১৫ জানুয়ারি, ২০২০ ১৬:৪৫

না ফেরার দেশে উপেন তরফদার, মমতার শোক

দীপক দেবনাথ, কলকাতা :

না ফেরার দেশে উপেন তরফদার, মমতার শোক

উপেন তরফদারকে শ্রদ্ধা

প্রখ্যাত বেতার সাংবাদিক এবং আকাশবাণী কলকাতার সংবাদ বিচিত্রা অনুষ্ঠানের কিংবদন্তি প্রযোজক বাংলাদেশের প্রকৃত বন্ধু উপেন তরফদার আর নেই।  মঙ্গলবার রাত আটটায় কলকাতার শেঠ সুখলাল কারনানি মেমোরিয়াল (এসএসকেএম) হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮৪ বছর। তিনি স্ত্রী এবং দুই পুত্রসহ অসংখ্য গুণগ্রাহীকে রেখে গেছেন। দীর্ঘদিন ধরেই তিনি শারীরিক অসুস্থতায় ভুগছিলেন। 

উত্তর কলকাতার পাইকপাড়ার বাসিন্দা উপেন তরফদারের জন্ম বাংলাদেশের মানিকগঞ্জের নালীগ্রামে। ১৯৫৪ সালে আকাশবাণীতে যোগ দেন তিনি। সে বছরই আকাশবাণীর 'স্থানীয় সংবাদ' বুলেটিনের সূচনা। সেই থেকে ১৯৮৬ সাল পর্যন্ত কলকাতার আকাশবাণী ছিল তার কর্মস্থল। এই পর্বে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের নানা ঘটনাবলি, প্রখ্যাত মানুষদের সাক্ষাৎকার শ্রোতাদের কাছে তুলে ধরেছিলেন তিনি। যা মুক্তিযোদ্ধাদের প্রেরণা যুগিয়েছিল। 

মূলত তার মেধা পরিশ্রম এবং আন্তরিকতার কারণে 'সংবাদ বিচিত্রা' বাংলার ঘরে ঘরে জনপ্রিয়তা লাভ করেছিল। মুক্তিযুদ্ধের সংবাদ পরিবেশন করে শ্রোতাদের কাছে তৎকালীন আকাশবাণী কলকাতার যে কয়জনের নাম সর্বাধিক পরিচিত, তাদের মধ্যে দেবদুলাল ব্যানার্জি এবং প্রণবেশ সেন আগেই প্রয়াত হয়েছেন। এবার না ফেরার দেশে চলে গেলেন উপেন তরফদারও। পদোন্নতির কারণে উত্তর প্রদেশ, শিলিগুড়ি, কলকাতা দূরদর্শনে বেশ কিছুকাল সময় কাটিয়ে ১৯৯৪ সালে অবসর নেন তিনি।
 
মুক্তিযুদ্ধের সংবাদ সৈনিক হিসেবে ২০১২ সালে বাংলাদেশের ৪০তম স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে তাকে বিশেষ সম্মান জানায় বাংলাদেশ সরকার। মুক্তিযুদ্ধের ওপর তার লেখা বইও শিক্ষিত মহলে যথেষ্ট প্রশংসা কুড়িয়েছিল। উপেন তরফদারের মরদেহ চিকিৎসা গবেষণার জন্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের হাতে তুলে দেওয়া হবে বলে জানা গেছে। বুধবার সকাল বেলায় হাসপাতাল থেকে তার মরদেহ নিয়ে আসা হয় কলকাতার আকাশবাণী কার্যালয়ে। সেখানে কলকাতা বাংলাদেশ উপ-হাইকমিশন তৌফিক হাসানসহ বিশিষ্টরা শ্রদ্ধা জানান। 

তার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। এক শোকবার্তায় মমতা জানান, ‘আকাশবাণী কলকাতার 'সংবাদ বিচিত্রা'র প্রযোজক উপেন তরফদারের প্রয়াণে আমি গভীর শোক প্রকাশ করছি। ভারত-বাংলাদেশ যুদ্ধের সময় তার প্রযোজিত 'সংবাদ বিচিত্রা' বিশেষ জনপ্রিয়তা অর্জন করে । মুক্তিযুদ্ধের অভিজ্ঞতাসমৃদ্ধ তার  'একাত্তরের উত্তাল দিনগুলি' গ্রন্থ বাংলাদেশ থেকে প্রকাশিত হয়। তিনি কলকাতা দূরদর্শনেও উচ্চ পদে দায়িত্ব পালন করেছেন। তার মৃত্যু সাংবাদিকতা জগতের এক অপূরণীয় ক্ষতি। আমি উপেন তরফদারের পরিবার-পরিজন ও অনুরাগীদের প্রতি আন্তরিক সমবেদনা জানাচ্ছি।’ উপেন তরফদারের প্রয়াণে শোক জ্ঞাপন করেছেন রাজ্যটির রাজ্যপাল ধনকার। 

তৌফিক হাসান জানান, ‘আমরা ভারতের প্রখ্যাত সাংবাদিক ওপেন তরফদারের মৃত্যুতে গভীর শোক জানাচ্ছি। তার পরিবারকে গভীর সমবেদনা জানাচ্ছি। তিনি ছিলেন বাংলাদেশের প্রকৃত বন্ধু। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি রেডিও থেকে সংবাদ বিচিত্রা অনুষ্ঠান প্রযোজনা করতেন। এর মাধ্যমে বাংলাদেশের বিভিন্ন বিষয়গুলো তুলে ধরেছিলেন, যে কারণে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে একটি জনমত গড়ে ওঠে, এই অনুষ্ঠানটি ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়। তার লিখিত বই 'একাত্তরের উত্তাল দিনগুলি'তে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে তুলে ধরেছেন তিনি, যে কারণে বাংলাদেশ সরকার ২০১২ সালে ফ্রেন্ডস অব লিবেরেশন ওয়ার সম্মাননা প্রদান করে।’

মিশনের (প্রেস) সচিব মোফাককারুল ইকবাল জানান, ‘বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ভারতের যে কজন সাংবাদিক অসামান্য অবদান রেখেছেন তার মধ্যে উপেন তরফদার একজন। তখন টেলিভিশন ছিল না আকাশবাণী ছিল প্রধান ভরসা। উনি টেপ রেকর্ডার নিয়ে ঘুরতেন এবং তথ্য সংগ্রহ করে বিচিত্রার মাধ্যমে মানুষের কাছে পৌঁছে দিতেন। বাণীতে বঙ্গবন্ধুর বক্তৃতাসহ যে সমস্ত কালজয়ী গান ছিল সেগুলো প্রচার করতেন। তার কারণেই মুক্তিযুদ্ধ অন্য একটা মাত্রা পেয়েছিলো। আমি প্রয়াত উপেন তরফদারের মাগফিরাত কামনা করছি।’

বিডি-প্রতিদিন/শফিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর