ভারতের উত্তরপূর্বাঞ্চল আসামের নিষিদ্ধ ঘোষিত বিদ্রোহী সংগঠন ইউনাইটেড লিবারেশন ফ্রন্ট অফ আসাম’র (উলফা) নেতা অনুপ চেটিয়ার মেয়ে বন্যা বড়ুয়াকে (২৭) বিয়ে করেছেন বাংলাদেশের কুমিল্লার যুবক অনির্বান চৌধুরী।
আসামের ডিব্রুগড় জেলার চাবুয়া বিধানসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত জেরাই গ্রামে বর ও কনের পরিবারের উপস্থিতিতে বিয়ে সম্পন্ন হয়। অনির্বান বর্তমানে অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্নে বসবাস করছেন। আগামী ২৫ নভেম্বরে মেলবোর্নের ইসকন মন্দিরে তাদের বিবাহত্তোর সংবর্ধনা অনুষ্ঠিত হবে।
বিষয়টি স্বীকার করে অনুপ চেটিয়া বলেন, হ্যাঁ অনির্বাণ চৌধুরী নামে এক বাংলাদেশি যুবকের সাথে আমার মেয়ে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, কুমিল্লার বাসিন্দা অনির্বাণ বর্তমানে অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্নে বসবাস করেন। তার সাথেই রয়েছে তার বাবা-মাও। মেলবোর্ন শহরেই কর্মরত রয়েছেন অনির্বাণ। গত ৩০ এবং ৩১ সেপ্টেম্বর আসামের রীতি অনুযায়ী আসামের ডিব্রুগড়ের জেরাইগাও গ্রামে খুব ছোট্ট একটি ঘরোয়া অনুষ্ঠান হয়। সেখানেই চার হাত এক হয়। উপস্থিত সকলেই পাত্র এবং পাত্রী উভয়কেই তাদের বৈবাহিক জীবন এবং সুস্থতা কামনা করে দোয়া করেন। আগামী ২৫ নভেম্বর তাদের প্রকৃত বিয়ের অনুষ্ঠান হবে বলেও জানান চেটিয়া।
জানা গেছে, অনুপ চেটিয়া ও মনিকা বড়ুয়ার কন্যা বন্যা বড়ুয়ার সাথে দীর্ঘদিন ধরে প্রেমের সম্পর্ক ছিল অনির্বাণের। বন্যা যখন ধানমন্ডির মাস্টারমাইন্ড ইন্টারন্যাশনাল স্কুলে পড়াশোনা করতেন, তখন থেকে সহপাঠী অনির্বাণের সাথে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। পরে সেই সম্পর্ক মেনে নেন বন্যার বাবা-মাসহ পরিবারের লোকেরা। পরে তাদের বিয়েতেও সম্মতি জানায় তারা। অবশেষে শারদীয়ার উৎসব চলাকালীন সময়েই অনির্বাণ এবং বন্যা বিয়েতে আবদ্ধ হন।
বিয়ের অনুষ্ঠান শেষ করেই পাত্রী বন্যাকে নিয়ে অস্ট্রেলিয়ায় উড়ে যাবেন অনির্বাণ। এরপর সেখানে মেলবোর্নের ইসকন মন্দিরে অনির্বাণের পরিবার, বন্ধু-বান্ধব এবং নিকট আত্মীয়দের উপস্থিতিতে আগামী নভেম্বরে পাত্রের পক্ষ থেকে রিসেপশনের আয়োজন করা হয়েছে।
অনুপ চেটিয়া বলেন, নব দম্পতির ইচ্ছার পরিপ্রেক্ষিতে তাদের বিয়ে সম্পন্ন হয়েছে। নব দম্পতির জন্য বাংলাদেশের মানুষের কাছে দোয়াও চেয়েছেন তিনি।
চেটিয়া এও বলেন, কারাগারে থাকাকালীন অবস্থায় আমি এই সম্পর্কের কথা জানতাম না। কিন্তু আমাদের বিপ্লবে বাংলাদেশের মানুষ যে ধরনের সাহায্য করেছে, তার প্রতি আমাদের ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা রয়েছে। ফলে এই বিয়েতে আমার কোন আপত্তি ছিল না।
উল্লেখ্য, হত্যা, অপহরণ ও চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অভিযোগে আসাম পুলিশের হাতে তাকে গ্রেফতার হতে হয় এবং জেলও খাটেন। এরপর বিদেশি আইন ও পাসপোর্ট আইনে ১৯৯৭ সালের ঢাকায় গ্রেফতার হন চেটিয়া। পরে বাংলাদেশের কাশিমপুর কারাগারে দীর্ঘ প্রায় সাত বছর কাটাতে হয়। ২০০৪ সালে কারাগারের সাজার মেয়াদ শেষ হয়ে গেলেও চেটিয়াকে নিরাপত্তা হেফাজতে রাখে বাংলাদেশ সরকার। এর পর ২০১৫ সালে ভারত বাংলাদেশ বন্দী বিনিময় প্রত্যাপণ চুক্তি অনুযায়ী অনুপ চেটিয়াকে ফেরত পায় ভারত।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল