তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বলেছেন, সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশ থেকে ভারতের অনুপ্রবেশের কোন ঘটনা নেই। গত ৪৫ বছরে অাসাম, মণিপুর, মেঘালয়, ত্রিপুরা, পশ্চিমবঙ্গসহ সীমান্তবর্তী রাজ্যগুলির সঙ্গে যে জেলাগুলি আছে সেখানে কোন দুর্ঘটনা বা সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা হয়নি। সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে অনুপ্রবেশ করার কোন ইতিহাস নেই। ভারতে অনুপ্রবেশ করার যে কথা বলা হচ্ছে তাতে খুবই অবাক লাগছে।
ভারতের অাসাম রাজ্যে ‘ন্যাশনাল রেজিস্টার অব সিটিজেনস’ বা এনআরসি(জাতীয় নাগরিক পঞ্জি)-র আংশিক খসড়া’র বিভিন্ন মহলে বাঙালি খেদাও’এর যে অভিযোগ উঠেছে সে প্রসঙ্গেই ইনু এই মন্তব্য করেন।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় কলকাতায় বাংলাদেশ ডেপুটি হাইকমিশন আয়োজিত এক সুধীসমাবেশে তথ্যমন্ত্রী এসব কথা বলেন। তিনি আরও বলেন, গণমাধ্যমে আমরা জানতে পারছি যে অাসামে বাংলা ভাষাভাষী মানুষদের একটা তালিকা হচ্ছে। তবে আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশ সরকার এখনও অবহিত নয়।
এনআরসি নিয়ে সম্প্রতি অাসামের অর্থমন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শর্মা জানান, অবৈধ বাংলাদেশিদের চিহ্নিত করতেই নাগরিকপঞ্জি নবায়ন করা হচ্ছে। তাই যাদের নাম থাকবে না তাদের ফেরত পাঠানো হবে।
সে ব্যাপারে ইনু বলেন, এ ব্যাপারে অাসাম রাজ্য সরকার কি করছে, তা নিয়ে আমরা মাথা ঘামাচ্ছি না। ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার যদি কোন কথা উত্থাপন করে তবে আমরা আমরা এটা নিয়ে আলোচনা করবো।
উল্লেখ্য অাসামে ৩১ ডিসেম্বর মধ্যরাতে প্রথম এনআরসি খসড়া (নাগরিকদের তালিকা) প্রকাশ করে অসম সরকার। আবেদন করেছিলেন মোট ৩.২৯ কোটি মানুষ। ১.৯০ কোটি মানুষের নাম এসেছে। অনিশ্চয়তায় ঝুলছে বাকী ১.৩৯ কোটির নাম।
এ নিয়ে ক্ষোভ জানিয়ে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি বলেছেন, অাসামে বাঙালি খেদাও করছে। সব রাজ্যেই অন্য রাজ্যের মানুষ থাকে। কারণ এটা তাদের অধিকার... অথচ গত ত্রিশ-চল্লিশ বছর ধরে যারা অাসামে আছে, আজকে সিটিজেনশিপ অ্যাক্টের নামে তাদের সবাইকে তাড়িয়ে দেওয়ার চক্রান্ত চলছে।
সে বিষয়ে ইনু বলেন, আমিও সেটা শুনেছি। কিন্তু তিনি প্রতিবেশি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী। সে হিসেবে সেখানে নিশ্চয় কিছু রাজনীতির ব্যাপার থাকতে পারে। সেটা তাদের ব্যাপার। তবে বাংলাদেশ এ ব্যাপারে উদ্বিগ্ন নয়।
ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী থেকে তারানা হালিমকে তথ্য মন্ত্রালয়ের প্রতিমন্ত্রী করায় এই মন্ত্রণালয়ের পূর্ণমন্ত্রী ও জাসদ সভাপতি ও হাসানুল হক ইনু জানান, খুবই ভাল হয়েছে, আমরা হাত আরও শক্তিশালী হল।
সুধীসমাবেশে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশের অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন ও চলচ্চিত্র) মনজুরুর রহমান, দিল্লিতে নিযুক্ত বাংলাদেশ হাইকমিশনার সৈয়দ মোয়াজ্জেম আলি, চিত্র পরিচালক গৌতম ঘোষ, বিজেপি নেত্রী ও অভিনেত্রী লকেট চট্টোপাধ্যায়, প্রখ্যাত সাংবাদিক মানস ঘোষ, সুখরঞ্জন দাসগুপ্ত, গৌতম ভট্টাচার্য, স্নেহাশিস সুর, সঙ্গীতশিল্পী সৈকত মিত্রসহ বিশিষ্টরা।
অনুষ্ঠানে মুক্তিযুদ্ধে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর অবদানের কথা তুলে ধরেন ইনু। এর পাশাপাশি নরেন্দ্র মোদির ঢাকা সফরে দুই দেশের অনেক সমস্যা সমাধান, দুই দেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের উন্নয়নের দিকও তুলে আনেন তথ্যমন্ত্রী।
বিডি প্রতিদিন/৫ জানুয়ারি, ২০১৮/ফারজানা