পাটকাঠি পুড়িয়ে তৈরি হচ্ছে ছাই। সেই ছাই জাহাজে চড়ে সোজা চলে যাচ্ছে চীনে। বিক্রি হচ্ছে ৪০০ টাকা কেজি। ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদে গড়ে উঠেছে এই ছাই তৈরির কারখানা। আর ছাই বিক্রি করেই ভাগ্য বদলে গেছে বেলডাঙার কাজিসাহা গ্রামের সাবির শেখের। কিন্তু চীনারা এই ছাই দিয়ে কী করছে তা জানাতে পারেননি উৎপাদনকারীও। এই রহস্যজনক ছাইয়ের ব্যবসা নিয়েই তুমুল কৌতূহল তৈরি হয়েছে মুর্শিদাবাদের বেলডাঙায়।
বেলডাঙার কাজিসাহা গ্রামের সাবির শেখ গত সাত মাস ধরে কাজিসাহা গ্রামে ঘাঁটি গেড়ে থাকা চীনা কারবারিদের সঙ্গে যৌথভাবে এই ছাইয়ের ব্যবসা করছেন। চীনা প্রযুক্তিতে গড়ে ওঠা কারখানায় পাটকাঠি পুড়িয়ে ছাই বস্তাবন্দি করে কেজি কেজি ছাই কলকাতা হয়ে সুদূর চীনে চলে যাচ্ছে।
কী এই ছাইয়ের কারবার? বেলডাঙা-১ ব্লকের বেগুনবাড়ি গ্রাম পঞ্চায়েতের কাজিসাহা গ্রাম থেকে বেলডাঙা-আমতলা রাজ্য সড়কে নওদার ত্রিমোহিনীর দিকে ২ কিলোমিটার এগোতেই এই কারখানা চোখে পড়বে। রাজ্য সড়কের পাশেই প্রায় বিঘা দু’য়েক চাষের জমির উপর চীনা প্রযুক্তিতে গড়ে উঠেছে পাটকাঠি পুড়িয়ে ছাই তৈরির কারখানা। পাশাপাশি দু’টি সারিতে মোট ১২টি চিমনি রয়েছে। চিমনির উপরে বাঁশের মাচা। বাঁশের মাচার উপরে, চিমনির মুখে পাঁজা পাঁজা পাটকাঠি অনবরত গুঁজে দিচ্ছেন কর্মরত জনা ছয়েক স্থানীয় শ্রমিক। চিমনির মুখ দিয়ে গলগল করে ধোঁয়া বেরোচ্ছে। শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, ১২টি চিমনি থাকলেও প্রতিদিন দু’টি করে চিমনিতে পাটকাঠি পুড়িয়ে ছাই তৈরির কাজ চলে। এক একটি চিমনিতে দিনে আট ঘণ্টা সাড়ে তিনশো কেজি পাটকাঠি পুড়িয়ে ৬ বস্তা ছাই পাওয়া যায়। প্রতি বস্তায় ১২ কেজি ছাই থাকে। প্রতিটি চিমনি থেকে সাতদিন অন্তর ছাই বের করে আটা পেষাইয়ের মত মেসিনে পেষাই করে মিহি ডাস্ট করে বস্তাবন্দি করা হয়। কারখানার অন্যতম মালিক বেলডাঙার কাজিসাহা গ্রামের সাবির শেখ জানান, ‘চীনের সঙ্গে চুলের ব্যবসা সূত্রে কাজিসাহাসহ বেলডাঙা গ্রামের অনেক দিনের সম্পর্ক। সেই সূত্রেই মাস সাতেক আগে চীনা কারবারিরা গ্রামে এসে পাটকাঠি পুড়িয়ে ছাই তৈরির প্রশিক্ষণ দেয়। প্রশিক্ষণ শেষে চীনা কারবারিদের সঙ্গে যৌথভাবে ব্যবসা শুরু করি।’এ ব্যবসায় আয়-রোজগার ভালোই হচ্ছে বলে জানান তিনি।
বেলডাঙার বিভিন্ন গ্রাম থেকে ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা কুইন্টাল দরে পাটকাঠি কেনা হয়। সাবির শেখের তথ্য অনুযায়ী, প্রায় পাঁচ কুইন্টাল পাটকাঠি পুড়িয়ে এক কুইন্টাল ছাই পাওয়া যায় যা চীনা কারবারিরা ৪০০০ টাকা কুইন্টাল দরে কিনে নেয়। এই কারখানা চালানোর জন্য স্থানীয় বা জেলা প্রশাসনের কোনও অনুমতি নেওয়া হয়েছে কি না জানতে চাইলে তিনি জানান, স্থানীয় বেগুনবাড়ি পঞ্চায়েত থেকে অনুমতি নেওয়ার পাশাপাশি জেলা শিল্পকেন্দ্রকে মৌখিকভাবে জানানো হয়েছে। তবে কাজিসাহা গ্রামের ওই কারখানার বিষয়ে তাদের কেউ কিছু জানায়নি বলে দাবি পঞ্চায়েত ও স্থানীয় প্রশাসনের। রহস্যজনক ছাই কারখানার খোঁজ পাওয়ার পর থেকেই জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে খোঁজখবর নেওয়া শুরু হয়েছে। সূত্র: এবেলা
বিডি-প্রতিদিন/এস আহমেদ