চার দফা ভোট শেষ। মানুষের সমর্থনে তিনি খুশি। দেড়মাস রোদে পুড়ে, বাংলা ঘুরে, লক্ষ লক্ষ মানুষের উন্মাদনা প্রত্যক্ষ করার পর তার বিশ্বাস অটুট, এবারও ‘হাত-হাতুড়ি-পদ্ম'-কে ভাল করে বাংলার মানুষ জব্দ করতে চলেছে। তাই নবান্নের শহরে দাঁড়িয়ে ফের নবান্নে ফেরার বার্তা দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী।
১৪ তলার ঘরটার জানালা দিয়ে উঁকি দিলে গোটা হাওড়া শহরটা ‘পাখির চোখ'-এ দেখা যায়। বাড়িটা কলকাতার যমজ শহরের অহঙ্কার। আর মুখ্যমন্ত্রীর ঘরটি থেকে নিচে তাকালে চোখে পড়বে ডুমুরজলা স্টেডিয়াম। হ্যাঁ, নবান্নের কথাই বলছি। শুক্রবার ওই ডুমুরজলা থেকেই নবান্নের গর্বিত চূড়ার দিকে তাকিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর আত্মবিশ্বাসী ঘোষণা, "আবার তৃণমূলই ফিরছে নবান্নে। ভোটবাক্স খোলার অপেক্ষা। বিজেপি কিছুই পাবে না। কাস্তে আর হাত, এবার হবে কুপোকাত। জোটের এ-কূল ও-কূল দু-কূলই যাবে।"
হাওড়াবাসীকে মনে করিয়ে বললেন, "আপনাদের গর্ব হয় না! একদিন ওই বাড়িটা দেখে ঠিক করেছিলাম সেক্রেটারিয়েট নিয়ে আসব। সেটাই করেছি। আমি নিজে হাওড়ার উন্নয়নের কাজ দেখি। কী অবস্থা ছিল এই শহরের। আজ বদলে গিয়েছে হাওড়া।"
এরপরই বিরোধীদের উদ্দেশ্যে মমতা বলেন, "নবান্নকে চমকানো অতো সোজা নয়৷ এখানে রয়েছে মানুষের ভালবাসা। বাংলার যা উন্নয়ন হয়েছে সব ওই নবান্ন থেকেই।"
জগমোহন ডালমিয়ার কন্যা বৈশালী ডালমিয়ার সমর্থনে প্রচার সেরেই মুখ্যমন্ত্রী ছুটলেন উত্তর হাওড়ার প্রার্থী বিশিষ্ট ক্রিকেটার তরুণ তুর্কি লক্ষ্মীরতন শুক্লার সভায়। তখন সন্ধ্যা নেমেছে। জিটি রোডের দু'ধারে মানুষের ‘দিদি দিদি' চিৎকারের মধ্যেই লক্ষ্মীর সভায় এলেন তিনি।
মাঠ তখন যেন উত্তেজনায় ফুটছে। এখানেই বিজেপি প্রার্থী করেছে রূপা গঙ্গোপাধ্যায়কে। কংগ্রেসের প্রার্থী সন্তোষ পাঠক। কেন লক্ষ্মীকে তিনি প্রার্থী করলেন তা ব্যাখ্যা করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, "এখানেও বিজেপির যিনি দাঁড়িয়েছেন, তিনি কিছুই জানেনই না। আর কংগ্রেসের যিনি, তিনি শুধু গুন্ডামি করেন। অথচ এই লক্ষ্মী আমাদের গর্ব। ও আমার কাছে এসেছিল হাওড়ায় একটা অ্যাকাডেমি করবে বলে। একবারও টিকিট চায়নি। কিন্তু ওর কাজ করার ইচ্ছা দেখে আমি সেদিনই সিদ্ধান্ত নিই, ছেলেটিকে এগিয়ে দিতে হবে। ফলে লক্ষ্মীর সঙ্গে কোন প্রার্থীর কোন তুলনাই হয় না।" মুখ্যমন্ত্রী যখন এই কথা বলছেন, তখন জনতার হাততালিতে ফেটে পড়ছে সভা।
প্রসঙ্গত মুখ্যমন্ত্রী এদিনও বলেন, "একজন দু'জনের জন্য গোটা পরিবার খারাপ হতে পারে না৷ তৃণমূল মানুষের দল, মন্ত্রিত্ব আমরা ছেড়ে দিতে পারি। আগে মানুষের স্বার্থ।"
হাওড়াতেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সভা করে গিয়েছেন। মমতা তার সমালোচনা করে বলেন, "উনি তো দেশটাকে বেচে দিচ্ছেন। বাংলায় এসে কী করবেন? দক্ষিণেশ্বর-বেলুড়-সহ বাংলার কোন হেরিটেজকে কেন্দ্র স্বীকৃতি দেয়নি।"
জোটকে আক্রমণ করতে গিয়ে বিরোধী দলনেতার উদ্দেশ্যে মমতা বলেন, "উনি কাল বলে গিয়েছেন আমাদের নাকি গর্তে ঢুকিয়ে দেবেন। কোঁকড়ানো নেতা, বজ্জাত, পচা কুমড়ো। কী মুখের ভাষা। আমায় ক্ষমা করবেন, এসব বলতে বাধ্য করার জন্য। কারণ আমরা ব্যক্তি আক্রমণ চাই না।"
হাওড়া পর্বে প্রচার শেষ। আজ মমতা যাচ্ছেন হুগলিতে। চারটি সভার মধ্যে শেষটি সিঙ্গুরে।
বিডি-প্রতিদিন/২৩ এপ্রিল ২০১৬/ হিমেল-০৪