রাজ্যের স্বার্থ দেখিয়ে ২০১১ সালে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং-এর সাথে ঢাকার সফর সঙ্গী হননি মমতা ব্যানার্জি। ফলে ওই সফরে তিস্তা চুক্তি বাস্তবায়নের সম্ভাবনা থাকলেও তা সফল হয়নি। এরপর নানা সময়ে ভারত সরকারের তরফে একাধিকবার প্রচেষ্টা নিলেও মমতা রাজ্যের স্বার্থ দেখিয়ে সেই চুক্তিতে সহমত পোষণ করেননি। বছর কয়েক আগেই বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দিল্লি সফরকালে তার সাথে একান্ত বৈঠক করেছিলেন মমতা। সে সময় তিস্তার পানির বদলে বিকল্প নদীর পানি দেওয়ার প্রস্তাব দেন তৃণমূল নেত্রী। কিন্তু বাংলাদেশ মমতার সেই প্রস্তাবে রাজি হয়নি।
আসলে মমতার বক্তব্য ছিল তিস্তায় পানি নেই। আর পানি না থাকলে বাংলাদেশকে পানি দেবো কি করে। ওই ইস্যুতে সেসময় এমনও অভিযোগ ওঠে যে, তিস্তা নদীর উপর সিকিমের বাঁধ দেওয়ার কারণে পানি স্বল্পতা দেখা দিয়েছে। আগামী সেপ্টেম্বরে দিল্লি সফরে আসছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ইতোমধ্যেই পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জিকে চিঠি লিখে ওই সফরেই মমতার সাথে সাক্ষাতের আগ্রহ প্রকাশ করেছেন হাসিনা। জল্পনা ছড়িয়েছে তবে কি ওই সফরে তিস্তা নিয়ে কোন কথা হতে পারে দুই নেত্রীর মধ্যে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন বাংলাদেশের নির্বাচনের আগে তিস্তা বরাবরই একটি বড় ইস্যু হয়ে দাঁড়ায়। সেক্ষেত্রে এই ইস্যুতে আলোচনা সম্ভাবনা প্রবল।
তার আগেই ঘুরিয়ে তিস্তা ইস্যুতে তাৎপর্যপূর্ণ মন্তব্য মমতা ব্যানার্জির। মমতার বক্তব্য ‘সিকিম তিস্তা নদীর উপর হাইড্রো পাওয়ার (জলবিদ্যুৎ) করার ফলে আমাদের কোন জায়গা নেই। আমরা সেখানে চার পাঁচটা হাইড্রো পাওয়ার তৈরি করব বলে ভেবেছিলাম কিন্তু...।’
আসলে তিস্তা পানি চুক্তি সম্পর্কে নেতিবাচক মন্তব্য না করে ইঙ্গিত পূর্ণভাবে প্রতিবেশী রাজ্য সিকিমের ঘাড়ে বন্দুক রেখে তিস্তার পানি প্রবাহ কমে যাওয়া নিয়ে মুখ খুললেন মমতা। তিনি বলেন, দেউচা-পাচমিতে খুব ভালো মানের কয়লা পাওয়া গেছে, সবে কাজ শুরু হয়েছে। এই কাজ শেষ হয়ে গেলে আগামী ১০০ বছর পশ্চিমবঙ্গের কোন বিদ্যুতের সমস্যা হবে না সে ক্ষেত্রে অন্য রাজ্যগুলোতে তারা বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে পারবে। তখন অনেক সস্তায় বিদ্যুৎ পাওয়া যাবে। উড়িষ্যায় অনেক পানি আছে বলে সেখানে সোলার পাওয়ার আছে। তারা অনেক আগে করে ফেলেছিল, সোলার পাওয়ার খুব সস্তা হয়। আমরাও চার পাঁচটা হাইড্রো পাওয়ার তৈরি করব বলে ভেবেছিলাম কিন্তু সিকিম তিস্তা নদীর উপর হাইড্রো পাওয়ার (জলবিদ্যুৎ প্রকল্প) করার ফলে আমাদের কোন জায়গা নেই।
প্রসঙ্গত, জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের জন্য নদীর পানির ধারাকে আটকে রাখতে নির্মাণ করতে হয় বাঁধ। সিকিম থেকে উৎপত্তি তিস্তা নদীর উপর সিকিম সরকার একাধিক ব্যারাজ নির্মাণের মাধ্যমে একাধিক জলবিদ্যুৎ প্রকল্প বিভিন্ন সময় গড়ে তুলেছে। ফলে স্বাভাবিক প্রবাহে বাধাগ্রস্ত তিস্তা বর্ষায় ভাসিয়ে দিলেও শুখা মৌসুমে পরিণত হয় ধুধু মরুভূমিতে।
ভারতের দুই রাজ্য সিকিম এবং পশ্চিমবঙ্গে তিস্তা নদীর উপর প্রায় ৪২টি বাঁধ রয়েছে দুই রাজ্যের। এর মধ্যে সিকিমের রয়েছ ৩৫টি এবং পশ্চিমবঙ্গের ৭টি প্রকল্প। যেগুলোর বেশিরভাগই ব্যবহার করা হচ্ছে জলবিদ্যুৎ উৎপাদন প্রকল্পে। ভারতের নদী বিশেষজ্ঞ কল্যাণ রুদ্র রাজ্য সরকারকে পেশ করা তার একটি রিপোর্টে আগেই বলেছেন তিস্তার উপর প্রকল্প ও পলির ব্যাপকতার জন্যই তিস্তার পানির প্রবাহ কমে এসেছে। তারপরে এমন মমতার এমন মন্তব্য বেশ ইঙ্গিতপূর্ণ বলেই মনে করা হচ্ছে।
এদিকে ২০২৪ সালে কেন্দ্রে বিজেপি কেন্দ্রে ক্ষমতায় আসবে না বলে দাবি করেন তিনি। আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে মমতা ব্যানার্জি বলেন, আমি নিজে কনফিডেন্ট না হলে এ কথা বলতে পারতাম না। আমি নিজে যখন কনফিডেন্ট হয়েছি, তখনই বলেছি। আমি এখনো বলছি, ২০২৪ সালে বিজেপি আসবেনা, আসবেনা, আসবেনা। কি অংক, কেন অংক, কোথা থেকে এলো, এত আসন কোথায় যাবে- তা বলতে পারবো না।
যদিও মমতার ওই বক্তব্যকে খণ্ডন করেছেন বিজেপি নেতা ও অভিনেতা মিঠুন চক্রবর্তী। এই দিনই কলকাতায় সংবাদ সম্মেলন করে মিঠুন বলেন ২০২৪ সালে মোদি আবার, আবার, আবার, আবার আসবে। তিনি আরও বলেন, অ্যাস্ট্রোলজাররাও বলতে শুরু করেছে... সেই কারণে নতুন বাড়ি ভেঙে ওই বাড়ি তৈরি করা (দিল্লিতে বিজেপির নতুন সদর দপ্তর)। ওই বাড়িতে আর যাওয়া হবে না। যে বাড়িতেই যান ভাগ্য যদি খারাপ থাকে, ওই বাড়িতে গেলে ভাগ্য পাল্টে যাবে- এমনটা নয়।
এই প্রসঙ্গেই মিঠুনের দাবি, এই মুহূর্তে ৩৮ জন তৃণমূলের বিধায়কের সাথে আমাদের ভালো সম্পর্ক আছে। এর মধ্যে ২১টা আমার সাথে সরাসরি সম্পর্ক আছে। বাকিটা আপনারা হিসাব করুন। ২০২৪ সালে মোদি আবার, আবার, আবার, আবার আসবে। তিনি ফের বলেন, ১৮টা আসন আমাদের হাতে আছে, আর চারটে হামাগুড়ি দিচ্ছে।
রাজ্যে সরকার গড়ার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, যদি স্বচ্ছ নির্বাচন হয়, তবে কালই বিজেপি রাজ্য সরকার গড়বে। শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতি প্রসঙ্গ তিনি বলেন, একটা বড় প্রতিষ্ঠান চালাতে গেলে কখনো কখনো কিছু ভুল হতে পারে। কেউ ভুল করলে পদক্ষেপ নেওয়া হবে, দোষী প্রমাণিত হলে শাস্তিও পাবে।
বিডি প্রতিদিন/আবু জাফর