পশ্চিমবঙ্গের পুরনিগম (মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশন) নির্বাচনে তৃণমূলের জয় অব্যাহত। রাজ্যটির বিধাননগর, আসানসোল, চন্দননগর এবং শিলিগুড়ি- এই চারটি পুরনিগম নির্বাচনের চারটিতেই জয় পেয়েছে ক্ষমতাসীন দল তৃণমূল কংগ্রেস। এর মধ্যে ২৭ বছরে এই প্রথমবার শিলিগুড়িতে পুরবোর্ড গঠন করল তৃণমূল কংগ্রেস।
গত শনিবার রাজ্যটির এই চার পুরনিগমে ভোট নেওয়া হয়। সোমবার ছিল তার গণনা। এজন্য প্রতিটি পুরনিগমের জন্য আলাদা আলাদা গণনা কেন্দ্রও নির্দিষ্ট ছিল। এই চার পুরনিগমের ২২৬টি ওয়ার্ডের জন্য সকাল ৮টা থেকে শুরু হয় ভোট গণনা। ভাগ্য নির্ধারণ হয়েছে ওই চার পুরনিগমের সাড়ে নয়শতাধিক প্রার্থীর।
প্রথমে ইলেকশন ডিউটি ভোট অর্থাৎ ভোটকর্মীদের ভোট গণনা হয়, এরপর শুরু হয় ইভিএম গণনা। ফলাফল কে কেন্দ্র করে যাতে কোনরকম বিশৃঙ্খলা বা অপ্রীতিকর ঘটনা তৈরি না হয়, সেদিকে লক্ষ্য রেখে গণনা কেন্দ্রের বাইরে ত্রিস্তরীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা মোতায়েন করা হয়। গণনা কেন্দ্রে ২০০ মিটারের মধ্যে জারি ছিল ১৪৪ ধারা।
এই নির্বাচনের সকলের নজর ছিল বামেদের গড় বলে পরিচিত শিলিগুড়ি পুরনিগমের দিকে। ২৭ বছরে এই প্রথমবার এককভাবে তৃণমূল বোর্ড গঠন করতে চলেছে। গত ১৯৯৪ সালে শিলিগুড়ি পুরনিগম গঠন হয়। এরপর থেকে বামেদের হাতেই ছিল এই পুরবোর্ডের ক্ষমতা। এখানে ৪৭ টি ওয়ার্ডের মধ্যে তৃণমূল জয় পায় ৩৭ টি ওয়ার্ডে, ৫ টি ওয়ার্ডে জয় পেয়ে দ্বিতীয় স্থানে বিজেপি, বামফ্রন্ট ৪ এবং অন্যরা ১টি ওয়ার্ডে জয় পায়।
তৃণমূলের হয়ে জয় পেয়েছেন সাবেক মন্ত্রী গৌতম দেব, আর জয়ী হয়েই আনন্দে আত্মহারা হয়ে গান গাইলেন গৌতম দেব। তিনি জানান ‘এতদিনে জয়ের একটা বৃত্ত সম্পূর্ণ হল।’ ইতিমধ্যেই শিলিগুড়ি পুরনিগমের পরবর্তী মেয়র হিসাবে মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি গৌতম দেবের নাম প্রস্তাব করেছেন। যদিও সিপিআইএমের টিকিটে প্রার্থী হয়ে পরাজিত হয়েছেন এই পুরনিগমের সাবেক চেয়ারম্যান অশোক ভট্টাচার্য। আর তার এই পরাজয় নি:সন্দেহে রাজনৈতিক ভাবে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ অশোক ভট্টাচার্য কেবলমাত্র একজন প্রার্থীই ছিলেন না, ২০১১ সালে রাজ্যে ক্ষমতা বদলের পর বামেদের ঘুরে দাঁড়ানোর লড়াইয়ের প্রধান মুখ ছিলেন এই সিনিয়র বাম নেতা। সেক্ষেত্রে তার এই হার বামেদের কাছে বড় ধাক্কা। তাই তো নিজের হার স্বীকার করে নিয়ে তিনি বলেন ‘মানুষের কাছে বামেদের গ্রহণযোগ্যতা কমেছে। বামেরা মানুষের সমর্থন পাচ্ছে না।’
নজর ছিল কলকাতার কাছেই বিধাননগর পুরনিগমের দিকেও। এখানে ৪১ ওয়ার্ডের মধ্যে ৩৯ টিতে জয় পায় তৃণমূল। কংগ্রেস ও অন্যরা ১ টি করে ওয়ার্ডে জয়ী হয়। জয়ী প্রার্থীদের মধ্যে অন্যতম বিদায়ী মেয়র তৃণমূলের কৃষ্ণা চক্রবর্তী, তৃণমূলের সাবেক বিধায়ক সব্যসাচী দত্ত, তৃণমূল প্রার্থী দেবরাজ চক্রবর্তী (সম্পর্কে তৃণমূল বিধায়ক ও গায়িকা অদিতি মুন্সির স্বামী)। এই পুরো নিগমে ভোট শতাংশের নিরিখে তৃণমূলের পরেই দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে বামেরা। জয়ের পরই কালীঘাটে মমতার বাড়িতে ছুটে যান কৃষ্ণা চক্রবর্তী ও সব্যসাচী দত্ত। কৃষ্ণা জানান ‘মানুষের সেবা করাই মূল লক্ষ্য। দল যা বলবে, তাই করবো।’ সব্যসাচী বলেন ‘আমি আমার দিদির বাড়িতে এসেছি। মমতাদিদিকে সামনে রেখেই চলি। যিনিই মেয়রের চেয়ারে বসুক না কেন, মমতা ব্যানার্জিই সিইও।’ এদিন সব্যসাচীর স্ত্রীকে একটি শাড়িও উপহার দেন মমতা। এর আগে দলের সাংসদ ও মমতার ভাতিজা অভিষেক ব্যানার্জির সাথেও দেখা করেন তারা।
চন্দননগর পুরনিগমের (৩৩ টি ওয়ার্ড) এর মধ্যে ৩২ টিতে ভোটগ্রহণ হয়। এরমধ্যে তৃণমূল একাই ৩১টি ওয়ার্ডে জয়ী হয়, ১ টি ওয়ার্ডে জয়লাভ করে বামফ্রন্ট।
আসানসোল (১০৬ টি ওয়ার্ড) পুরনিগমে তৃণমূল ৯১টি, বিজেপি ৭টি, কংগ্রেস ৩ টি, সিপিআইএম ২ টি, স্বতন্ত্র দল ৩ টি ওয়ার্ডে জয় পেয়েছে জয়ী প্রার্থীদের মধ্যে অন্যতম রাজ্যের মন্ত্রী মলয় ঘটকের ভাই সাবেক মেয়র পারিষদ অভিজিৎ ঘটক, সাবেক চেয়ারম্যান অমরনাথ চ্যাটার্জি, সাবেক বিধায়ক উজ্জ্বল চ্যাটার্জি প্রমুখ।
বিডি-প্রতিদিন/সালাহ উদ্দীন