পড়াশোনার মানোন্নয়নে কোটি কোটি টাকা খরচ করছে সরকার। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে চতুর্থ বা পঞ্চম শ্রেণিতে পড়া শিক্ষার্থীরা নিজের নাম স্পষ্ট উচ্চারণ করতে পারে না। আবার অনেক সময় দেখা যায় আগের ক্লাসে পড়ানো বিষয় তারা মনে রাখতে পারছে না। অবস্থার পরিবর্তন না হলে আগামী দিনে বন্ধ হয়ে যেতে পারে খারাপ ফল করা স্কুলগুলির অনুদান, এমনকি শিক্ষকদের বেতনও।
এদিকে, রাজ্যে ক্ষমতায় আসার পরেই নতুন করে প্ল্যানিং বোর্ড ঢেলে সাজান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এই বোর্ডের চেয়ারম্যানও তিনি। সদস্যদের মধ্যে রয়েছেন বিকাশ সিংহ, সুগত মারজিত্, অভিরূপ সরকার, সমর ঝা, নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুড়ির মতো বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ। তাদের বক্তব্য, শিক্ষকদের বেতনসহ স্কুলের জন্য রাজ্য সরকার যে বিপুল অর্থ খরচ করে শিক্ষাক্ষেত্রে তার যথার্থ প্রতিফলন লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। যে সব স্কুল পরপর দু'বার রেড জোনে পড়বে তাদের শিক্ষকদের বেতনসহ অন্যান্য অনুদান সাময়িক বন্ধ রাখুক সরকার। পঠনপাঠনের উন্নতি হলে তারপর ফের অনুদান দেওয়া হবে। তা না হলে সরকারি অর্থ খরচের কোনও মানেই হয় না।
রাজ্যে শিক্ষার মান নিয়ে বারবারই প্রশ্ন উঠেছে। বিপুল সংখ্যক পড়ুয়ার ড্রপআউটের পিছনে আর্থিক কারণ ছাড়াও পঠনপাঠনের মানকে কাঠগড়ায় তোলা হয়েছে। এ রাজ্যে প্রাথমিক শিক্ষায় নথিভুক্ত শিক্ষার্থীদের মাত্র ১৪ শতাংশ উচ্চশিক্ষার অঙ্গনে পৌঁছতে পারে, যা জাতীয় গড়ের থেকে চার শতাংশ কম। গত মাসেই সর্বভারতীয় এক সমীক্ষায় উঠে এসেছে দেশের মধ্যে এ রাজ্যেই সবচেয়ে বেশি ছেলেমেয়েকে প্রাইভেট টিউশন নিয়ে হয়। অথচ শুধু স্কুলের শিক্ষক-অশিক্ষক কর্মচারীদের বেতন দিতেই অর্থ সংকটে জর্জরিত রাজ্য সরকারকে বছরে ছয় হাজার কোটি টাকা ব্যয় করতে হয়।
এই পরিস্থিতিতে স্কুল শিক্ষার ভবিষ্যৎ নিয়ে সংশ্লিষ্ট সব মহলই উদ্বিগ্ন। এই সন্ধিক্ষণে রাজ্য পরিকল্পনা পর্ষদের সুপারিশ যথেষ্ট সাহসী এবং তাৎপর্যপূর্ণ। শিক্ষকদের ভূমিকা বারে বারে প্রশ্নের মুখে পড়লেও বেতন বন্ধের মতো সুপারিশ এর আগে শোনা যায়নি।