বাংলাদেশের নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন জামাত-উল-মুজাহিদিন বাংলাদেশ (জেএমবি)-এর ছয় সদস্যকে আট করেছে কলকাতা পুলিশের বিশেষ টাস্ক ফোর্স (এসটিএফ)। পশ্চিমবঙ্গ ও অাসামের বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করা হয়। এদের মধ্যে তিনজন বাংলাদেশি এবং বাকিরা ভারতীয়।
আটক ছয়জনের মধ্যে পাঁচজনের বিরুদ্ধেই ২০১৪ সালের অক্টোবরে বর্ধমানের খাগড়াগড় বিস্ফোরণে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে। গত কয়েকবছর ধরেই তারা ভারতের জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা এনআইএ'র ওয়ান্টেড তালিকায় ছিল। তাদের ওপর নজর রাখছিল এসটিএফ'র গোয়েন্দারাও। কিন্তু কিছুতেই তাদের নাগাল পাচ্ছিল না গোয়েন্দারা। অবশেষে পুলিশের জালে ধরা পড়ল এই ছয় জঙ্গি। গোয়েন্দারা এ ঘটনাকে তাদের বড় সাফল্য বলেই মনে করছে। আটক জঙ্গিদের কাছ থেকে ইম্প্রোভাইসড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস (আইইডি), ডিটোনেটর, সাদা পাউডার, ভুয়া নথি, ব্যাটারি, বাংলাদেশি ও ভারতীয় মুদ্রা, ক্যামেরা, মোবাইল ফোন, বাংলাতে লেখা চিঠি, গাইড বুক, তার কাটার যন্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানা গেছে। এদিন দুপুরে আটক ছয় জঙ্গিকে কলকাতার ব্যাঙ্কশাল আদালতে তোলা হবে। আটক ব্যক্তিদের কাছ থেকে জঙ্গি সন্দেহে আরও তথ্য জানতে জিজ্ঞাসাবাদ করবে একাধিক সংস্থা।
সোমবার কলকাতা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (অপরাধ) বিশাল গর্ব বলেন, ''মোট ছয়জনকে আটক করা হয়েছে। এরা প্রত্যেকেই জেএমবির শীর্ষ নেতা। খাগড়াগড় বিস্ফোরণের ঘটনায় চার্জশিটে পাঁচজনের নাম রয়েছে। এদের কাছ থেকে প্রচুর পরিমাণ বিস্ফোরক উদ্ধার করা হয়েছে। খাগড়াগড় বিস্ফোরণের পরই এরা দক্ষিণ ভারত ও উত্তর ভারতে গা ঢাকা দিয়েছিল। দক্ষিণ ভারতের কিছু জায়গায় এরা নাশকতা সংগঠিত করার পরিকল্পনা করেছিল। আমরা সবকিছু খতিয়ে দেখছি।''
আটক আনোয়ার হোসেন ফারুক পশ্চিমবঙ্গের জেএমবি ইউনিটের প্রধান, সংগঠনের সেকেন্ড ইন কমান্ড হলেন ইউসুফ শেখ। ইউসুফের মাথার দাম ধার্য করা হয়েছিল ১০ লাখ রুপি। বাকীরা হলেন- শহিদুল ইসলাম, মহম্মদ রুবেল, আবুল কালাম এবং জাহিদুল ইসলাম। যাদের মাথার দাম ধার্য করা হয়েছিল ১ থেকে ৩ লাখ রুপি।
জাহিদুলকে আটক করা হয় অাসামের কাছার জেলা থেকে। ইউসুফ ও শহিদুলকে পশ্চিমবঙ্গের উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলার বসিরহাটের নতুন বাজার থেকে আটক করা হয়। ফারুক ও রুবেলকে ওই জেলারই বনগা বাগদা রোড থেকে আটক করা হয়। কুচবিহার থেকে আটক করা হয় কালামকে।
১৯৯৮ সালে বাংলাদেশে এই জঙ্গি সংগঠনটির আত্মপ্রকাশ ঘটে। ২০০৫ সালে ফেব্রুয়ারিতে সংগঠনটিকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। গত কয়েকবছর ধরে পশ্চিমবঙ্গেও সক্রিয় হয়ে উঠেছে জেএমবি। ২০১৪ সালের ২ অক্টোবর পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার খাগড়াগড় বোমা বিস্ফোরণের ঘটনায় মৃত্যু হয় শাকিল গাজি ও আবদুল করিম নামে দু'জনের। এরপরই তদন্তে নেমে ওই ঘটনায় জেএমবি সম্পর্কক্ততার বিষয়টি স্পষ্ট হয়। তদন্তের স্বার্থে এনআইএ'র একটি প্রতিনিধি দল বাংলাদেশে যায়। বাংলাদেশের গোয়েন্দাদের দেওয়া তথ্যের ওপর ভিত্তি করেই জেএমবি সন্দেহে আটক করা হয় একাধিক ব্যক্তিকে। তদন্তকারী সংস্থা এনআইএ'র দাবি ছিল নদীয়া, বীরভূম, মুর্শিদাবাদ, বর্ধমানসহ চার জেলায় অস্ত্র ও বিস্ফোরক তৈরি, নাশকতা ও জেহাদি প্রশিক্ষণ, জঙ্গি নিয়োগের সঙ্গে যুক্ত ছিল অভিযুক্তরা। ভারতের মাটিতে জঙ্গি প্রশিক্ষণ নিয়ে প্রতিবেশি রাষ্ট্র বাংলাদেশে নাশকতা ঘটানো এবং গণতান্ত্রিক সরকারকে উৎখাত করার মতো ষড়যন্ত্র ছিল।
বিডি-প্রতিদিন/এস আহমেদ