প্রত্যাশা মতোই উত্তর পূর্ব ভারতের রাজ্য ত্রিপুরায় সরকার গঠন করতে চলেছে বিজেপি। গত ১৬ ফেব্রুয়ারি এই রাজ্যটির ৬০ টি বিধানসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এর মধ্যে সরকার গড়তে দরকার ৩১ টি আসন। সেখানে বিজেপি ও তাদের শরীক দল ইন্ডিজিনাস পিপল ফ্রন্ট অফ ত্রিপুরা (আইপিএফটি) জোট সেই লক্ষ্যমাত্রা ছুঁয়েছে। অন্যদিকে সিপিআইএম ১৪ আসনে, প্রথমবার নির্বাচনে অংশ নিয়েই ১৩ আসনে জয় পেয়েছে টিপ্রা মোথা। তবে তৃণমূল কংগ্রেস এই নির্বাচনে প্রার্থী দিলেও কোনো আশানরূপ ফল করতে পারেনি। এবারের নির্বাচন মূলত ছিল ত্রিমুখী লড়াই।
শেষবার ২০১৮ সালের বিধানসভা নির্বাচনে ত্রিপুরায় ২৫ বছরের বাম শাসনের অবসান ঘটিয়ে সরকারে আসে বিজেপি। সেবার তারা ৩৬ টি আসনে জয় পায়, তাদের জোট শরীকদল আইপিএফটি জয় পায় ৮ আসনে। ১৬ আসনে জয় পায় সিপিআইএম।
এই নির্বাচনে ত্রিপুরায় জয়ী হেভিওয়েট প্রার্থীদের মধ্যে অন্যতম ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী ডা. মানিক সাহা, কংগ্রেস বিধায়ক সুদীপ রায় বর্মন, ত্রিপুরার সিপিআইএম সাধারণ সম্পাদক জিতেন্দ্র চৌধুরী, সাবেক শিক্ষামন্ত্রী রতন লাল নাথ। যদিও পরাজয়ের মুখ দেখেছেন উপমুখ্যমন্ত্রী জিষ্ণু দেব বর্মা।
বৃহস্পতিবার সকাল ৮ টা থেকে কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে দিয়ে শুরু হয় গণনা। বিজেপি শেষ হাসি হাসতেই রাজ্য জুড়েই শুরু হয়ে যায় গেরুয়া শিবিরের জয়ের উৎসব।
ত্রিপুরার পাশাপাশি মেঘালয় ও নাগাল্যান্ডে বিধানসভার গণনা ছিল বৃহস্পতিবার। গত ২৭ ফেব্রুয়ারি মেঘালয় ও নাগাল্যান্ড উভয় রাজ্যের ৬০ টি করে আসনে নির্বাচন হয়েছে। সরকার গড়তে দরকার ৩১ টি করে আসনে জয়। সেখানে নাগাল্যান্ডে 'ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক প্রগ্রেসিভ পার্টি' (এনডিপিপি) ও বিজেপির জোট সরকার ৩৭ আসনে জয় পেয়ে ফের সরকার গঠন করতে চলেছে। অন্যদিকে নাগা পিপলস ফ্রন্ট (এনপিএফ) ২ আসনে, অন্যরা ২১ আসনে জয় পেয়েছে।
যদিও মেঘালয়ে কোন রাজনৈতিক দলই সরকার গঠনের একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি। এই রাজ্যটিতে মুখ্যমন্ত্রী কনরাড সাংমার নেতৃত্বাধীন দল 'ন্যাশনাল পিপল পার্টি' (এনপিপি) ২৫ আসনে জয় পেয়েছে, অন্যরা জয় পেয়েছে ২৫ আসনে, কংগ্রেস ৫ এবং বিজেপি ২ আসনে জয় পেয়েছে। সেক্ষেত্রে সরকার গঠনে কিছুটা জটিলতা দেখা দিয়েছে।
এদিকে পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ জেলার "সাগরদিঘী" বিধানসভার উপনির্বাচনে জয়ী হয়েছে সিপিআইএম সমর্থিত কংগ্রেস প্রার্থী বাইরণ বিশ্বাস। ২২ হাজারের বেশি ভোট তিনি জয়লাভ করেন। দ্বিতীয় স্থানে তৃণমূল প্রার্থী দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায়, তৃতীয় স্থানে বিজেপি প্রার্থী দিলীপ সাহা। সম্প্রতি এই কেন্দ্রের তিন বারের বিধায়ক ও রাজ্যের মন্ত্রী সুব্রত সাহার অকাল মৃত্যুতে এই কেন্দ্রটিতে উপ নির্বাচন জরুরী হয়ে পড়ে। গত ২৭ ফেব্রুয়ারি এই কেন্দ্রে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এদিন জয়ের খবর ছড়িয়ে পড়তেই কংগ্রেসের কর্মী সমর্থকরা বিজয় উল্লাসে মেতে ওঠে।
এই জয়ের ফলে পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায় এই প্রথম খাতা খুলল কংগ্রেস। অর্থাৎ প্রথম বিধায়ক পেল কংগ্রেস। কারণ গত ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে শতাব্দি প্রাচীন কংগ্রেস দল একটি আসনেও জয় পায়নি।
এদিকে মুসলিম অধ্যুষিত সাগরদীঘিতে কংগ্রেসের এই জয় রাজ্যের রাজনীতিতে বড় প্রশ্ন তুলে দিয়েছে। তবে কি সংখ্যালঘু মুসলিমরা ধীরে ধীরে তৃণমূলের কাছ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে? যদিও সংশ্লিষ্ট মহলের দাবি একটিমাত্র আসনে নির্বাচনের ফলাফলের উপর ভিত্তি করে একথা বলা যায় না।
মুর্শিদাবাদের কংগ্রেস সংসদ ও সাবেক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অধীর রঞ্জন চৌধুরী বলেছেন, সাগরদিঘীর ফলাফল প্রমাণ করেছে যে মমতা ব্যানার্জি অপরাজেয় শক্তি নয়।
এদিকে তিন রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন নিয়ে বৃহস্পতিবার রাজ্য সচিবালয় নবান্ন সংবাদ সম্মেলন করে মন্তব্য করেন মমতা ব্যানার্জি। তিনি বলেন, ২০২৪ এর লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূল কোনো দলের সাথে জোট করে লড়বে না। তৃণমূলের জোট হবে মানুষের সাথে। মানুষের সমর্থনে আমরা লড়বো। আমি বিশ্বাস করি যারা বিজেপিকে হারাতে চান তারা আমাদেরকে ভোট দেবেন।
অন্যদিকে সাগরদিঘী উপ-নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেসের পরাজয় নিয়ে তিনি বলেন, 'বাম ও কংগ্রেস পরস্পরের সাথে হাত মিলিয়ে উপনির্বাচনে জয়ী হলেও, আদতে বাম কংগ্রেসের নৈতিক হার হয়েছে।'
বিডি প্রতিদিন/হিমেল