কলকাতার তরুণ সমাজের অধিকাংশেরই পছন্দে ছিলেন হিলারি। কারণ সাবেক এ ফার্স্ট লেডি গায়ে মেখে গেছেন কলকাতার আলো-হাওয়া। মিশেছিলেন উঁচু থেকে পথের মানুষের সঙ্গেও। সেই স্মৃতিই যেন কলকাতাবাসীর মনে গেঁথে ছিল। তাইতো নির্বাচনের দিন যখন ট্রাম্পের আসন সংখ্যা বেড়েই যাচ্ছিল তখন অনেকের চোখে পানি চিকচিক করতে দেখা গেছে।
বুধবার বেলা ১০টা। কলকাতার আমেরিকান সেন্টারের লিংকন রুমে তার আগে ট্রাম্প সাহেবের সমর্থকদের বড় একটা খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। সকালের নাস্তার আসরে যারা জড়ো হয়েছেন, তাদের অনেকেই পড়ুয়া। ভবিষ্যতে উচ্চশিক্ষার জন্য মার্কিন মুলুকে যাওয়ার স্বপ্ন দেখেন। এই দলটা তো বটেই, আমেরিকার ভোটরঙ্গ দেখতে হাজির জনতার চোদ্দো আনাই ডেমোক্র্যাট শিবিরের ‘গাধা’ আঁকা ব্যাজটাই বেছে নিয়েছিলেন।
ফ্লোরিডার ফল ঘোষণা হতেই স্কুলের পোশাক পরা ছিপছিপে সদ্য তরুণ দাঁড়িয়ে হাততালি দিয়ে উঠল। যে গুটিকয়েক জনগণ, ‘হাতি’র ব্যাজ জামায় এঁটেছিলেন, ওই তরুণ তাদের একজন। লক্ষীপত সিংহানিয়া স্কুলের দ্বাদশ শ্রেণির অরবিন্দ কুমার। দাবি করলেন, ‘‘ট্রাম্পকে যতটা ভয়ঙ্কর মনে হচ্ছে, আদতে উনি তেমন নন। রাজনীতির শর্ত মেনে ভোট প্রচারের চেয়ে ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হিসেবে অনেক নরম হবেন।'' তবে তার এ দাবি অন্যরা মেনে নিতে পারছিলেন না।
জিডি বিড়লা সেন্টার ফর এডুকেশনের একাদশ শ্রেণির সুলগ্না দাশগুপ্ত, সৃষ্টি চট্টোপাধ্যায় বা দ্বাদশ শ্রেণির ঈশা লাহিড়ীরা ঝাঁঝিয়ে উঠে প্রতিবাদ করলেন। সুলগ্নার কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ডাক্তারি পড়ার ইচ্ছা, সৃষ্টি ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি সাহিত্য আর ঈশা নিউ ইয়র্কে জৈবপ্রযুক্তির পাঠ নিতে আগ্রহী। সুলগ্না বললেন, ‘‘ট্রাম্প এখন যাই বলুন, উনি আমেরিকানদের জন্য আমেরিকা, বলেই এত ভোট পেয়েছেন! ভারতীয় পড়ুয়াদের এখন দু’বার ভাবতে হবে।’’ ডেমোক্র্যাট প্রার্থী হিলারির ন্যূনতম খরচায় কলেজ শিক্ষা ও উচ্চশিক্ষার পক্ষে অনুকূল নীতির প্রতিশ্রুতি বেশি মনে ধরেছিল ওই তরুণীদের। ফ্লোরিডার পরে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের স্টেটগুলো— মিশিগান, পেনসিলভেনিয়া। স্টেটগুলোয় হিলারির রাশ আলগা হচ্ছে দেখে মডার্ন হাই স্কুলের এক ছাত্রী কেঁদেই ফেললেন।
ভোট প্রচারে ভাঙা হিন্দিতে নরেন্দ্র মোদির স্লোগান ধার করে ট্রাম্প বলেছেন, 'আবি কি বাড়, ট্রাম্প সোরকার!' কিন্তু আমেরিকান সেন্টারে জনতার মেজাজ দেখে কলকাতার মার্কিন কনসাল-জেনারেল ক্রেগ হল বলেন, ‘‘এখানে তো দেখছি, শ্রীমতি ক্লিনটনের দিকেই পাল্লা ঝুঁকে আছে।’’ প্রাক্তন বিদেশসচিব হিলারি যে এই শহরের জল-হাওয়া মেখে গিয়েছিলেন, ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল দেখেছিলেন বা মমতা ব্যানার্জির দরবারে নকুড়ের সন্দেশে আপ্যায়িত হয়েছিলেন, সেটাও বুঝি মনে রেখেছিল কলকাতা। হিলারির সেই সফরে তার সঙ্গে বৈঠকে মুখোমুখি হয়েছিলেন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কর্ত্রী উর্মি বসু। এ দিন জায়ান্ট স্ক্রিনে ভোটের ফলের ধারাবিবরণীর ফাঁকে বলছিলেন, ‘‘উনি (হিলারি) তখন বলেছিলেন, নারী পাচার রোখার কাজে উনিই হবেন আমাদের সব থেকে বড় চিয়ারলিডার! কিন্তু এখন মার্কিন সাহায্যের হাত কতটা উপুড় হবে, তা নিয়ে একটু খচখচ করছে।’’ ট্রাম্পের জাতিবিদ্বেষী, সমকামী-বিদ্বেষী বা নারীবিদ্বেষী ভাবমূর্তিও তাকে তাড়া করছে বলে জানান। সূত্র: আনন্দবাজার।
বিডি-প্রতিদিন/এস আহমেদ