প্রায় এক মাস ধরে চলা ম্যারাথন ভোট পর্ব শেষ, এবার গণনার পালা। শাসকবিরোধী দুই পক্ষই ভোট পক্রিয়ায় খুশি। কিন্তু লাখ রুপির প্রশ্নটা হল কোন দল ক্ষমতায় আসছে? বাম-কংগ্রেস জোটের তরফে দাবি করা হয়েছে ১৯ তারিখের পর সাবেক হয়ে যাবেন মমতা বন্দোপাধ্যায়। আবার শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস বলছে কথায় কথায় নির্বাচন কমিশনকে যেভাবে বিভ্রান্ত করেছে তার জবাব মানুষ ভোট বাক্সে দিয়ে দিয়েছে। পশ্চিবমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে মমতা বন্দোপাধ্যায়ের শপথ গ্রহণ শুধু সময়ের অপেক্ষা। তবে রাজনৈতিক দলগুলি যে যাই বলুক না কেন আসল কথা বলবে ভোটাররাই। কারণ ইভিএম-বন্দি রয়েছে ভোটারদের মত।
আগামী ১৯ তারিখ দুপুরের মধ্যেই স্পষ্ট হয়ে যাবে আসল ছবিটা। যদিও তার আগে আগামী ১৬ তারিখ বুথ ফেরত জরিপের পর কিছুটা আভাস পাওয়া যাবে। কারণ পশ্চিমবঙ্গ ও অসমে বিধানসভার ভোট শেষ হলেও তামিলনাড়ু, কেরল, পডুচেরিতে ভোট আগামী ১৬ মে। কমিশনের নিয়ম অনুযায়ী সব রাজ্যের ভোট শেষ হওয়ার আগে কোন বুথ ফেরত জরিপ কিংবা জনমত জরিপ প্রকাশ করা যাবে না।
তবু বিভিন্ন বিশ্লেষণ খতিয়ে দেখে এনডিটিভি’র সহ-প্রতিষ্ঠাতা বিশিষ্ট সাংবাদিক প্রণয় রায়ের অনুমান আসন সংখ্যা কমলেও এবারেও পশ্চিমবঙ্গের শাসন ক্ষমতায় আসতে পারে তৃণমূল কংগ্রেস। গত ২ মে ওই বিশ্লেষনে যে তথ্য উঠে এসেছে তা হল-তৃণমূলের ক্ষমতায় ফেরা এবং দ্বিতীয় বারের জন্য মমতা বন্দোপাধ্যায়ের মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার সম্ভাবনা ৬০ শতাংশ। আর বাম-কংগ্রেস জোটের ক্ষমতায় ফেরার সম্ভাবনা ৪০ শতাংশ। এই হিসাবের ভিত্তিতে তৃণমূলের ১৭০ টি আসন জিততে পারে অন্যদিকে বাম-কংগ্রেসের আসন জয়ের সম্ভাবনা ১১৮ টি।
পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচনে মুসলিম ভোট সবসময়ই একটা বড় ফ্যাক্টর। কলকাতা ও শহরতলির ৪৫ শতাংশ মুসলিম ভোট যেতে পারে তৃণমূলের দিকে সেখানে জোটের দিকে যেতে পারে ৩৮ শতাংশ। আবার গ্রামাঞ্চলের ছবিটা ঠিক উল্টো। জোটের দিকে যেখানে ৬২ শতাংশ মুসলিম ভোট যেতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে সেখানে মাত্র ২২ শতাংশ মুসলিম ভোটার তৃণমূলের পক্ষে আছে।
বিশ্লেষণে এও উঠে এসেছে যে ২০১৪ সালের লোকসভা ভোটে পশ্চিমবঙ্গে বামদের সাথে কংগ্রেসের জোট হলে তবে তারা ৯৭ টি বিধানসভা আসনে জয় পেত। বিজেপির পকেটে যেতো ১৮ টি আসন এবং তৃণমূল ১৭৯ আসনে জয় পেতে পারতো। সেই সব আসন ধরে রেখে বাম-কংগ্রেস জোট যদি বিজেপি’র ভোট থেকে অন্তত ৬ শতাংশ নিজেদের দিকে টানতে পাারে তা হলে তারা তৃণমূলের থেকে ২০ টি আসন বেশি পেতে পারে। সেক্ষেত্রে বিজেপি’র কোন ভোট কাটা যাবে না। অন্যদিকে তৃণমূলের ভোট যদি ২ শতাংশ বাড়ে তবে তাদের আসন ২০০ ছাড়াতে পারে।
নির্বাচনের আগে গত মার্চ মাসেও বিভিন্ন সংস্থার তরফে যে জরিপ করা হয়েছিল সেখানেও তৃণমূল কংগ্রেসকেই এগিয়ে রেখেছিল। বেশির ভাগ সংস্থার জরিপেই দেখা গিয়েছিল তৃণমূল ১৬০-১৯০ এর মধ্যে আসন পেতে পারে।
তবে জরিপ যে সবসমই ঠিক ভবিষ্যদ্ববাণী করে তা নয়। এর আগে জরিপকে ভুল প্রমাণিত করে বিরোধী দলকে ক্ষমতায় আসতে দেখা গেছে। অতীতে দেখা গেছে পশ্চিমবঙ্গের ভোটাররা কোন একটি দলকে বিপুল ভোট দিয়ে ক্ষমতায় নিয়ে এসেছে কিন্তু ২০১৬ সালের ভোটা একটু আলাদা। এবার শাসক দল ও বিরোধীদের সমানে সমানে টক্কর হয়েছে। বিশ্লেষকরা বলছেন এরাজ্যের ভোটাররা খুবই অনিশ্চিত, এদের সম্পর্কে আগে থেকে কিছুই বলা যায না। নিজের পছন্দের প্রার্থীকে অত্যন্ত নীরবে ভোট দিয়ে থাকে এই ভোটাররা। রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, জোট নিয়ে মানুষের মধ্যে প্রবল উৎসাহ দেখা গেলেও তা ভোটে প্রতিফলিত হবে না। তবে ভোট ব্যাংকে বড়সড় ধস নামলেও এবারও তৃণমূলেরই ক্ষমতায় আসার সম্ভাবনা বেশি।
তবে ক্ষমতায় যে দলই আসুক না কেন, গত ৩৪ বছর ধরে বামেদের ক্ষমতায় থাকাকালীন কিংবা গত ২০১১ সালে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে তৃণমূলের ক্ষমতায় আসার পর থেকে এই প্রথম রাজ্যটিতে বিরোধীরা খুবই শক্তিশালী হবে বলেই মনে করা হচ্ছে।
এদিকে মসনদে কে বসবে তা নিয়ে জোর গুঞ্জন শুরু হয়েছে নবান্নে। পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারের সচিবালয় এই নবন্নে সকাল থেকে সন্ধ্যা সরকারি সচিব, কর্মচারী, ক্যান্টিন, লিফটের কর্মী থেকে এই সরকারি কার্যালয়ে বিভিন্ন প্রয়োজনে আসা সাধারণ মানুষের মধ্যে একটাই জল্পনা- ফের কি ‘দিদি’ না কি জোটশক্তি শাসন করবে নবান্নে? কাজের ধারা কি ফের পাল্টাবে? না একই থাকবে?
তবে একটি সূত্র বলছে তৃণমূলই ফের ক্ষমতায় আসবে। টেনেটুনে হলেও এই সরকার নতুন ভাবে ফিরে আসছে। তাই তোড়জোড় শুরু হয়েছে নবান্ন জুড়ে। ইতিমধ্যে ফাইল নাড়াচাড়াও শুরু হয়েছে। তবে সরকারে যেই আসুক না কেন সচিবদের তাদের মত অনুযায়ী চলতে হবে।
বিডি-প্রতিদিন/ ০৭ মে, ২০১৬/ আফরোজ