পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির শপথগ্রহণ অনুষ্ঠান নিয়ে রাজভবন-বিধানসভার মধ্যে টানাপোড়েন শুরু হয়েছে। রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড় মুখ্যমন্ত্রীকে নিজে শপথবাক্য পাঠ করাতে চান। কিন্তু এ ক্ষেত্রে বিস্তর আপত্তি রয়েছে স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় ও পরিষদীয় মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের। উভয়েই ঘনিষ্ঠ মহলে জানিয়ে দিয়েছেন, রাজভবনে শপথগ্রহণ অনুষ্ঠান হলে তারা যাবেন না। তাই মুখ্যমন্ত্রীর শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানের তারিখ এখনো চূড়ান্ত হয়নি। যদিও শোনা যাচ্ছে, ৭ অক্টোবর, বৃহস্পতিবার বিধায়ক হিসেবে শপথ নিতে পারেন মমতা। খবর আনন্দবাজার পত্রিকার।
বিধানসভা সূত্রে খবর, গত সপ্তাহে রাজভবন থেকে একটি বার্তা এসেছে বিধানসভার সচিবালয়ে। সেই বার্তায় বলা হয়েছে, এরপর থেকে নির্বাচিত বিধায়কদের শপথবাক্য পাঠ করাবেন রাজ্যপাল। কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে, সাংবিধানিকভাবে লোকসভার ক্ষেত্রে সাংসদদের শপথগ্রহণ করানোর দায়িত্ব দেশের রাষ্ট্রপতির। রাজ্য বিধানসভার ক্ষেত্রে সেই দায়িত্ব পান রাজ্যের রাজ্যপাল। কিন্তু, প্রায় সব ক্ষেত্রেই সাংসদ, বিধায়কদের শপথগ্রহণের দায়িত্ব রাষ্ট্রপতি বা রাজ্যপাল দিয়ে দেন তার মনোনীত ব্যক্তিকে। তাই লোকসভা বা রাজ্যসভার নির্বাচনে জয়ী হলে সাধারণত সাংসদদের শপথবাক্য পাঠ করান প্রোটেম স্পিকার। স্পিকার নির্বাচন হয়ে গেলে, লোকসভার ক্ষেত্রে সেই দায়িত্ব দেওয়া হয় স্পিকারকে। বিধানসভার ক্ষেত্রে রাজ্যপাল সেই দায়িত্ব দেন সংশ্লিষ্ট বিধানসভার স্পিকারকে। এ ক্ষেত্রে স্পিকারদের সেই ক্ষমতা দেন রাষ্ট্রপতি বা রাজ্যপাল। রাজভবন সূত্রে খবর, রাজ্যপালের দেওয়া সেই ক্ষমতা এবার প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে।
রাজভবন থেকে বিধানসভায় পাঠানো বার্তায় জানানো হয়েছে, সংবিধানের ১৮৮ ধারা অনুযায়ী শপথগ্রহণ নিয়ে রাজ্যপাল এতদিন যে অধিকার স্পিকারকে দিয়েছিলেন, তা ফিরিয়ে নেওয়া হবে। ঘটনাচক্রে, দশকের পর দশক ধরেই পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপালরা এই দায়িত্ব স্পিকারকে দিয়ে রেখেছিলেন। সেই অধিকারই আইন বলে ফিরিয়ে নিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল। এই আবহে স্পিকার বিমান ও পার্থ মুখ্যমন্ত্রীর শপথ রাজভবনে হতে দিতে নারাজ। আগামী বুধবার মহালয়ার দিন থেকে পূঁজার মেজাজে চলে যাবে গোটা রাজ্য। তাই তিন বিধায়কের শপথ কবে হবে তা এখনো ঠিক হয়নি। এ ক্ষেত্রে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর বক্তব্য, ‘‘রাজ্যপাল যথার্থভাবেই নিজের ক্ষমতার ব্যবহার করেছেন।’’ যদিও তৃণমূল শিবির তেমনটা মনে করছে না।
এদিকে হিন্দুস্তান টাইমসের খবরে বলা হয়েছে, আগামী বৃহস্পতিবার বিধানসভায় শপথ নিতে চলেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। সেই শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়কে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। এমনটাই জানালেন পশ্চিমবঙ্গের পরিষদীয় মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়।
ভারতের পশ্চিমবঙ্গে মুখ্যমন্ত্রিত্ব টিকিয়ে রাখতে ভবানীপুর আসনে উপনির্বাচনে জয়ের বিকল্প ছিল না মমতা ব্যানার্জির। কিন্তু সেখানে তিনি বিশাল ব্যবধানে জয় পেয়েছেন। বিজেপি প্রার্থী প্রিয়াঙ্কা টিবরেওয়ালকে ৫৮ হাজার ৮৩৫ ভোটে হারিয়েছেন তিনি। এর আগে তার সবচেয়ে বড় জয় ছিল ২০১১ উপনির্বাচনে, ব্যবধান ৫৪ হাজার ২১৩।
গত এপ্রিলের ভোটে নিজের দল ২১৩টি আসন পেলেও নিজে নন্দীগ্রাম কেন্দ্রে দাঁড়িয়ে হেরে যান। সেই পরাজয় শুধু মমতা নয়, দলের কাছেও দুঃস্বপ্ন হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু ভবানীপুরের ‘মিনি ভারত’ ভুলিয়ে দিল সেই পরাজয়।
বিডি প্রতিদিন/জুনাইদ আহমেদ