কথায় আছে জোর যার, মুলুক তার। এবার বাস্তবেও তার ঢের প্রমাণ মিলল। সদ্য সমাপ্ত ভারতের পাঁচ রাজ্য পশ্চিমবঙ্গ (২৯৪ আসন), অাসাম (১২৬ আসন), কেরল (১৪০ আসন), তামিলনাু (২৩৪ আসন) এবং পডুচেরি (৩০ আসন)-এ বিধানসভার নির্বাচনে সেই অর্থবল ও বাহুবলেরাই ছড়ি ঘোরালো।
ভারতের নির্বাচন কমিশনে ৮২৪ জন জয়ী বিধায়কের মধ্যে ৮১২ জনের জমাকৃত হলফনামার ভিত্তিতে (নিম্নমানের স্ক্যানের কারণে ১২ জন বিধায়কের প্রকৃত তথ্য পাওয়া যায়নি) এই জরিপ করেছে দিল্লি ভিত্তিক সংস্থা অ্যাসোসিয়েশন ফর ডেমোক্রেটিক রাইটস (এডিআর)। সেই জরিপে দেখা গেছে পাঁচ রাজ্যের ৮১২ জন জয়ী বিধায়কের প্রায় অর্ধেক ৪২৮ জন কোটিপতি।
সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা সদস্য অধ্যাপক জগদীপ চোক্কার বলেন, ৮১২ জয়ী বিধায়কের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে ২০১১ সালের নির্বাচনের তুলনায় এবারের জয়ী বিধায়কদের সম্পত্তির পরিমাণন লাফিয়ে লাফিয়ে বৃদ্ধি পেয়েছে। কোথাও আবার দ্বিগুণেরও বেশি বেড়েছে। গতবারে পশ্চিমবঙ্গে জয়ী বিধায়কের মাত্র ১৫ শতাংশ কোটিপতি ছিল সেখানে এবারে বেড়ে হয়েছে ৩৪ শতাংশ। সংখ্যায় ১০০ জন। ৩০ সদস্য বিশিষ্ট পডুচেরিতে কোটিপতি রয়েছেন ২৫ জন (৮৩ শতাংশ)। তামিলনাড়ুতে জয়ী ২২৩ জন বিধায়কের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে দেখা গেছে কোটিপতি আছেন ১৭০ জন (৭৬ শতাংশ)। ৬৩ অাসামে ১২৬ জয়ী বিধায়কের মধ্যে ৭২ জন কোটিপতি (৫৭ শতাংশ)। কেরলে ১৪০ জনের মধ্যে কেটি পতি বিধয়াক ৬১ জন (৪৪ শতাংশ)।
চোক্কার জানান ‘২০১১ সালে পডুচেরিতে জয়ী বিধায়কের ৬৩ শতাংশ কোটিপতি ছিলেন, তামিলনাড়–তে ছিল ৫১ শতাংশ, অসমে ছিল ৩৯ শতাংশ এবং কেরলে জয়ী কোটিপতি বিধায়কের সংখ্যাটা ছিল ২৯ শতাংশ।
জয়ী বিধায়কের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সম্পত্তির পরিমাণ তামিলনাড়ু জাতীয় কংগ্রেসের বিধায়ক বসন্ত কুমার এইচ’এর। তাঁর মোট সম্পত্তির পরিমান ৩৩৭ কোটি রুপি, রাজ্যটির মুখ্যমন্ত্রী জয়ললিতার সম্পত্তির পরিমান ১১৩ কোটি রুপি। পডুচেরির অল ইন্ডিয়া এনআর কংগ্রেসের বিধায়ক অশোক আনন্দ’এর মোট সম্পত্তির পরিমাণ ১২৪ কোটি রুপি।
পশ্চিমবঙ্গে শাসকদল তৃণমূলের বিধায়ক সমীর চক্রবর্তীর মোট সম্পত্তির পরিমাণ ৪০.৫৯ কোটি রুপি। অাসামে অগপ বিধায়ক নরেন সোনোয়ালের সম্পত্তি ৩৩.৯৪ কোটি রুপি। কেরলের এনসিপি দলের বিদায়ক থমাস চন্ডি’র মোট সম্পত্তির পরিমাণ ৯২.৩৭ কোটি রুপি।
শুধু সম্পত্তির দিক থেকেই নয়, নানারকম অপরাধে অভিযুক্ত জয়ী প্রার্থীদের সংখ্যাও কয়েকগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা সদস্য অধ্যাপক জগদীপ চোক্কার বলেন, ৮১২ জয়ী বিধায়কের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে ২৯৪ জনের বিরুদ্ধে অপরাধের অভিযোগ রয়েছে। ১৭৬ জনের বিরুদ্ধে খুন, খুনের চেষ্টা, অপহরণ, ডাকাতি, চাঁদাবাজি-এর মতো মারাত্মক অভিযোগ রয়েছে।
রাজ্যভিত্তিক পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে অপরাধের অভিযোগ রয়েছে এমন জয়ী বিধায়কদের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি পশ্চিমবঙ্গে, এই রাজ্যটিতে রয়েছে ৩২ শতাংশ বিধায়ক। এরপরই আছে তামিলনাড়ু (১৯ শতাংশ), কেরল (১৯ শতাংশ)। আয়তনে ছোট রাজ্য হলেও পডুচেরিতে জয়ী বিধায়কদের ১৩ শতাংশের বিরুদ্ধে অপরাধের অভিযোগ রয়েছে। অাসামে মাত্র ৮ শতাংশ জয়ী বিধায়কের বিরুদ্ধে এই ধরনের অভিযোগ রয়েছে।
প্রসঙ্গত, ২০১১ সালের নির্বাচনে জয়ী বিধায়কের তুলনায় এবারে অপরাধে অভিযুক্ত বিধয়াকের সংখ্যাটা অনেক বেশি। কেরলে ৯ শতাংশ থেকে বেড়ে এবারে অপরাধীতে অভিযুক্ত জয়ী বিধায়কের সংখ্যা ১৯ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। পশ্চিমবঙ্গে বৃদ্ধি পেয়েছে ৮ শতাংশ, তামিলনাড়ু ও কেরলে বৃদ্ধি পেয়েছে ৩ শতাংশ করে, যেখানে অাসামে ২ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। এই পরিসংখ্যানই বলে দিচ্ছে 'মানি পাওয়ার ও মাসল পাওয়ার'রা কিভাবে রাজনীতিকে কুক্ষিগত করেছে। আবার ঘুরিয়ে বলতে গেলে বলতে হয় দিন যত যাচ্ছে রাজনীতিতে মানি পাওয়ার ও মাসল পাওয়ারম্যানদের যোগদানের সংখ্যাটা পাল্লা দিয়ে বাড়ছে।
বিডি-প্রতিদিন/ ২১ মে, ২০১৬/ আফরোজ