মাঝে আর মাত্র আর এক সপ্তাহ। তার পরেই পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার প্রথম দফার প্রথম পর্যায়ের ভোট। আগামী ৪ এপ্রিল ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন পশ্চিম মেদিনীপুর, পুরুলিয়া এবং বাঁকুড়া জেলার ১৮টি বিধানসভা কেন্দ্রের ভোটাররা। তাই ভোট যত এগিয়ে আসছে প্রচারণার পারদও বাড়ছে লাফিয়ে লাফিয়ে। বলা ভালো রীতিমতো ভোট জ্বরে কাঁপছে গোটা রাজ্য।
শাসক থেকে বিরোধী সব পক্ষই প্রচারণায় ঝড় তুলেছে। ভোটের জমি দখল করতে খাওয়া-দাওয়া ভুলে গত এক সপ্তাহ ধরে জঙ্গমহলে পড়ে রয়েছেন রাজ্যটির মুখ্যমন্ত্রী তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়। মমতার সাথে সাথেই হাত মিলিয়ে প্রচারণা করছেন তৃণমূল সংসদ সদস্য মুকুল রায়, অভিষেক বন্দোপাধ্যায়, দীপক অধিকারী (দেব) প্রত্যেকেই। পিছিয়ে নেই বিরোধীরাও। সিপিআইএম নেতা রাজ্যটির বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্রও গড়ে তিন-চারটি প্রচারণা করছেন। দলের অন্য নেতা-নেত্রীরা তো আছেন-ই। পশ্চিমবঙ্গের কংগ্রেস সভাপতি অধীর রঞ্জন চৌধুরী।
আর প্রচারণায় নেমে একে অপরকে উদ্দেশ্য করে চলছে তোপ দাগার পালা। ভোটারদের মন জয় করতে চলছে কথার ফুলঝুড়ি, স্লোগান পাল্টা স্লোগান। সারদা থেকে শুরু করে নারদা ঘুষ কেলেঙ্কারি, জমি অধিগ্রহণ নীতি, শিল্প-কারখানা ইস্যু, সবই উঠে আসছে প্রচারণায়।
প্রচারণায় এসে বিরোধী বাম-কংগ্রেস-বিজেপি জোটকে লক্ষ্য করে রামধনু জোট বলে কটাক্ষ করেছেন তৃণমূল নেত্রী। বাংলার মানুষ এই জোটকে পরাস্ত করবে বলেও আশা প্রকাশ করেন মমতা। মমতার শ্লোগান ছিল ‘হাত-হাতুড়ি-পদ্ম, তিনটেই হবে জব্দ’। কখনও আবার শোনা গিয়েছে ‘হাতে বোমা, মুখে প্রেম, এর নাম সিপিআইএম’ কিংবা ‘যতই করো জোট, পাবে নাকো একটাও ভোট’। থেমে নেই বিরোধীরাও। মমতার এই স্লোগানকে পাল্টা দিতে গিয়ে বামদের স্লোগান ছিল ‘ঠাণ্ড ঠাণ্ডা কুল কুল, ঘুষ নিয়েছে তৃণমূল’।
এদিকে, রবিবার দেশটিতে সরকারি ছুটির হওয়ায় সকাল থেকেই জনসংযোগে নেমে পড়েছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রার্থীরা। টালিগঞ্জে প্রচার সারেন রাজ্যটির যুব কল্যাণমন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস। বড়বাজারে বিজেপি প্রার্থী রিতেশ তিওয়ারি। জনসংযোগ বাড়াতে প্রত্যেকেই পায়ে হেঁটে প্রচার করেন তারা। সাইকেলে করে প্রচারর সারেন যাদবপুরের সিপিআইএম প্রার্থী সুজন চক্রবর্তী।
রবিবার দুপুরে পূর্ব মেদিনীপুরের খড়গপুর থেকে মেগা প্রচারণা শুরু করতে চলেছে বিজেপি। বিজেপি প্রার্থী দিলীপ ঘোষের সমর্থনে খড়গপুরের বিএনআর ময়দানে প্রচারে আসবেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। মোদির সাথেই থাকবেন বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী রাজনাথ সিং। নির্বাচনের আগে শাসকদল তৃণমূলকে কোণঠাসা করতে সারদা আর্থিক কেলেঙ্কারি থেকে নারদা ঘুষ কেলেঙ্কারি ইস্যুকে হাতিয়ার করতে পারে বিজেপি।
গত লোকসভা নির্বাচনেও পশ্চিমবঙ্গের ওপর বিশেষ জোর দিয়েছিল বিজেপি। সেসময় প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী মোদিকে এনে রাজ্যে প্রচারণা করানো হয়। প্রচারণায় এসে অনুপ্রবেশ ইস্যুটিকে সামনে এনে হইচই ফেলে দিয়েছিলেন মোদি। তাঁর ক্যারিশমার ওপর ভর করে পশ্চিমবঙ্গে ভাল ফল করে গেরুয়া শিবির। আসানসোল কেন্দ্র থেকে জিতে লোকসভার সাংসদ হন বাবুল সুপ্রিয়। তবে বর্তমান রাজনৈতিক সমীকরণ অনুযায়ী এবার আর সেটি হবে না বলেই মনে করা হচ্ছে।
অন্যদিকে, ভোট সুষ্ঠু, অবাধ ও শান্তিপূর্ণ করতে নির্বাচন কমিশন যাবতীয় প্রস্তুতি প্রায় সেরে ফেলেছে। আইনশৃঙ্খলা পারিস্থিতি থেকে শুরু করে বেআইনি অস্ত্রশস্ত্র উদ্ধার-সবদিকেই নজর রাখছে তারা। এই তিন জেলা মাওবাদী প্রভাবিত বলে সেখানে বাড়তি নিরাপত্তার ব্যবস্থাও করা হয়েছে। হেলিকপ্টারের পাশাপাশি ড্রোনেও নজরদারি চালানোর পরিকল্পনা করছে কমিশন।
বিডি-প্রতিদিন/ ২৭ মার্চ, ২০১৬/ রশিদা