কথায় আছে ‘পুলিশ তুমি যতই মার, মাইনে তোমার একশো বারো’। ষাটের দশকে উর্দি ধারী পুলিশের প্রতি অবজ্ঞা থাকলেও মারের ভয়টা ছিল দুর্বৃত্ত, অপরাধী থেকে সাধারণ মানুষের মধ্যে। কিন্তু দিন যত গেছে পুলিশের ওপর থেকে ভয় উদাহ হয়ে যায়। বর্তমানে পুলিশ পেটানোই রীতি হয়ে দাঁড়িয়েছে।
২০১৪ সালে আলিপুর থানায় ফাইলের তলায় মুখ লুকানো সেই ছবি রাজ্যের আইন-শৃঙ্খলার ক্ষেত্রে মোটেই ভাল বিজ্ঞাপন ছিল না। গত কয়েক বছরে বার বার হেডলাইন হয়েছে পুলিশি হেনস্থা। থানায় ঢুকে পুলিশকে পেটানো। ট্রাফিক পুলিশ ধরলে তাকে পাল্টা চড়। যখন তখন হুমকি এমনকি পুলিশকে লক্ষ্য করে দুর্বৃত্তদের গুলি ছোঁড়ারও অভিযোগ উঠেছে। দুর্বৃত্তদের ছোঁড়া গুলি-বোমায় নিহত হয়েছে পুলিশ সদস্যরাও।
রাজ্যে দ্বিতীয়বারের জন্য ক্ষমতায় এসেই ২ জুলাই কালীঘাটে দলের সাংগঠনিক বৈঠকেই নির্দেশ দেন পুলিশকে পুলিশের কাজ করতে দিতে হবে। তাদের কাজে হস্তক্ষেপ করা যাবে না। দুর্বৃত্তরা যাতে পুলিশকে ভয় পায় তা নিশ্চিত করতে হবে। এরপরই ছবিটা পাল্টাতে থাকে। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ পেয়ে সক্রিয় হয়ে ওঠে পুলিশ।
রবিবার দিনভর অভিযান চালিয়ে নির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে ১০২৩ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসাবে আটক করা হয়েছে ৭৯৭২ জনকে। এর পাশাপাশি ১৫২০ টি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। উদ্ধার করা হয়েছে ৮৫ টি বেআইনি আগ্নেয়াস্ত্র, ২০১ রাউন্ড গুলি ও ৭৮১ টি বোমা। ট্রাফিক আইন না মানায় একদিনে ১০,০০০ জনকে আটক করা হয়েছে। উদ্ধার হয়েছে প্রচুর পরিমান বেআইনি মদ, গাঁজা ও বাজি।
সোমবার রাজ্য পুলিশের অতিরিক্ত ডিজি (আইন শৃঙ্খলা) অনুজ শর্মা এই তথ্য দিয়ে বলেন ‘এর আগে কোন একটি জেলা আলাদা আলাদা করে দুর্বৃত্তদের খোঁজে অভিযান চালাতো কিন্তু এবার প্রতিটি জেলা একযোগে অভিযান চালায় এবং গত ৪৮ ঘন্টায় বিভিন্ন জায়গায় থেকে এদের আটক করা হয়েছে। এবার থেকে এই ধরনের অভিযান চলতে থাকবে বলেও জানান তিনি’।
সীমান্ত পেরিয়ে কোন অবৈধ অনুপ্রবেশ কিংবা জঙ্গি নাশকতা ঠেকাতে সীমান্ত রক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)-এর সঙ্গেও যোগাযোগ রাখছে রাজ্য পুলিশ। চলতি মাসের শুরুতে বাংলাদেশে জঙ্গি হামলার পর জঙ্গিরা অরক্ষিত সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে গা ঢাকা দিয়ে থাকতে পারে গোয়েন্দাদের পক্ষ থেকে সতর্ক বার্তা পাওয়ার পরই রাজ্য পুলিশ ধরপাকড় অভিযান শুরু করেছে বলে মনে করা হচেছ।
বিডি-প্রতিদিন/ ১৮ জুলাই ১৬/ সালাহ উদ্দীন