ভারতের সংস্কৃতির পীঠস্থান বলা হয় কলকাতাকে। একসময় দেশটির রাজধানী ছিল এই কলকাতা। কিন্তু কলকাতায় কর্মরত বাংলাদেশি গণমাধ্যমকর্মীদের কোন সংগঠন ছিল না, ছিল না কোন প্রেস ক্লাবও। চেষ্টা যে করা হয়নি তা নয়, কিন্তু নানা কারণে এই স্বপ্ন বাস্তবায়িত হচ্ছিল না। অবশেষে গণমাধ্যমকর্মীদের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় সেই স্বপ্ন সফল হলো।
এক জমকালো অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে বুধবার বিকালে ‘ইন্দো বাংলা প্রেস ক্লাব’ নামে এই সংগঠনের শুভ সূচনা হয়। কেক কেটে এই প্রেস ক্লাবের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়। আপাতত কলকাতার এন্টালি থানার অধীন পি-৭৩, সিআইটি রোড, দেব লেন, প্রথম তলা, কলকাতা ১৪ প্রেস ক্লাবের অস্থায়ী ঠিকানা থেকে এর কার্যক্রম চলবে। যদিও খুব শিগগিরই তার স্থায়ী ঠিকানা হতে চলেছে।
এই প্রেস ক্লাবের সভাপতি ও এটিএন বাংলার প্রতিনিধি কিংশুক চক্রবর্তীর সভাপতিত্বে এই অনুষ্ঠানের শুরু হয়। বক্তব্যের শুরুতেই প্রেস ক্লাবের সহ-সভাপতি ও ৭১ টেলিভিশনের প্রতিনিধি সত্যজিৎ চক্রবর্তী এই সংগঠনের প্রয়োজনীয়তা ব্যাখ্যা করেন। এই প্রেস ক্লাব কিভাবে গণমাধ্যমের পাশে দাঁড়াবে কিভাবে সহায়তা করবে তার বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেন এই প্রেস ক্লাবের মুখপাত্র ও বাংলাদেশ প্রতিদিনের কলকাতা প্রতিনিধি দীপক দেবনাথ।
এরপর এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত অন্য সহকর্মীদের মতামত জানতে চাওয়া হয়। সকলেই তাদের গুরুত্বপূর্ণ মতামত প্রদান করেন। ভারতীয় সংবিধান বিধি মেনে আইনজীবী, অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এবং আমলাদের পরামর্শ ও সহযোগিতায় কলকাতা ইন্দো বাংলা প্রস্তাবের সূচনা হয়। ক্লাবের নিয়ম অনুযায়ী যারা নিয়মিত বাংলাদেশ ভারতীয় প্রতিনিধি তারা সদস্যপদ পাবেন এবং যারা বাংলাদেশ এবং বিদেশি নাগরিক, তারা পাবেন সাম্মানিক সদস্য।
অনুষ্ঠানে গণমাধ্যমকর্মীদের মধ্যে আরও উপস্থিত ছিলেন প্রথম আলোর প্রতিনিধি অমর সাহা, প্রথম আলোর চিত্র সাংবাদিক ভাস্কর মুখার্জি, মানবজমিনের সাবেক প্রতিনিধি পরিতোষ পাল, ইত্তেফাকের প্রতিনিধি তারিক হাসান, সময় টিভির প্রতিনিধি সুব্রত আচার্য, বাংলাদেশ প্রতিদিনের দীপক দেবনাথ, ৭১ টেলিভিশনের প্রতিনিধি সত্যজিৎ চক্রবর্তী, চ্যানেল ২৪ ও সমকাল এর প্রতিনিধি শুভজিৎ পুততুন্ড, বাংলা নিউজ ২৪. কম ও নিউজ ২৪ এর প্রতিনিধি ভাস্কর সর্দার, জাগো নিউজ-২৪ এর প্রতিনিধি জ্যোতির্ময় দত্ত, দৈনিক সংবাদ এর প্রতিনিধি দীপক মুখার্জি, যমুনা টেলিভিশনের কলকাতা প্রতিনিধি সুকান্ত চট্টোপাধ্যায়, ইন্ডিপেন্ডেন্ট টেলিভিশনের প্রতিনিধি দেবপ্রসাদ অধিকারী, নিউজ ২৪ এর ভিডিও জার্নালিস্ট শাকিল আবেদীন ও চ্যানেল ২৪ এর ভিডিও জার্নালিস্ট বিক্রম লাহা প্রমুখ।
পরে উৎসাহের সাথে উপস্থিত সব সংবাদকর্মীই এদিন নিজেদের সদস্যপদ গ্রহণ করেন। এদিনের এই প্রেসক্লাবের আনুষ্ঠানিক যাত্রা নিয়ে ক্লাবের মুখপাত্র দীপক দেবনাথ জানান, ‘আজকের দিনটি খুবই আনন্দের ও ভাললাগার দিন। অনেক দিনের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় এই স্বপ্ন বাস্তবায়নের পথে আমরা, সামনে অনেক পথ।’ তিনি আরো বলেন, ‘গণমাধ্যম রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ। সেক্ষেত্রে রাষ্ট্রের প্রতি গণমাধ্যমের আলাদা দায়িত্ব থাকে। বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশনে আমাদের আরও যত্নশীল হতে হবে এবং দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে।’
তার অভিমত, ‘এক্ষেত্রে আমাদের দায়িত্বটা একটু বেশি যেহেতু একদিকে ভারতীয় নাগরিক অন্যদিকে বাংলাদেশের গণমাধ্যমে যুক্ত তাই, দুই দেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক শক্তিশালী ও মজবুত করতে এই প্রেস ক্লাবের সদস্যরা প্রচেষ্টা চালিয়ে যাবে।’
সত্যজিৎ চক্রবর্তীর অভিমত, ‘কলকাতায় কর্মরত বাংলাদেশের গণমাধ্যমকর্মীদের কোন সাংগঠনিক অস্তিত্ব ছিল না, সেক্ষেত্রে এই সংগঠনের মধ্য দিয়ে সে অস্তিত্ব পেল। আগামী দিনের সাংবাদিকদের পাশে থেকে যাতে এই সংগঠন তার কাজকর্ম চালাতে পারে, সেদিকে লক্ষ্য রাখা হবে। যেহেতু দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক বা দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক উন্নয়ন আমাদের কাজ, সেক্ষেত্রে আমাদের অগ্রণী ভূমিকা রাখতে হবে।’
সময় টেলিভিশনের কলকাতার স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট সুব্রত আচার্য জানান, ‘বাংলাদেশের গণমাধ্যমকর্মী হিসেবে আমার মনে হয় এটা এমন একটা প্ল্যাটফর্ম হবে যেখানে আমাদের সুখ দুঃখ- সবকিছু ভাগাভাগি করে নেওয়া যাবে।’ প্রথম আলোর সাংবাদিক অমর সাহা এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন। তিনিও আশ্বাস দেন- আগামী দিনে এই সংগঠনের পাশে থেকে সবরকম সহায়তা করবেন।
বিডি-প্রতিদিন/শফিক