বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ফের পশ্চিমবঙ্গের ক্ষমতায় এসেছে তৃণমূল কংগ্রেস। মমতা ঝড়ে জোট বিরোধীরা সবাই খড়কুঁটোর মতো উড়ে গিয়েছে। ১৯৯৮ সালে বামফ্রন্টের বিরুদ্ধ সর্বাত্মক লড়াইয়ের লক্ষ্যে যখন কংগ্রেস থেকে বেরিয়ে এসে মমতা বন্দোপাধ্যায় তৃণমূল কংগ্রেস গঠন করেন তখন তার রাজনৈতিক অস্তিত্ব নিয়ে প্রশ্ন জেগেছিল।
কিন্তু আজ মমতা তার একক কৃতিত্বেই তৃণমূলকে দুই শতাধিকের গন্ডি পার করালেন। মমতা নিজেও হয়তো এই ফলাফল আন্দাজ করতে পারেন নি। তাইতো জয়ের পরই বললেন ‘এটা রাজ্যবাসীর ম্যাজিক’। আসলে এবারের নির্বাচনে রাজ্যের মানুষ মমতা বন্দোপাধ্যায়ের উপর অনেক আশা, আস্থা ও বিশ্বাস রেখে তাঁকে ফের রাজ্যের পরিচালনভার দিয়েছেন।
রাজ্যবাসীর সামনে যেমন প্রত্যাশ্যা তেমনি নতুন সরকারের সামনেও চ্যালেঞ্জের পাহাড়। যার মধ্যে অন্যতম হল ভোট পরবর্তী হিংসা থামানো। গত বৃহস্পতিবার ফল প্রকাশের পরই বিভিন্ন জায়গায় সহিংসতার খবর উঠেছে শাসক দলের বিরুদ্ধে। বিরোধীদের দাবি এই ঘটনাগুলি ইঞ্চিতে ইঞ্চিতে বুঝে নেওয়ার যে বিধান দিয়েছিলেন মমতাসহ তৃণমূলের নেতানেত্রীরা-এটা সেই হুমকিরই ফলশ্রুতি।
এই প্ররিপ্রেক্ষিতে মমতার সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হবে রাজ্যের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ফিরিয়ে আানা। সেই লক্ষ্যে জয়ের পরই অবশ্য শান্তি রাখার বার্তাও দিয়েছেন তিনি।
সারদা থেকে শুরু করে নারদ পর্যন্ত গত পাঁচ বছরে মমতা বন্দোপাধ্যায়ের মন্ত্রিসভার সদস্যের বিরুদ্ধে বারবার দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। দুর্নীতির অভিযোগ ওঠা কয়েকজন মন্ত্রী এবারে জিতে আসলেও জয়ের মার্জিন অনেক কম। কেলেঙ্কারিতে যুক্ত থাকার অভিযোগ উঠেছে মুখ্যমন্ত্রীর ভাইপো অভিষেক বন্দোপাধ্যয়ের উপরেও। এদের বিরদ্ধে সুযোগ পেলেই সরব হবে বিরোধীরা। বিভিন্ন জায়গায় এদের জন্য কটাক্ষ হজম করতে হবে তৃণমূলকে।
দলের আরেকটি সমস্য 'গোষ্ঠীকোন্দল', যদিও এটা নতুন কিছু নয়। গ্রামে গ্রামে নেতা আর মোড়ে মোড়ে মারামারি। উচ্ছাকাঙ্খী এই সব নেতাদের চেষ্টা করেও আয়ত্ত্বে আনতে পারেননি মমতা। ২০১১ সালে ক্ষমতায় আসার পর থেকে প্রতিদিন দলের এই গোষ্ঠীকোন্দল বেড়েছে। সময়মতো ব্যবস্থা না নিলে পরে এই গোষ্ঠীকোন্দলই কাল হতে পারে মমতা'র জন্য। যা পরে বড়সড় ভাঙন সৃষ্টি করতে পারে।
এছাড়া আছে সিন্ডিকেট দৌরাত্ম। তৃণমূলের ছত্রছায়ায় ব্যাঙের ছাতার মতো সর্বত্র গজিয়ে উঠেছে সিন্ডিকেট। সাথে অবাধ চাঁদাবাজি। এবারের নির্বাচনে উতরে গেলেও পরে চাঁদাবাজিতে অতিষ্ঠ হয়ে মমতার থেকে মুখ ফেরাতে পারে রাজ্যবাসী।
শিল্প ছাড়া কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা এককথায় অসম্ভব। কিন্তু এ রাজ্যে শিল্প নেই। টাটা কোম্পানী চলে যাওয়ার পর থেকে বাংলার শিল্প লক্ষীছাড়া। এই পরিস্থিতিতে শিল্পয়ান ছাড়া গতি নেই মমতার। এজন্য শিল্পনীতিতে পরিবর্তন আনা দরকার আবার চাঁদাবাজদের ওপর লাগাম ধরতে না পারলে বাংলাতে বিনিয়োগকারীরা আসতে অনিচ্ছুক।
সেই সাথে শিক্ষাকে সম্পূর্ণ দলমুক্ত করা, নারী নিরাপত্তা ব্যবস্থা সুনিশ্চিত করাসহ নানা চ্যালেঞ্জ নিয়ে আগামী ২৭ তারিখ থেকে পথ চলা শুরু করতে চলেছে মমতা বন্দোপাধ্যায়। ওই দিনই শপথ নিতে চলেছে নতুন সরকার। শপথের পর আগামী দিনে মমতার সরকার কিভাবে এই সব চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করে এখন সেটাই দেখার বিষয়।
বিডি প্রতিদিন/২০ মে ২০১৬/ হিমলে-০২