রাজনীতির ময়দানে ফিল্ম দুনিয়ার তারকাদের আগমন নতুন কিছু নয়। রাজনীতির কুটকাচালি তারা বুঝুক বা না বুঝুক-রাজনৈতিক দলগুলো তাদেরকে ময়দানে নামিয়ে মাঠ ভরানোর কাজটা খুব সহজেই করে ফেলে।
তারকাদের দিয়ে দুই-একটি মিছিল, জনসভা করেই ভোটারদের মনে চমক সৃষ্টি করে তাদের আবেগ ও উচ্ছ্বাসকে কাজে লাগাতে চায় রাজনৈতিক দলগুলো। কোনো কোনো ক্ষেত্রে সফলও হয় তারা। সাধারণ মানুষের এই আবেগ ও উচ্ছ্বাস দেখে রাজনৈতিক দলগুলো ভাবে এইবার বোধহয় তাদের ভোট বাক্স কানায় কানায় ভর্তি হয়ে যাবে। আর এই লক্ষ্যেই তারকা জগতের নিয়ে এসে চমক সৃষ্টি করে রাজনৈতিক দলগুলো।
এক সময় রাজনীতিতে স্টারডাম বলতে বোঝাত প্রয়াত ইন্দিরা গান্ধী, জ্যোতি বসু, রাজীব গান্ধী, অটল বিহারী বাজপেয়ীকে। এখন সেটার বদলে হয়েছে মুনমুন সেন, দেব, মিমি চক্রবর্তী কিংবা নুসরত জাহান!
এবার ফিল্ম জগতের মোট পাঁচ তারকাকে প্রার্থী করেছেন তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী মমতা ব্যানার্জি। এর মধ্যে গত বারের নির্বাচনে দলের টিকিটে জয়লাভ করা মুনমুন সেন, শতাব্দী রায়, দীপক অধিকারী (দেব) যেমন আছেন, তেমনি মিমি চক্রবর্তী এবং নুসরত জাহান এই দুই নবাগতকেও দলের টিকিট দিয়েছেন মমতা।
নিজেদের কাজের জগতে এরা প্রত্যেকেই ছাপ রেখেছেন ঠিকই কিন্তু রাজনীতির বাইরে এই সেলেব্রিটিদের দিয়ে আদৌ কি কোন কাজ হয়? নির্বাচনী প্রচারণার সময় গালভরা প্রতিশ্রুতি দিলেও ভোটে জেতার পর থেকে নিজেদের কেন্দ্রে তাদের সেভাবে আর দেখা যায় না বলে দীর্ঘদিনের অভিযোগ।
পরিসংখ্যান বলছে নির্বাচনে জয়ের পর সংসদে হাজিরা দেওয়া, প্রশ্ন করা, বিতর্কে অংশ নেওয়ার ক্ষেত্রেও তাদের এই গা-ছাড়া মনোভাব দেখা যায়। ২০১৪ সালে প্রথমবারের জন্য পশ্চিমবঙ্গের ঘাটাল থেকে সাংসদ হন তৃণমূলের দেব (৩৬)। এবারও তাকে ওই কেন্দ্র থেকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। কিন্তু ১৬ তম লোকসভার অধিবেশনে দেব’এর পারফরমেন্স অত্যন্ত খারাপ। বেসরকারি সংগঠন ‘পিআরএস লেজিসলেটিভ রিসার্চ’-এর একটি পরিসংখ্যানে দেখা গেছে সংসদের অধিবেশনে দেবের হাজিরা ১১ শতাংশ, দেবের সাথেই ওই সারিতে আছেন জম্মু-কাশ্মীরের পিডিপি সাংসদ মুজাফ্ফর হুসেন বেগ।
পিআরএস-এর পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গোটা দেশে লোকসভার সাংসদদের উপস্থিতির হার যেখানে ৮০ শতাংশ সেখানে পশ্চিমবঙ্গের সাংসদদের গড় উপস্থিতির হার ৬৫ শতাংশ।
গত পাঁচ বছরে সংসদে দুইটি বিতর্কে অংশ নিয়েছিলেন দেব, প্রশ্ন করেছিলেন মাত্র তিনটি। অন্য স্টার সাংসদদের সংসদে উপস্থিতির হার কিছুটা ভাল হলেও প্রশ্ন করা কিংবা বিতর্কে অংশ নেওয়ার ক্ষেত্রে রেকর্ড দেবের মতোই।
সংসদের অধিবেশনে মুনমুন সেন-এর উপস্থিতির হার ৬৯ শতাংশ। একটি বিতর্ক সভায় অংশ নিয়েছেন কিন্তু একটিও প্রশ্ন করেননি তিনি।
২০১৪ সালে বাঁকুড়া কেন্দ্র থেকে জয়ী মুনমুনকে এবারের নির্বাচনে আসানসোল কেন্দ্রে প্রার্থী করা হয়েছে, তার প্রতিদ্বন্দ্বী বিজেপি সাংসদ ও কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়।
বীরভূমের সাংসদ শতাব্দী রায়ের সংসদে হাজিরার হার ৭৪ শতাংশ। সংসদের ভেতর দুইটি বিতর্কে অংশ নিয়েছিলেন এবং দুইটি প্রশ্ন করেছিলেন। গত বারের দুই সাংসদ তাপস পালকে চিটফান্ড কেলেঙ্কারির মামলায় নাম জড়িয়ে যাওয়ায় এবং সন্ধ্যা রায়কে শারীরিক কারণে এবার প্রার্থী তালিকা থেকে বাদ দিয়েছে তৃণমূল। তবে তাদেরও সংসদের রেকর্ড খুব একটা ভাল নয়। সংসদের অধিবেশনে কৃষ্ণনগরের সাংসদ তাপস পালের উপস্থিতির হার ছিল ৪৭ শতাংশ, আটটি বিতর্কে অংশ নিয়েছিলেন এবং সাতটি প্রশ্ন করেছিলেন।
অন্যদিকে মেদিনীপুরের সাংসদ সন্ধ্যা রায়ের উপস্থিতির হার ছিল ৫৩ শতাংশ, তিনটি বিতর্কে অংশ নিয়েছিলেন কিন্তু সংসদে উপস্থিত থেকেও একটি প্রশ্নও তিনি করেননি।
গোটা দেশে সাংসদদের জাতীয় গড় উপস্থিতির তুলনায় পশ্চিমবঙ্গের সংসদ সদস্যদের উপস্থিতির হার খুবই কম। মমতা ব্যনার্জির ভাতিজা তথা দলের ‘নাম্বার টু’ অভিষেক ব্যানার্জির উপস্থিতির হারও অত্যন্ত খারাপ। ডায়মন্ড হারবারের এই সাংসদকে খুব কমই দেখা গেছে সংসদের আঙিনায়। তার উপস্থিতির শতকরা হার ২৮ শতাংশ, তিনটি বিতর্কে অংশ নিলেও গত পাঁচ বছরে ৪৮ টি প্রশ্ন উত্থাপন করেছিলেন তিনি।
বিডি-প্রতিদিন/বাজিত হোসেন