বাতিল হয়ে গেল মমতা-পাওয়েল বৈঠক।
আজ পশ্চিমবঙ্গের নতুন সচিবালয় নবান্নে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়ের সঙ্গে ভারতে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত ন্যান্সি পাওয়েল'এর বৈঠক হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু কোন এক অজ্ঞাত কারণে এদিনের বৈঠক বাতিল হয়ে গেল। মুখ্যমন্ত্রীও পাওয়েলের সঙ্গে এরকম কোন বৈঠকের কথা অস্বীকার করেন।
মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের সূচি অনুযায়ী গতকাল সন্ধ্যায় দিল্লি থেকে কলকাতায় আসেন পাওয়েল। আজ সকালেই নির্ধারিত সূচি অনুযায়ী বেলা সোয়া বারোটা নাগাদ পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল এম.কে.নারায়ণন-এর সঙ্গে দেখা করতে রাজভবনে যান। সেখানে রাজ্যপালের সঙ্গে লাঞ্চ সারেন পাওয়েল। রাজ্যপালের সঙ্গে বৈঠক সেরে দুপুরে একটা নাগাদ নবান্নে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক বাতিল হওয়ার ফলে রাজভবন থেকেই কলকাস্থিত মার্কিন কনস্যুলেটে ফিরে যান পাওয়েল।
মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে মার্কিন রাষ্ট্রদূতের বৈঠকে আগ্রহ প্রকাশ করার পরই সপ্তাহ খানেক আগেই মুখ্যমন্ত্রীর সচিবালয় থেকে দিলি্লতে মার্কিন দূতাবাসকে জানিয়ে দেওয়া হয় যে ২১ অথবা ২২ ফেব্রুয়ারি নবান্নে এই বৈঠক হতে পারে। এরপরই রাজ্য সরকারের তরফে সমস্ত কিছু আয়োজন করা হয়। গতকালই রাজ্য সরকারের সংশি্লষ্ট দফতর থেকে পাওয়েলের কলকাতা সফরের কথা এবং মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে তার বৈঠকের কথা জানা যায়। এমনকি নবান্নে কর্মরত নিরাপত্তা কর্মীদের কাছেও দুপুর একটা নাগাদ পাওয়েলের আসার খবর ছিল। সেইমতো এদিন নবান্নে নিরাপত্তার সমস্ত ব্যবস্থার আয়োজন করা হয়েছিল। শুধু তাই নয়, সর্বভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেসের ওয়েবসাইটেও মুখ্যমন্ত্রীর এদিনের অন্যান্য কর্মসূচির পাশাপাশি ন্যান্সি পাওয়েলের সঙ্গে দেখা করার বিষয়টি উল্লেখ ছিল।
কিন্তু নবান্নে ভাষা দিবসের অনুষ্ঠানের সময়ই সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে কিছুটা বিরক্ত বোধ করেন মুখ্যমন্ত্রী। জানিয়ে দেন 'মার্কিন রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে আমার কোন সাক্ষাতের কর্মসূচি নেই'। মুখ্যমন্ত্রীর ওই বক্তব্যের পরই নবান্নে বিভ্রান্তি ছড়িয়ে পড়ে, তৈরি হয় ধোঁয়াশা। মুখ্যমন্ত্রীর ওই বক্তব্যের পরই ওয়েবসাইট থেকে সেই পাওয়েলের সঙ্গে বৈঠক সংক্রান্ত অংশটুকু সরিয়ে নেওয়া হয়।
২০১১ সালে মে মাসে রাজ্যের ক্ষমতায় আসার পরে এক বছরের মাথায় ২০১২ সালের মে মাসে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে মহাকরণে এসেছিলেন তত্কালীন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিটন। সেসময় দীর্ঘ বাম জমানার অবসান ঘটিয়ে রাজ্যের ক্ষমতায় আসায় মমতার ভূয়সী প্রশংসা করেন হিলারি। এরপর ওই বছরের সেপ্টেম্বরে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে মহাকরনে এসেছিলেন ন্যান্সি পাওয়েল-ও। তাহলে এবারে কেন এই বৈরতা?
রাজনৈতিক মহলের ব্যাখ্যা, লোকসভা নির্বাচনকে সামনে রেখে সর্বভারতীয় রাজনীতিতে নিজের তথা দলের গুরুত্ব বৃদ্ধি করতে কয়েকদিন আগেই সাক্ষাত করেছেন দুর্নীতি বিরোধী নেতা আন্না হাজারের সঙ্গে। আন্না-ও তাকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তুলে ধরতে মমতার সঙ্গে প্রচারে সম্মত হয়েছেন। একইসঙ্গে ফেডারেল ফ্রন্ট তৈরি নিয়েও লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী। নির্বাচনী হাওয়া বলছে এবারের দিল্লিতে সরকার গড়ার ক্ষেত্রে তৃণমূলের মতো আঞ্চলিক দলগুলি প্রধান ভূমিকা নিতে চলেছে।
এছাড়া মুখ্যমন্ত্রী ভালই জানেন যে, এরাজ্যের মানুষ চিরদিনই মার্কিন বিরোধী। তাই এমতাবস্থায় মার্কিন রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে সাক্ষাত করলে রাজ্যের জনগণের কাছে তা ভূল বার্তা যেতে পারে আর তার প্রভাব পড়তে পারে ভোটবাক্সে। উপরন্তু হিলারি ক্লিনটনের সঙ্গে মমতার বৈঠকের পর সেই বৈঠককে ঘিরে বামেরা প্রচার শানিয়েছিল। এবারও নির্বাচনের প্রাক্কালে পাওয়েলের সঙ্গে মমতার বৈঠকটিকে বামেরা যদি নির্বাচনি ইস্যু করে তাতে ক্ষতি ছাড়া লাভ হবে না। তাই অতি কৌশলেই এই বৈঠক এড়িয়ে গেলেন মুখ্যমন্ত্রী।
উল্লেখ্য, ভারতের আসন্ন লোকসভা ভোটের পর নতুন সরকার গঠনের ক্ষেত্রে যে রাজনৈতিক দলগুলি প্রধান ভূমিকা পালন করবে বলে মনে করা হচ্ছে, আমেরিকার রাষ্ট্রদূত সেই সব রাজনৈতিক দলগুলির শীর্ষ নেতাদের সঙ্গেই বৈঠক করছেন। আর তারই অঙ্গ হিসেবে দীর্ঘ নয় বছরের দুরত্ব ঘুচিয়ে চলতি মাসের ১৩ তারিখ গুজরাটে গিয়ে ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি)-র প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে দেখা করেন ভারতে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত ন্যান্সি পাওয়েল।