ঠিক ছিল আগামী ৪ এপ্রিল থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যে আসন্ন লোকসভার নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করবেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। কিন্তু তার একদিন আগে থেকেই প্রচারণায় ঝড় তুলতে চলেছেন মোদি বিরোধী অন্যতম প্রধান মুখ মমতা ব্যানার্জি। কারণ একটাই আগামী বুধবারই বাংলায় এসে জোড়া প্রচারণা করবেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এর একটি হবে উত্তরবঙ্গের দার্জিলিং জেলার শিলিগুড়ি, দ্বিতীয়টি কলকাতার ব্রিগেড প্যারেড ময়দানে। দলীয় সূত্রে খবর মোদিকে ইঞ্চিতে ইঞ্চিতে জবাব দিতে মমতার পরিকল্পনায় এই রদবদল। অর্থাৎ একদিন এগিয়ে নিয়ে আসা হয়েছে তাঁর প্রচার।
আগামীকাল বুধবার দুপুর একটার দিকে উত্তরবঙ্গের বাগডোগরা বিমানবন্দরে নামবেন প্রধানমন্ত্রী। সেখান থেকে হেলিকপ্টার বা সড়ক পথে শিলিগুড়ির মাটিগাড়ায় পৌঁছবেন তিনি। এরপর বেলা ১.২০ মিনিটে শিলিগুড়ির নিউ জলপাইগুড়ি রেল স্টেশনের পাশে রেলওয়ে ময়দানে প্রথম জনসভায় উপস্থিত থাকবেন মোদি। সভা উপলক্ষে ইতিমধ্যেই জোরদার করা হয়েছে নিরাপত্তা ব্যবস্থা। তৈরি হয়েছে তিন স্তরীয় নিরাপত্তা বলয়। সেই সভা শেষ করে বাগডোগরা বিমানবন্দর হয়ে তিনি পৌঁছবেন কলকাতায়। বিকাল তিনটার দিকে ব্রিগেড প্যারেড ময়দানে দ্বিতীয় সভাটিতে উপস্থিত থাকবেন মোদি।
আগামী ১১ এপ্রিল প্রথম দফায় গোটা দেশের সাথেই নির্বাচন হবে এ রাজ্যের আলিপুরদুয়ার ও কোচবিহার লোকসভা কেন্দ্রে। এবারের নির্বাচনকে পাখির চোখ করেছে বিজেপি। তাই রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি, সিন্ডিকেট, বেকারত্ব, দলীয় কর্মীদের ওপর হামলা, অনুপ্রবেশসহ একাধিক ইস্যুতে তৃণমূল সরকারকে যে নিশানা করতে চলেছে তা মোটামুটি পরিষ্কার।
মোদি যখন শিলিগুড়ির সভা শেষ করে কলকাতার পথে রওনা দেবেন ঠিক তখনই মোদির বক্তব্যের পাল্টা জবাব দিতে বুধবার দুপুরে কোচবিহার জেলার দিনহাটায় দলীয় প্রার্থীর হয়ে জনসভা করবেন মমতা। মোদির বক্তব্যের পর তৃণমূল সম্পর্কে যাতে ভোটারদের মনে ভুল ধারণা না যায়-তা আটকাতেই মমতাও পাল্টা কাউন্টারে নামছেন।
এদিকে, গ্রীষ্মের তাপপ্রবাহকে মাথায় রেখেই এই প্রথম ব্রিগেডে কোন জনসভায় দর্শকদের মাথার উপরে ছাউনির ব্যবস্থা করা হচ্ছে। কমপক্ষে ১৫ লাখ মানুষের জায়গা দেওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে এই ব্রিগেডে। জার্মান অ্যালুমিনিয়ামের হ্যাঙার দিয়ে ঢাকা হচ্ছে ব্রিগেডের প্রায় ২৫ লাখ বর্গফুট এলাকা। তার ওপর থাকছে অ্যালুমিনিয়ামের শিট। মোট তিনটি মঞ্চ করা হয়েছে-৬০/৩২ ফুটের, মূল মঞ্চে মোদি ছাড়া কেন্দ্রীয় নেতারা বসবেন। ৪০/২০ ফুটের করে বাকী দুইটি মঞ্চে থাকবেন রাজ্য-জেলা স্তরের নেতারা। যদিও কোন মঞ্চে কারা বসবে, কারা কোন গেট দিয়ে ঢুকবে তা সবটাই ঠিক করবেন মোদির নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা এসপিজির কর্মকর্তারা।
ঐতিহাসিকভাবে এই ব্রিগেড ময়দানের গুরুত্ব অনেকটাই। রাজ্যের প্রতিটি বড় বড় আন্দোলন-রাজনৈতিক জনসভা-প্রতিবাদ সভা করা এখানে।
বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ জানান, ‘প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য শুনতে বহু মানুষ এখানে জমায়েত হবেন। তারা ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করবেন, তাই তাদের কথা ভেবেই এই ছাউনির ব্যবস্থা করা হচ্ছে। কারণ গরমের দিনে আমাদের সমর্থকদের স্বাস্থ্যর দিকটা আমাদের কাছে প্রধান বিবেচ্য বিষয়।’
ব্রিগেডের সভার পরই আগামী ৭ ও ১০ এপ্রিল আরও দুইটি জনসভায় রাজ্যে উপস্থিত থাকবেন প্রধানমন্ত্রী। অন্যদিকে আগামী ৪ এপ্রিল মাথাভাঙায় প্রচারণা করবেন তৃণমূল নেত্রী। এরপর ৫ এপ্রিল প্রচারণায় অংশ নিতে আসাম সফরে যাবেন মমতা। আসাম থেকে ফের উত্তরবঙ্গে ফিরে আরও একাধিক সভা করে কলকাতায় ফিরবেন আগামী ১৩ এপ্রিল।
তৃণমূল সূত্রে খবর, প্রতিটি লোকসভা কেন্দ্রে দুইটি করে জনসভা করার লক্ষ্য নিয়েই প্রচারণায় নামছেন তৃণমূল নেত্রী। ৩ এপ্রিল থেকে শুরু করে ১৭ মে পর্যন্ত রাজ্য জুড়ে প্রায় ১০০ টি প্রচারণায় অংশ নিতে দেখা যাবে মমতাকে।
বিডি-প্রতিদিন/০২ এপ্রিল, ২০১৯/মাহবুব