কলকাতাসহ গোটা পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য জুড়ে কোভিড-১৯ সংক্রমণ বাড়ছে। সেই সাথে বাড়ছে করোনার নতুন ধরন ওমিক্রনে সংক্রমণের সংখ্যাও। এই পরিস্থিতিতে ফের একবার কড়া বিধিনিষেধ চালু করল পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকার। সেক্ষেত্রে স্কুল-কলেজসহ সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ফের বন্ধ করা হয়েছে, লোকাল ট্রেনের সময়সীমাও বেঁধে দেওয়া হয়েছে। সেইসাথে বিভিন্ন ধরনের অনুষ্ঠান করার ক্ষেত্রেও লাগাম টানা হয়েছে। জারি করা হয়েছে ‘নাইট কারফিউ’।
রবিবার রাজ্য সরকারের সচিবালয় নবান্নে করোনা সম্পর্কিত এক গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকের পর সংবাদ সম্মেলন করে এই নতুন নির্দেশিকা জানান মুখ্যসচিব এইচ. কে. দ্বিবেদী। সেক্ষেত্রে আগামীকাল (৩ জানুয়ারী) সোমবার থেকে রাজ্য জুড়েই এই বিধিনিষেধ চালু হচ্ছে। আর তা বহাল থাকবে আগামী ১৫ জানুয়ারী পর্যন্ত। এরপর পরিবর্তিত পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, সোমবার থেকেই স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়গুলি বন্ধ থাকবে। কেবলমাত্র ৫০ শতাংশ জনবল নিয়ে প্রশাসনিক কাজ চলতে পারে। সমস্ত সরকারি ও বেসরকারি অফিস, প্রতিষ্ঠানগুলিতে ৫০ শতাংশ কর্মী উপস্থিতি নিয়ে খোলা থাকবে এবং ‘ওয়ার্ক ফ্রম হোম’এর ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। সমস্ত সুইমিং পুল, স্পা, জিম, বিউটি পার্লার, সেলুন, বিনোদনমূলক পার্ক, চিড়িয়াখানা, পর্যটন স্থল বন্ধ থাকবে। শপিং মল, মার্কেট কমপ্লেক্স, রেস্তোরা, বার, থিয়েটার হল, সিনেমা হল গুলিতে ৫০ শতাংশ মানুষের উপস্থিতি নিয়ে রাত ১০ টা পর্যন্ত খোলা থাকবে।
লোকাল ট্রেনে ৫০ শতাংশ যাত্রী নিয়ে যাতায়াত করবে। তবে সন্ধ্যা ৭ টার পর বন্ধ থাকবে লোকাল ট্রেন। তবে ৫০ শতাংশ যাত্রী নিয়ে নির্ধারিত সময় অনুযায়ী মেট্রো চলাচল করবে। যে কোনো ধরনের মিটিং, কনফারেন্সে ৫০ শতাংশ উপস্থিতি নিয়ে চলতে পারবে। তবে বিবাহ অনুষ্ঠান বা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান সংক্ষিপ্ত আকারে করার কথা বলা হয়েছে, সেখানে কোনমতেই ৫০ জনের বেশি মানুষের জমায়েত থাকবে না। অন্তেষ্টিক্রিয়াতে সর্বাধিক ২০ জন উপস্থিত থাকতে পারবে। কোভিড স্বাস্থ্যবিধি মেনে যে কোন সাংস্কৃতিক, সামাজিক ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানেও ৫০ শতাংশ মানুষ নিয়ে করার কথা বলা হয়েছে। কারখানা, শিল্প, চা বাগান সহ অন্য প্রতিষ্ঠানগুলিতে কোভিড বিধি মেনে অর্থাৎ মাস্ক ও স্যানিটাইজাইশেন ব্যবহা এবং করোনার দুইটি টিকা নেওয়া কর্মীদের কাজ করার কথা বলা হয়েছে।
রাত ১০ টা থেকে পরদিন ভোর ৫ টা পর্যন্ত নাইট কার্ফু চালু থাকছে। যদিও জরুরী পরিষেবার ক্ষেত্রে ছাড় দেওয়া হয়েছে। কোভিড বিধি মেনে হোম ডেলিভারিও করা যাবে। সপ্তাহে দুই দিন (সোমবার, শুক্রবার) দিল্লি ও মুম্বাই থেকে কলকাতা বিমান চলাচল করবে। যদিও আগেই যুক্তরাজ্য-কলকাতা বিমান পরিষেবা বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে রাজ্য সরকার।
এর পাশাপাশি রাজ্য সরকারের একাধিক কর্মসূচিও আপাতত স্থগিত রাখা হয়েছে। তার মধ্যে অন্যতম ‘দুয়ারে সরকার’ কর্মসূচি। রবিবার থেকেই এই কর্মসূচি শুরু হওয়ার কথা ছিল কিন্তু এক মাস পিছিয়ে আগামী ১ ফেব্রুয়ারী থেকে তা ফের চালু করার কথা বলা হয়েছে।
মুখ্যসচিব এদিন কার্যত স্বীকার করে নিয়েছেন যে ক্রিসমাস ও ইংরেজি নতুন বছরে কোভিড বিধিতে খানিকটা ছাড় থাকায় পরিস্থিতি কিছুটা উদ্বেগজনক হয়েছে। এই অবস্থায় ওমিক্রনের দাপট রুখতে আপাতত দুই সপ্তাহের কড়া বিধিনিষেধ চালু করল রাজ্য সরকার। করোনা সংক্রমণ রোধে নিয়মিত মাস্ক পরা, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার কথাও বলা হয়েছে।
উল্লেখ্য, শেষ কয়েক দিনে রাজ্যে অস্বাভাবিক হারে বেড়ে চলেছে কোভিড আক্রান্তের সংখ্যা। শনিবার একদিনে নতুন করে আক্রান্তের সংখ্যা ৪৫১২ জন, এর মধ্যে কলকাতা শহরেই সংক্রমিত ২৩৯৮।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল