ভারতের উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচনে পদপ্রার্থী চয়নেও এবার চমক দিল বিজেপি নেতৃত্বাধীন জাতীয় গণতান্ত্রিক মোর্চা (এনডিএ)। তাদের মনোনীত পদপ্রার্থী পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল তথা জগদীপ ধনকড়।
শনিবার দিল্লিতে বিজেপির সদর দপ্তরে সাংবাদিক বৈঠক করে ধনকড়ের নাম ঘোষণা করেন দলটির সর্বভারতীয় সভাপতি জয়প্রকাশ নাড্ডা। ধনকড়কে কৃষকের সন্তান বলে আখ্যায়িত করে নাড্ডা বলেন, ২০২২ সালের উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচনে ধনকড়কে আমরা এনডিএ প্রার্থী হিসেবে তুলে ধরছি। বিজেপি ও এনডিএ'র সদস্যরা উপরাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী হিসেবে জগদীপ ধনকড়-এর নাম প্রস্তাব করছে। আমরা সবাই জানি তিনি এখন পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল। গত ৩৯ বছর ধরে তিনি সামাজিক কাজ কর্মের সাথে যুক্ত। তিনি একজন কৃষক সন্তান। অনেক প্রতিবন্ধকতা জয় করে তিনি এই জায়গায় এসেছেন। দেশের সেবা করার বিষয়ে কোনদিন আপোষ করেননি। আমি আশা করব, দলমত নির্বিশেষে তিনি সকলের সমর্থন পাবেন।
শুক্রবারই দেশটির কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ’র সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন রাজ্যপাল ধনকড়। তার ঠিক ২৪ ঘণ্টার মধ্যে শনিবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গেও একান্ত বৈঠক করেন তিনি। এরপরই শুরু হয় জল্পনা। আর সেই জল্পনাতেই সিলমোহর দিল এনডিএ। সেক্ষেত্রে রাজনৈতিক বিশ্লেষণ এর অভিমত দেশটির জাঠ সম্প্রদায়ের কাছে বড় সদর্থক বার্তা দিতেই ধনকড়ের নাম মনোনয়ন করা হয়েছে।
চলতি সপ্তাহের শুরুতে পশ্চিমবঙ্গের দার্জিলিং রাজভবনে মমতা ব্যানার্জির সঙ্গে এক চা চক্রে যোগ দিয়েছিলেন জগদীপ ধনকড়। সেখানে উপস্থিত ছিলেন আসামের মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত বিশ্বশর্মাও। মনে করা হচ্ছে ওই বৈঠকেই মুখ্যমন্ত্রীর কাছে ধনকড়কে উপরাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী হওয়ার আগাম বার্তা পৌঁছে দেয়া হয়েছিল।
এদিকে উপরাষ্ট্রপতি পদে জগদীপ ধনকড়ের নাম ঘোষণা পরই তাকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। টুইট করে তিনি লেখেন, আমাদের দেশের সংবিধান সম্পর্কে তার অসম্ভব জ্ঞান রয়েছে। আমি নিশ্চিত যে রাজ্যসভার চেয়ারম্যান হিসেবে তিনি অসাধারণ দক্ষতা দেখাবেন এবং সঠিক পথে সংসদ পরিচালনা করবেন।
২০১৯ সালের ৩০ জুলাই পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল হওয়ার পর থেকেই বারবার খবরের শিরোনামে থেকেছেন ধনকড়। একাধিক ইস্যুতে মমতা ব্যানার্জীর সরকারের সঙ্গে তার সংঘাত হয়েছে। রাজ্য সরকারের বিভিন্ন কাজের সমালোচনা করেছেন তিনি। সিন্ডিকেট, মাফিয়া, আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়েও বারে বারে রাজ্য সরকারকে নিশানা করেছেন। উল্টোদিকে ধনকড়কেও বিজেপির মুখপাত্র হিসেবে কটাক্ষ করতে ছাড়েনি ক্ষমতাসীন দল তৃণমূল কংগ্রেসের শীর্ষ নেতারা।
উল্লেখ্য, ভারতের উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচন একটু ভিন্ন ধরনের। দেশটির সাধারণ মানুষ উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচনে ভোট দেয় না। সংসদের উভয় কক্ষের (রাজ্যসভা ও লোকসভা) নির্বাচিত ও মনোনীত সংসদ সদস্যদের দ্বারা উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন।
উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচন হবে আগামী ৬ আগস্ট। এই নির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার শেষ দিন আগামী ১৯ জুলাই। উপরাষ্ট্রপতির কার্যকালের মেয়াদ পাঁচ বছর।
ইতিমধ্যেই দেশটির রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে চমক দিয়ে এনডিএ’র মনোনীত পদপ্রার্থী হয়েছেন আদিবাসী নেত্রী দ্রৌপদী মুর্মু। আগামী ১৮ জুলাই রাষ্ট্রপতি নির্বাচন। ইতিমধ্যেই এই নির্বাচনে লড়তে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন দ্রৌপদী। তারপর থেকেই সমর্থন চাইতে বিভিন্ন রাজ্য সফরে প্রচারণার কাজ সারছেন তিনি।
বিডি-প্রতিদিন/শফিক