৩ আগস্ট, ২০২২ ১৭:১৯

মমতার মন্ত্রিসভায় ৮ নতুন মুখ

দীপক দেবনাথ, কলকাতা

মমতার মন্ত্রিসভায় ৮ নতুন মুখ

মমতা ব্যানার্জি

পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য মন্ত্রিসভায় বেশকিছু পরিবর্তন ঘটিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। বুধবার ৯ জন মন্ত্রী শপথ নেন। এর মধ্যে নতুন মুখ ৮ জন। পূর্ণ মন্ত্রী হিসেবে এদিন শপথ নেন ৫ জন। এরা হলেন- পার্থ ভৌমিক, বাবুল সুপ্রিয়, উদয়ন গুহ, স্নেহাশীষ চক্রবর্তী, প্রদীপ মজুমদার। 

স্বাধীন দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিমন্ত্রী হয়েছেন ২ জন। এরা হলেন- বীরবাহ হাঁসদা ও বিপ্লব রায় চৌধুরী। ২০২১ তৃতীয়বার ক্ষমতায় আসার পর বন মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল বীরবাহ হাঁসদাকে। সে ক্ষেত্রে পদোন্নতি পেয়ে তাকে স্বাধীন দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী হলেন তিনি। 

অন্যদিকে রাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন ২ জন। তারা হলেন- সত্যজিৎ বর্মন ও তাজমুল হোসেন। শপথ গ্রহণ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার পরেই রাজ্যপাল ও মুখ্যমন্ত্রীর সাথে সৌজন্য বিনিময় করেন শপথ নেওয়া মন্ত্রীরা। সন্ধ্যার দিকে শপথ নেওয়া মন্ত্রীদের মন্ত্রণালয় বন্টন করা হয়। 
এরপরই নবান্নের তরফ থেকে একটি বিবৃতি জারি করে তাদের নতুন দপ্তর বন্টনের তালিকা প্রকাশ করা হয়। সেখানে অনেক মন্ত্রীর দপ্তরও বদল করা হয়েছে। বিবৃতি অনুযায়ী দায়িত্ব কমানো হয়েছে মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের। কলকাতা মেয়র ফিরহাদের হাতে ছিল পরিবহন, আবাসন এবং নগরোন্নয়ন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব। সেখানে পরিবহন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে স্নেহাশীষ চক্রবর্তীর হাতে। আবাসন দপ্তরের দায়িত্ব তুলে দেওয়া হয়েছে রাজ্যের ক্রীড়া ও যুব কল্যাণ মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসের হাতে। সেক্ষেত্রে কেবল মাত্র পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রীর দায়িত্ব রয়েছে হিরহাদ হাকিমের কাছে। 

বাবুল সুপ্রিয়কে দেওয়া হয়েছে তথ্যপ্রযুক্তি ও পর্যটন মন্ত্রণালয়। এছাড়া উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী হয়েছেন উদয়ন গুহ। পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী হয়েছেন প্রদীপ মজুমদার। সেচ ও জলপথ দপ্তরের মন্ত্রী হয়েছেন পার্থ ভৌমিক। মৎস প্রতিমন্ত্রী (স্বাধীন দায়িত্বপ্রাপ্ত) হয়েছেন বিপ্লব রায়চৌধুরী। ক্ষুদ্র মাঝারি শিল্প ও বস্ত্র দপ্তরের প্রতিমন্ত্রী তাজমহল হোসেন। শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী হলেন সত্যজিত বর্মন। বনদপ্তরের সঙ্গে স্বনির্ভর সংযুক্তি গোষ্ঠীর (স্বাধীন দায়িত্ব) প্রতিমন্ত্রী হয়েছেন বীরবাহা হাঁসদা। 

নারী ও শিশু কল্যাণ উন্নয়ন মন্ত্রী শশী পাঁজাকে অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব। স্কুলের শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় গ্রেপ্তার হওয়া সাবেক মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের হাত থেকে এই দায়িত্ব দেয়া হলো শশীর হাতে। পার্থর হাতে থাকা আরেকটি দফতর পরিষদীয় মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে কৃষিমন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়কে। 

ক্রেতা সুরক্ষা দপ্তরের দায়িত্ব পেলেন বিপ্লব মিত্র। পাশাপাশি রাজ্যের পূর্ত দপ্তরের দায়িত্ব থেকে সরানো হয়েছে মলয় ঘটককে। সেই দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে পুলক রায়কে। সেক্ষেত্রে মলয় ঘটক সামলাবেন আইন, বিচারবিভাগীয় ও শ্রম মন্ত্রীর দায়িত্ব। 

অন্যদিকে এই মন্ত্রিসভা থেকে পড়েছেন পরেশ অধিকারী, রত্নাদে নাগ, সৌমেন মহাপাত্র এবং হুমায়ুন কবীর। এদিন বিকাল চারটায় রাজভবনে শপথ গ্রহণ করেন মন্ত্রিসভার নতুন সদস্যরা। শপথ বাক্য পাঠ করান রাজ্যটির রাজ্যপাল লা গনেশন। 

এদিন শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি, রাজ্য বিধানসভার স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়, মমতার মন্ত্রিসভার একাধিক সদস্য, সাংসদ, বিধায়করা। উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সচিব, কলকাতায় নিযুক্ত বিভিন্ন রাষ্ট্রের দূতাবাসের প্রধানরাও। 

আমন্ত্রিত তালিকায় ছিলেন শুভেন্দু অধিকারী, বিমান বসুর মতো বিরোধী দলের নেতারা। যদিও তাদের কেউই উপস্থিত ছিলেন না। অন্যদিকে আমন্ত্রিত হলেও উপস্থিত ছিলেন না মমতার ভাতিজা ও দলের সংসদ সদস্য অভিষেক ব্যানার্জি। উল্লেখ্য, স্কুলে শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় নাম জড়ানোর পরই গত ২৩ জুলাই পশ্চিমবঙ্গের সাবেক শিক্ষা মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে গ্রেফতার করে ভারতের কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা ইডি। 

অভিযোগ সামনে আসার পর পার্থর হাত থেকে সমস্ত মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব কেড়ে নেন মমতা। এমনকি দলের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদ থেকেও সরিয়ে দেওয়া হয়েছে পার্থকে। এতদিন সেই মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব ছিল মমতার হাতে। তাছাড়া এর আগে বিভিন্ন সময় রাজ্যের দুই সিনিয়র মন্ত্রী সুব্রত মুখার্জি এবং সাধন পাণ্ডের মৃত্যুর পর সেই সব মন্ত্রণালয় গুলিও ফাঁকা ছিল। 

যদিও পার্থর মন্ত্রিত্ব কেড়ে নেয়ার পরই বিরোধীদের দাবি ছিল গোটা মন্ত্রিসভা ভেঙে দেওয়া হোক। মুখ্যমন্ত্রীর পদত্যাগের দাবীও জানায় বিরোধীরা। 

এরপরই গত কয়েক দিন ধরেই গুঞ্জন ছড়িয়েছিল রাজ্য মন্ত্রিসভার রদবদল নিয়ে। এমন জল্পনা থেকেই  গত সোমবার নবান্নে সংবাদ সম্মেলন করে মমতা জানান "একটা ছোট্ট রদবদল করা হবে। কারণ সিনিয়র মন্ত্রী সুব্রত মুখার্জি, সাধন পান্ডে মারা গেছেন। পার্থ চ্যাটার্জি কারাগারে আছেন। ফলে অনেকগুলো মন্ত্রণালয় ফাঁকা পড়ে আছে। কাউকে না কাউকে তো এই কাজগুলো করতেই হবে। আমার একার পক্ষে সবটা নিজের ঘাড়ে রাখা সম্ভব নয়। সকলে ভাগাভাগি করে করতে হবে।" 

তিনি এও জানিয়েছিলেন যে "৪-৫ জনকে মন্ত্রিসভা থেকে সরিয়ে দলের কাজে লাগানো হবে। এবং ৫-৬ জনকে নতুনভাবে মন্ত্রিসভায় অন্তর্ভুক্তি করনা হবে।"  সেই মতোই এদিন মন্ত্রিসভার রদবদল ঘটলো। মন্ত্রিসভায় ৮ নতুন মুখই বিভিন্ন জেলায় দলের সংগঠনিক পদে ছিলেন। সেখান থেকে তাদের অব্যাহতি দিয়ে মন্ত্রিসভায় নিয়ে আসা হল। অন্যদিকে মন্ত্রিসভা থেকে বাদ পড়া সিনিয়র মন্ত্রীদের দলের কাজে লাগানো হবে বলে জানা গেছে। 

অন্যদিকে, বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দেওয়ার এক বছরের মধ্যেই মন্ত্রিসভাতেও জায়গা পেলেন গায়ক, অভিনেতা বাবুল সুপ্রিয়। ২০২১ সালের মার্চ-এপ্রিল মাসে বিধানসভা নির্বাচনের পরই বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলের যোগদান করেন নরেন্দ্র মোদি সরকারের সাবেক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়। এরপর চলতি বছরের এপ্রিল মাসে বিধানসভার উপ-নির্বাচনে বালিগঞ্জ কেন্দ্র থেকে তৃণমূলের টিকিটের প্রার্থী হন বাবুল এবং বিপুল ভোটে বিধায়ক নির্বাচিত হন বাবুল সুপ্রিয়। গত জুলাইয়ে তৃণমূলের জাতীয় মুখপাত্র করা হয় বাবুলকে। আর এবার মন্ত্রিসভাতেও জায়গা পেলেন এই সংগীতশিল্পী।

বিডি প্রতিদিন/০৩ আগস্ট, ২০২২/আরাফাত

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর