একাধিকবার এর আগেও ছবি এঁকেছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। বহুবার নিলামে চড়ানো হয়েছে সেই সব ছবিকে। হাজার-লাখ ছাড়িয়ে কোটি রুপি দামও উঠেছে সেই ছবির। কখনও নির্বাচনী খরচ যোগাতে তৃণমূলের তহবিল গড়তে আবার কখনও মানুষের কল্যাণে ব্যবহৃত হয়েছে সেই অর্থ। রাজ্যের গণ্ডি পেরিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর আঁকা ছবি বিদেশেও সমাদৃত হয়েছে। শিল্প সমালোচকদের অভিমত কারও কাছে প্রথাগত আঁকা না শিখেও ছবিতে রঙের ব্যবহারে মমতার এই সাবলীলতা দুষ্প্রাপ্য। যদিও বিরোধীরা এনিয়ে কটু কথা বলতে ছাড়েননি মমতা ব্যানার্জিকে। কয়েক বছর আগেই তাঁরই আঁকা একটি ছবি নিলামকে কেন্দ্র করে পানি বহুদূর পর্যন্ত গড়িয়েছিল। এমনকি ২০১৪ সালে পশ্চিমবঙ্গে নির্বাচনী প্রচারণায় এসে মমতাকে নিশানা করেছিলেন ভারতের তৎকালীণ বিজেপি প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী নরেন্দ্র মোদি। যদিও সে ঘটনা এখন অতীত। বিতর্ক দূরে ঠেলে রেখে এবার মমতার নিজের হাতের আঁকা ছবিই স্থান পেতে চলেছে ভারতের রাষ্ট্রপতি ভবনে। আর এই কথা দিয়েছেন রাইসিনা হিলসের বাসিন্দা দেশটির রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ নিজে।
মঙ্গলবার কলকাতার নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে রাষ্ট্রপতি’র সম্মানে নাগরিক সংবর্ধনার আয়োজন করে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকার। সেই অনুষ্ঠানে রাজ্যের রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠি থেকে শুরু করে মমতা ব্যানার্জি, রাজ্য বিধানসভার স্পিকার বিমান বন্দোপাধ্যায়, কলকাতার মেয়র শোভন চ্যাটার্জি, চিত্রশিল্পী ও তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ যোগেন চৌধুরী, অভিনেতা প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়সহ অন্যরা রাষ্ট্রপতিকে স্বাগত জানান। ওই সংবর্ধনা অনুষ্ঠানেই নিজের হাতে আঁকা একটি ছবি উপহার হিসাবে রাষ্ট্রপতিকে তুলে দেন মমতা। মমতার ওই ছবিতেই মজে যান রাষ্ট্রপতি। ছবিটির প্রশংসাও করেন তিনি।
রাষ্ট্রপতি জানান, ‘এই বাংলার মাটিতে উষ্ণ অভ্যর্থনা দেওয়ার জন্য আমি সত্যিই অভিভূত। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী, রাজ্যের মানুষ, এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষকে আমি ধন্যবাদ জানাই। কিন্তু আমি সবচেয়ে বেশি অবাক হয়েছি এটা যেনে যে মাননীয় মুখ্যমন্ত্রী যখন আমাকে একটা ছবি উপহার দিলেন এবং বললেন যে এই আঁকা ছবিটি তিনি নিজেই এঁকেছেন। মাননীয় মুখ্যমন্ত্রী, আমি আপনাকে নিশ্চিত করছি যে এই ছবি রাষ্ট্রপতি ভবনে জায়গা পাবে। কিন্তু ছবিটি সবসময়ই আমার হৃদয়ের খুব কাছাকাছি থাকবে’।
নেতাজি ইন্ডোরে উপস্থিত সকলকে নমস্কার জানিয়ে বাংলাতে বলেন, ‘আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালবাসি’। তিনি বলেন, রাষ্ট্রপতি হিসেবে এটাই আমার প্রথম পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সফর এবং এই রাজ্যে আসতে পেরে আমি সত্যিই খুব আনন্দিত’।
রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘একজন আগুন্তুক হিসাবে আমি এই বাংলায় আসিনি। বাংলার সঙ্গে আমার যোগাযোগ দীর্ঘদিনের। আমি কয়েক দশক ধরে এই কলকাতায় যাতায়াত করছি। বাংলার সমৃদ্ধ সংস্কৃতির কারণে আমি বরাবরই বাংলার ভক্ত। দেশে খুব কম মানুষই রয়েছেন যাঁদের হৃদয় বাংলা ছুঁয়ে যায়নি। বাংলা আমাদের জাতীয় পরিচয় দিয়েছে। ‘জন-গণ-মন’এর জন্ম এই বাংলাতেই। ‘জয় হিন্দ’ স্লোগানের জন্মদাতা নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসু। রবি ঠাকুর- বঙ্কিমচন্দ্র-নেতাজী প্রত্যেকেই জাতীয়বাদের জনক। রামকৃষ্ণ-বিবেকানন্দকেও আমি শ্রদ্ধা জানাই। স্বাধীনতা সংগ্রামেও বাংলার অবদান অনস্বীকার্য। দেশ গড়তে এই বাংলার অনেকেই শহীদ হয়েছে। অভিনেতা উত্তম কুমারকে আমরা কেউই ভুলতে পারি না’।
কলকাতাকে মিষ্টি, আড্ডা ও ফুটবলের শহর বলে আখ্যায়িত করে রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘আমি ফের এই পশ্চিমবঙ্গ ও কলকাতা শহরে আসবো’।
অন্যদিকে মুখ্যমন্ত্রী তাঁর ভাষণে বলেন, ‘দায়িত্ব নেওয়ার কয়েক দিনের মধ্যেই রাষ্ট্রপতি কলকাতায় এসেছেন। সফরের জন্য বাংলাকে বেছে নেওয়ায় আমরা কৃতজ্ঞ। তাঁকে সম্মান জানিয়ে আমরা অভিভূত। রাষ্ট্রপতির এই আসাটা আজ বাংলার কাছে গর্বের দিন’।
রাষ্ট্রপতির দীর্ঘায়ু কামনা করে পশ্চমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘রাষ্ট্রপতি হলেন আমাদের পরামর্শদাতা। তিনি আমাদের অভিভাবকের মতো। রাষ্ট্রপতির পদ সব রাজনীতির ঊর্ধ্বে’।
এর আগে দুই দিনের সফরে এদিন দুপুর ১২টার দিকে কলকাতার নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নামেন রামনাথ কোবিন্দ। সেখানে তাঁকে স্বাগত জানান, পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠি, রাজ্যের পঞ্চায়েত মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়, মুখ্যসচিব সমর দে প্রমুখ। পরে বিমানবন্দরেই রাষ্ট্রপতিকে ‘গার্ড অব অনার’ দেওয়া হয়। এরপর সেখান থেকে সড়কপথে রাষ্ট্রপতি আসেন নেতাজী ইন্ডোর স্টেডিয়ামে।
আগামীকাল বুধবার সকালে গুরুদেব রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মস্থান কলকাতার জোড়াসাঁকো পরিদর্শনে যাবেন রাষ্ট্রপতি।
বিডি-প্রতিদিন/২৮ নভেম্বর, ২০১৭/মাহবুব