প্রায় এক বছর পর সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ) ইস্যুতে ফের উত্তপ্ত হয়ে উঠল ভারতের আসাম রাজ্য। গত শুক্রবারের পর শনিবারও রাজ্যটির একাধিক জায়গায় এই আইনবিরোধী বিক্ষোভ, মিছিল, সভা অনুষ্ঠিত হয়। আগামী বছরের গোড়ার দিকে (মার্চ-এপ্রিল) রাজ্যটিতে বিধানসভার নির্বাচন। তার আগে এই ইস্যুতে উত্তপ্ত হয়ে উঠল আসাম।
গত বছরের ডিসেম্বরেই ভারতের সংসদে পাস হয় সংশোধিত নাগরিকত্ব বিল (সিএবি)। এরপর রাষ্ট্রপতির স্বাক্ষরের পর তা আইনে পরিণত হয়ে নাম হয় সিএএ। ওই আইনে বলা হয়েছে ২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বরের আগে বাংলাদেশ, পাকিস্তান, আফগানিস্তান থেকে ধর্মীয় নির্যাতনের শিকার হয়ে ভারতে আসা অমুসলিম (হিন্দু, শিখ, পার্সি, জৈন, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান) নাগরিকদের নাগরিকত্ব দেওয়া হবে। কিন্তু ধর্মের ভিত্তিতে করা এই আইনের প্রতিবাদে উত্তাল হয় পুরো দেশ। দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়া সহিংসতায় একাধিক মানুষের মৃত্যু হয়। এর মধ্যে কেবল আসামেই সহিংস আন্দোলনে মৃত্যু হয় ৫ জনের। কিন্তু কোভিড-১৯ মহামারির কারণে সেই আন্দোলনে ভাটা পড়ে।
আসামসহ কয়েকটি রাজ্যের একাধিক গোষ্ঠীর অভিমত সিএএ বাস্তবায়ন হলে বাংলাদেশ থেকে অনুপ্রবেশের সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে- এতে ওই সংশ্লিষ্ট রাজ্যগুলোর নিজস্বতা (পরিচয়, সংস্কৃতি, ভাষা) নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
সিএএ ইস্যুতে আসামে নতুন করে যে আন্দোলন শুরু হয়েছে, তাতে ১৮টি সংগঠন যোগ দিয়েছেন। যার মধ্যে অন্যতম ‘নর্থ ইস্ট স্টুডেন্টস অর্গানাইজেশন’ (এনইএসও), ‘অল আসাম স্টুডেনন্টস ইউনিয়ন’ (আসু), ‘আসাম জাতীয়তাবাদী যুব ছাত্র পরিষদ’ (এজেওয়াইসিপি), ‘কৃষক মুক্তি সংগ্রাম সমিতি’ (কেএমএসএস), লচিত সেনা প্রমুখ।
গত বছরের ১১ ডিসেম্বর রাজ্যসভায় এই বিল পাসের পর আসামে ওই দিনটি কালা দিবস হিসেবে পালন করে অল স্টুডেন্টস অর্গানাইজেশন। এক বছর পর গত ১১ ডিসেম্বর আসামে এই দিনটিকে কালা দিবস হিসেবে পালন করা হয়।
এ ব্যাপারে এনইএসও’এর মুখ্য পরামর্শদাতা সমুজ্জ্বল ভট্টাচার্য জানান ‘কোনোভাবেই আমরা সিএএ’কে স্বাগত জানাব না। গত বছরের ১১ ডিসেম্বর রাজ্যের প্রতিটি অঞ্চলে কালা দিবস পালন করেছিল এনইএসও। এ বছরও ওই দিনটাতে আগের বছরের মতোই একইভাবে দিনটি পালন করা হয়েছে।’
কেএমএসএস নামের অন্য একটি সংগঠনের তরফেও গত বৃহস্পতিবার থেকে রাজ্যজুড়ে প্রতিবাদ শুরু করেছে। শুক্রবার ও শনিবার শিবসাগরে তারা বিক্ষোভ সমাবেশ করে।
সিএএবিরোধী সহিংসতা বিক্ষোভে মদদ দেওয়ার অভিযোগে গত বছরের ১২ ডিসেম্বর গ্রেফতার হয় কেএমএসএস’এর প্রতিষ্ঠাতা অখিল গগৈ। সেই থেকে এখনও কারাগারে বন্দি অখিল। তার মুক্তির দাবিতেও সোচ্চার হয় কেএমএসএস।
সিএএ’এর প্রতিবাদে ছাত্র সংগঠন আসুর পক্ষ থেকে গত শুক্রবার ‘গণ হুঙ্কার’ এর ডাক দেওয়া হয়েছিল। সেই সাথে টর্চ নিয়েও র্যালি করে তারা।
আন্দোলনকারী নেতৃত্বের বক্তব্য আগামী নির্বাচনে আসামের বিজেপি নেতৃত্বাধীন সরকারকে রাজ্যের মানুষ উচিত জবাব দেবে।
আসুর সভাপতি দীপঙ্কর কুমার নাথ ও সাধারণ সম্পাদক শঙ্করজ্যোতি বরুড়া’র স্বাক্ষর করা এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে ‘কেন্দ্রীয় সরকারের উচিত আসামবিরোধী আইন প্রত্যহার করা, যেখানে নিরপরাধ শিক্ষার্থীসহ ৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। নিহতদের পরিবার ও আসু ওই ঘটনার ন্যায়বিচার চায়।’
বিডি প্রতিদিন/জুনাইদ আহমেদ