আগামী বুধবার (৫ মে) তৃতীয়বারের মতো পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিতে চলেছেন তৃণমূল কংগ্রেসের নেত্রী মমতা ব্যানার্জি। পরদিন ৬ মে থেকে জয়ী দলের অন্য বিধায়করা শপথ নেবেন। সোমবার এই কথা জানিয়েছেন দলের মহাসচিব পার্থ চ্যাটার্জি।
রবিবার পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার নির্বাচনে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে জয়ের পরই নতুন সরকার গঠনের তোড়জোড় শুরু হয়। ফল প্রকাশের ২৪ ঘণ্টা পরই সোমবার বিকালে তৃণমূল ভবনে দলের নবনির্বাচিত বিধায়কদের সাথে বৈঠক করেন মমতা। সেখানেই নবনির্বাচিত বিধায়ক ও দলের শীর্ষ নেতৃত্বের সাথে বৈঠকে শপথ গ্রহণের দিন স্থির হয়। এই বৈঠকে মমতা ব্যানার্জিকে বিধানসভার পরিষদীয় দলের দলনেত্রী হিসেবে নির্বাচিত করা হয়।
এ ব্যপারে পার্থ চ্যাটার্জি বলেন, ‘নির্বাচিত প্রতিনিধিদের বৈঠক হয়েছে। নির্বাচিত প্রতিনিধিরা সর্বসম্মতিভাবেই মমতা ব্যানার্জিকে সর্বভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেসের পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার পরিষদীয় দলের নেত্রী নির্বাচিত করেছেন। হুইল চেয়ারে বসে বাংলার মানুষকে রক্ষা করার জন্য তিনি যেভাবে সংগ্রাম চালিয়েছেন, তাই তার প্রতি আমরা কৃতজ্ঞতা ও অভিনন্দন প্রকাশ করেছি।’
তিনি আরও জানান, ‘আমরা চাই আগামী ৫ মে মমতা ব্যানার্জি শপথ গ্রহণ করুন। পরদিন ৬ মে থেকে তৃণমূলের সমস্ত নবনির্বাচিত বিধায়কদের শপথগ্রহণ করাবেন প্রোটেম স্পিকার হিসেবে নির্বাচিত বিমান ব্যানার্জি। পরে সমস্ত নিয়মনীতি মেনেই বিমান ব্যানার্জিকে বিধানসভার স্পিকার পদে বসানো হতে পারে বলেও এদিন আভাস দিয়েছেন পার্থ চ্যাটার্জি। তবে নতুন মন্ত্রিসভায় কাদের রাখা হবে সে ব্যাপারে এদিনের বৈঠকে কোনো কিছু স্থির হয়নি। এ ব্যাপারে পার্থ চ্যাটার্জি জানান, ‘দলনেত্রীই নিজেই বিষয়টি ঠিক করবেন।’
এদিনের বৈঠকে নবনির্বাচিত বিধায়কদের নিজের নিজের এলাকায় ভালভাবে কাজ করা, মানুষের সমস্যা যথাযথভাবে মেটানোর নির্দেশ দিয়েছেন মমতা। এদিন সন্ধ্যা ৭টায় রাজভবনে গিয়ে রাজ্যটির রাজ্যপাল জগদীপ ধনকারের সাথেও দেখা করবেন মমতা ব্যানার্জি। রাজ্যপালের সাথে দেখা করে নতুন সরকার গঠনের জন্য দাবি জানাবেন মমতা।
রবিবার গণনার পরই তৃণমূলের জয়ে অভিনন্দন জানিয়ে টুইট করেন রাজ্যপাল। তিনি লেখেন, ‘পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার নির্বাচনে মমতার দল তৃণমূলের জয়ে অভিনন্দন জানাই। আগামীকাল (৩ মে) সন্ধ্যা ৭টায় রাজভবনে মুখ্যমন্ত্রীকে সাক্ষাতের আমন্ত্রণ জানানো হলো।’
নির্বাচনে জয়ের পরই মমতা জানিয়েছিলেন যে করোনার কথা মাথায় রেখে শপথগ্রহণ অনুষ্ঠান খুব ছোট করে হবে। এমনকি সোমবার বিকালেও কালীঘাটে সাংবাদিকদের সামনে মমতা বলেন, মুখ্যমন্ত্রী পদে শপথ নেওয়ার পর তার সরকারের প্রধান কাজ হবে রাজ্যে করোনা পরিস্থিতির মোকাবিলা করা।
একুশের নির্বাচনে বিপুল জয়ের পর থেকে মমতাকে টেলিফোন করে অভিনন্দন জানিয়েছেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল, মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী উদ্ধব ঠাকরে, পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী ক্যাপ্টেন অমরিন্দর সিং, হরিয়ানার বিরোধী দলনেতা কংগ্রেসের ভুপিন্দর সিং হুদা, জম্মুকাশ্মীরের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লা, অভিনেতা রজনীকান্তসহ দেশের একাধিক নেতানেত্রী। এছাড়াও টুইট করে তাকে জয়ের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি থেকে শুরু করে কংগ্রেস সাংসদ রাহুল গান্ধী, সমাজবাদী পার্টি নেতা অখিলেশ যাদব প্রমুখ।
রবিবার রাজ্যটির ২৯৪টি আসনের মধ্যে ২৯২টি আসনের ফল ঘোষণা হয়। তৃণমূল পায় ২১৩টি আসন, ৭৭ আসনে জয় পায় বিজেপি, ১টি আসনে জয় পায় সংযুক্ত মোর্চার আইএসএফ প্রার্থী, অন্যরা ১টি। ৩৪ বছর ধরে রাজ্যে সরকার চালানো বামফ্রন্ট বা শতবর্ষ প্রাচীন কংগ্রেস- উভয়কেই খালি হাতেই ফিরতে হয়। সেই অর্থে এই প্রথম বিধানসভায় কোনো প্রতিনিধিই থাকছে না এই দুই দলের।
বিডি-প্রতিদিন/বাজিত হোসেন/এমআই