বিজেপি ও রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘ (আরএসএস)-এর সমর্থন পেয়েই মমতা বন্দোপাধ্যায় এবং নীতিশ কুমারের মতো আঞ্চলিক নেতারা শক্তিশালী হয়ে উঠেছেন বলে মন্তব্য করলেন ভারতের কেন্দ্রীয় পানিসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রী উমা ভারতী। বিজেপি এবং আরসএসএস’এর সমর্থন না পেলে মমতা-নীতিশের মতো নেতারা এতটা জনপ্রিয় হতেন না বলেও মনে করেন তিনি।
সংবাদ সংস্থা পিটিআই’কে এক সাক্ষাতকারে উমা ভারতী এই মন্তব্য করেন। তৃণমূল কংগ্রেস এবং নীতিশ কুমারের নেতৃত্বাধীন মহাজোটের কারণে পশ্চিমবঙ্গ ও বিহারে বিজেপি কিভাবে তাদের শক্তিবৃদ্ধি করতে ব্যর্থ হয়েছে কি না সেই প্রসঙ্গে উমা বলেন, ‘মমতা বন্দোপাধ্যায় কি আগে এতটা জনপ্রিয় ছিলেন? সঙ্ঘ পরিবারের সদস্যদের কঠোর প্রচেষ্টার ফলেই মমতার এই উত্থান হয়েছে। নীতিশ কুমারও তাঁর নিজের প্রচেষ্টায় এতটা উন্নতি করতে পারতেন না। লালু প্রসাদ যাদবও আমাদের সমর্থনে এতটা শক্তিশালী হয়েছেন। কিন্তু তারা প্রত্যেকেই ধীরে ধীরে দুর্বল হয়ে যাবেন।'' মমতা এবং নীতিশ কুমার পরবর্তী নির্বাচনে আর জিততে পারবেন না বলেও তিনি দাবি করেন। ভারতী এক পর্যায়ে বলেন, ‘আমার এই কথাটা মিলিয়ে নেবেন। বিহারে পরবর্তী সরকার আমরাই গঠন করব।'
ভারত ‘কংগ্রেস মুক্ত’ দেশ গঠনের দিকে এগোচ্ছে কি না সেই প্রশ্নের উত্তরে কেন্দ্রীয় ক্যাবিনেট মন্ত্রী বলেন ‘অবশ্যই, আমি মনে করি ভারত কংগ্রেস মুক্ত দেশ গঠনের দিকেই এগোচ্ছে এবং আমি এটা পরিষ্কার দেখতে পাচ্ছি। বর্তমানে দেশের বিভিন্ন অংশে আঞ্চলিক দলগুলিই ক্ষমতায় আছে। কিন্তু আমরা (বিজেপি) অনেকদিন ধরে রাজত্ব করবো। আমরা একটা দীর্ঘ ইনিংস খেলবো। খুব শিগগির কংগ্রেস বুঝতে পারবে যে এটাই ভাল পথ’।
বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর তরফে বারবার বিজেপি’র বিরুদ্ধে যে হিন্দুত্ব তকমা’র অভিযোগ তোলা হয় তা খারিজ করে ভারতী জানান, ‘কমিউনিস্টরা এবং সমাজবাদী দলগুলো সবসময় নাটক করে বলে থাকে যে আমরা (বিজেপি) সাম্প্রদায়িক দল। কিন্তু আমি বলবো কংগ্রেসকে দেশ থেকে মুছে ফেলতে আমরা ও এই সমাজতান্ত্রিক দলগুলো একাধিকবার একত্রিত হয়েছি। আমরা পাশাপাশি থেকে লড়াই করেছি। ১৯৭৭ সালে আমরা একসাথে লড়াই করেছি। ১৯৬৬ সালেও আমরা একসাথে ছিলাম, ১৯৮৯ সালে আমরা পাশাপাশি লড়াই করেছিলাম কংগ্রেসের বিপক্ষে। আসলে সমাজতান্ত্রিক ও কমিউনিষ্ট দলগুলোর কাছে এটা একটা ভণ্ডামি ও নাটক ছাড়া আর কিছুই নয়। জরুরী অবস্থার সময়ে সিপিআই যখন কংগ্রেসকে সমর্থন করেছিল তখন সিপিআইএম তার বিরোধীতা করে। তারা মনে করে মানুষের স্মৃতি শক্তি খুবই দুর্বল। কিন্তু ভুললে চলবে না যে আমরা যখনই কংগ্রেসের বিপক্ষে লড়াইয়ে নেমেছি এই সমাজতান্ত্রিক দলগুলো আমাদের সমর্থন জুগিয়েছে।
শতাব্দী প্রাচীন কংগ্রেসকেও খোঁচা দিতে ছাড়েননি কেন্দ্রীয় মন্ত্রী। তাঁর অভিযোগ ‘কংগ্রেস কখনওই পরিবারের বাইরে গতিশীল, উদ্দমী, অল্পবয়সী নেতাদের জায়গা দেয়নি। এই দল সবসময় পরিবার তন্ত্রের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল এই কারণে গান্ধী পরিবারের বিশ্বাসযোগ্যতা নষ্ট হয়েছে। তারা এখন বিদ্রুপের পাত্র হয়ে দাঁড়িয়েছে। কংগ্রেস দলে অনেক বড় মাপের নেতা-নেত্রীরা ছিলেন কিন্তু তাদের কখনও গুরুত্ব দেওয়া হয়নি’।
এদিকে মোদিভাই-দিদিভাই আতাঁত নিয়ে পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা নির্বাচনের আগে বিরোধীরা যে অভিযোগ করে আসছেন, কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর এই মন্তব্যের ফলে বিরোধীদের সেই অভিযোগে আরও কিছুটা ইন্ধন যোগাবে বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহলের একাংশ।
বিডি-প্রতিদিন/০৭ জুন, ২০১৬/মাহবুব