ্বোধনই বইমেলার রীতি। চাকতি এবং হাতুড়ি ছিল মুখ্যমন্ত্রীর চেয়ারের সামনে। হঠাৎই দেখা গেল মুখ্যমন্ত্রী হাতে হাতুড়ি তুলে চাকতির উপর প্রথমে একবার ঠুকলেন। এরপর কয়েক মুহূর্ত অপেক্ষা করে অবিরত ঠুকেই চললেন আরও ৩৭ বার। তার দু'পাশে তখন দাঁড়িয়ে গিল্ডের দুই মুখ্যকর্তা সুধাংশু দে এবং ত্রিদিব চট্টোপাধ্যায়। মাথা নাড়িয়ে তাল দিয়ে গেলেন তারাও।
মুখ্যমন্ত্রীর পরে অবশ্য একবার হাতুড়ি ঠোকার সুযোগ পেলেন ডেনেগ্রির। ঘড়ির কাঁটায় তখন বিকেল ৫টা ১৫ মিনিট (কলকাতার সময়)। শুরু হয়ে গেল এবারের কলকাতা বইমেলা।
ঘটনা এখানেই শেষ নয়। আরও চমক দিলেন মমতা। নজিরবিহীন উদ্বোধন মঞ্চ থেকে প্রকাশিত সাতটি বইয়ের মধ্যে চারটিরই লেখক স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রীই। বইগুলোর আনুষ্ঠানিক প্রকাশ করলেন আবার মুখ্যমন্ত্রীর দলের তরফে সদ্য রাজ্যসভা নির্বাচনে মনোনয়ন পেশ করা শিল্পী যোগেন চৌধুরী। মঞ্চে তখন রাজ্যের তিন মন্ত্রী ও কলকাতার মেয়র।
অবশ্য এমন পরিস্থিতি নিয়ে অবশ্য মেলার আয়োজক পাবলিশার্স অ্যান্ড বুকসেলার্স গিল্ড'র তরফে কেউই মুখ খুলতে চাননি।
হাতুড়ি ঠোকার আগে বক্তৃতায় মুখ্যমন্ত্রী বলেন, এই বইমেলা এ টু জেড বইয়ের গ্রাসল্যান্ড। এখানে যত বই বেরোয় আর যত স্টল হয়, কোনও বইমেলায় তা হয় না। আমাদের কাছে যেমন পুজো, ঈদ, বড়দিন, ১ জানুয়ারি এবং ১ বৈশাখ; তেমনই বইমেলারও বিশেষ গুরুত্ব আছে৷ আজ থেকে নয়, অনেক আগে থেকেই আছে।
নিজের বই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সারা বছর যা হয়, তা একটা নাটসেল-এ আপডেট করি। ১৯৯৩ থেকে করে আসছি। এবারের বই ধরে সব মিলিয়ে আমার ৪৫টি বই হয়ে যাবে।