নাগরিকত্ব আইনের সমর্থনে আগামীকাল রবিবার কলকাতায় জনসভা করবেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। রবিবার কলকাতার শহীদ মিনার ময়দানে সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ)-এর সমর্থনেই এই সভা বলে বিজেপির তরফে জানানো হয়েছে।
গত বছরের ডিসেম্বর মাসে সংসদে সর্বসম্মতিতে পাশ হওয়ার পর বিলটি আইনে পরিণত হয়। বিলের উদ্দেশ্য হল বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফগানিস্তান থেকে নির্যাতিত হয়ে ভারতে আসা অমুসলিম (হিন্দু, শিখ, খ্রিষ্টান, জৈন, বৌদ্ধ, পার্সি) মানুষদের ভারতীয় নাগরিকত্ব দেওয়া হবে। কিন্তু ধর্মের ভিত্তিতে হওয়া এই নাগরিকত্ব আইনের বিরোধিতা করেছে কংগ্রেস, তৃণমূল, সিপিআইএমসহ বিজেপি বিরোধী দলগুলো।
তৃণমূল নেত্রী মমতা ব্যানার্জি এই আইন প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে বলেছেন, তারা কোনোভাবেই এই আইন সমর্থন করেন না। এই আইনের প্রতিবাদে গত ডিসেম্বর থেকে গোটা দেশজুড়ে বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ ছড়িয়ে পড়ে।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, শত বিরোধীতা সত্ত্বেও নতুন নাগরিকত্ব আইন কোনোভাবেই প্রত্যাহার করা হবে না। এই আইন নিয়ে বিরোধীরা মানুষকে ভুল বোঝাচ্ছে বলেও মন্তব্য করেছিলেন কেন্দ্রের দুই শীর্ষ মন্ত্রী।
সিএএ, এনআরসি’এর সমর্থনে এর আগে অক্টোবরে কলকাতার নেতাজী ইন্ডোর স্টেডিয়ামে সভা করেছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। এবার সেই পথে হেঁটেই কলকাতায় ফের সভা করতে চলেছেন তিনি। রাজ্যের নেতারাও চাইছেন নতুন এই নাগরিকত্ব আইন নিয়ে মানুষের মধ্যে থেকে বিভ্রান্তি দূর করতে কিছু বার্তা দেওয়া হোক। বিজেপি সূত্রে খবর রবিবার দুপুরে শহীদ মিনারের সভায় বাংলাদেশি হিন্দু শরণার্থীদের নাগরিকত্ব দেওয়া হতে পারে।
এই সভা থেকে আগামী এপ্রিল মাসে পৌরসভার নির্বাচন এবং আগামী ২০২১ সালে বিধানসভার নির্বাচনকে সামনে রেখে দলীয় কর্মী-সমর্থকদের বার্তা দেবেন বলেও মনে করা হচ্ছে। সেইসাথে তৃণমূল কংগ্রেস সরকারের আমলে রাজ্যের রাজনৈতিক সহিংসতা, দলীয় কর্মীদের ওপর নির্যাতন, সিন্ডিকেটসহ একাধিক ইস্যুও তুলে দলীয় কর্মীদের মনোবল চাঙ্গা করার টিপস দিতে পারেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
ইতোমধ্যেই গোটা শহীদ মিনার ময়দান দলীয় পতাকা, অমিত শাহ-নরেন্দ্র মোদির কাটআউটে ছেয়ে গেছে। সিএএ’এর সমর্থনে বিভিন্ন এলাকায় পোস্টারও পড়েছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সভার জন্য ময়দানে প্রধান মঞ্চটি অ্যালুমিনিয়াম হ্যাঙার, প্লাই, বাঁশ দিয়ে দুইটি মঞ্চ বানানো হচ্ছে। ময়দানে উপস্থিত দর্শকদের সুবিধার জন্য ছয়টি বিশাল আকারে জায়ান্ট স্ক্রিন বসানো হচ্ছে।
অমিত শাহ ছাড়াও কলকাতায় জনসভাতে উপস্থিত থাকবেন বিজেপি সর্বভারতীয় সভাপতি জে.পি.নাড্ডা, দলের রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষসহ সাংসদ, বিধায়ক ও শীর্ষ নেতারা। অমিত শাহের সভার সফলতা নিয়ে বেশ আশাবাদী রাজ্য বিজেপি নেতারা।
দিলীপ ঘোষ জানান, আমাদের আশা এই জনসভায় এক লাখ মানুষের সমাগম হবে।
একদিনের সংক্ষিপ্ত সফরে রবিবার সকাল ১১ টা নাগাদ দিল্লি থেকে কলকাতায় পৌঁছনোর কথা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর। সেখান থেকে রাজারহাটে দেশটির এলিট ফোর্স ‘ন্যাশনাল সিকিউরিটি গার্ড’ (এনএসজি) এর একটি বিশেষ অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন তিনি। দুপুর আড়াইটা নাগাদ ধর্মতলায় শহীদ মিনার ময়দানে যাবেন অমিত শাহ। জনসভা শেষ করেই কালীঘাটের কালি মন্দিরে পূজা দিতে যাবেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। এছাড়াও সন্ধ্যায় নিউটাউনে এক তারকা হোটেলে দলীয় সাংসদ, বিধায়ক ও কার্যকর্তাদের সাথে বৈঠক করবেন অমিত শাহ।
ওই বৈঠকে সিএএ এবং রাজ্যের সাংগঠনের অবস্থা নিয়ে আলোচনা হবে। সবশেষে রাতেই দিল্লি ফিরে যাওয়ার কথা অমিত শাহের।
বিডি-প্রতিদিন/বাজিত হোসেন