পশ্চিমবঙ্গের উত্তর ২৪ পরগনা জেলার অশোকনগরের কয়েকটি জায়গায় তল্লাশি অভিযান চালিয়ে বাংলাদেশ থেকে কয়েক হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ ও পাচারের অভিযোগে অভিযুক্ত পি কে হালদারের ভাই প্রাণেশ হালদারের একাধিক সম্পত্তির হদিস পাওয়া গেছে।
বৃহস্পতিবার বিকেলের পর এই অভিযান চালায় বহু আলোচিত এই মামলার তদন্তকারী সংস্থা ‘এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট’ (ইডি)। ইডি সূত্রের খবর, আনুমানিক ১২ কোটি রুপিরও বেশি সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে।
এদিন অশোকনগরের দক্ষিণ পল্লী ও আদর্শ পল্লী-এ দুইটি এলাকায় বাড়ি, বাগানে (প্রায় আট বিঘা জায়গা) নোটিশ টাঙিয়ে যায় ইডির কর্মকর্তারা। সেইসঙ্গে ওই বাড়িগুলোকে সিলগালা করে দিয়ে যায়। সেক্ষেত্রে আপাতত এই সম্পত্তিগুলো ইডির হেফাজতে রইলো। দুটি জায়গাই পিকের ভাই প্রাণেশ হালদারের নামে রয়েছে বলে জানা গেছে। যদিও পরবর্তী সময়ে অন্য এক ব্যক্তির উপর ওই সম্পত্তির দায়িত্ব দিয়ে বর্ধমানে চলে যান প্রাণেশ।
ইডির অ্যাসিস্ট্যান্ট ডিরেক্টর (কলকাতা আঞ্চলিক অফিস-২) নীরজ কুমার সিংয়ের স্বাক্ষর করা ওই নোটিশে বলা হয়েছে, ‘পরবর্তী নির্দেশ না আসা পর্যন্ত ওই সম্পত্তি হস্তান্তর, বিক্রি, দান বা মর্টগেজ হিসেবে ব্যবহার করা যাবে না।’
উল্লেখ্য, ২০২২ সালের ১৪ মে পশ্চিমবঙ্গের রাজারহাটের বৈদিক ভিলেজ, বোর্ড হাউস ১৫, গ্রিনটেক সিটি থেকে গ্রেফতার করা হয় পিকে হালদার ওরফে প্রশান্ত কুমার হালদার ওরফে শিবশঙ্কর হালদারকে। এছাড়াও অশোকনগর, বর্ধমানসহ একাধিক জায়গায় অভিযান চালিয়ে গ্রেফতার করা হয় পিকে হালদারের আরও ৫ সহযোগীকে। তারা হলেন-পিকের ভাই প্রাণেশ হালদার, স্বপন মিস্ত্রি ওরফে স্বপন মৈত্র, উত্তম মিস্ত্রি ওরফে উত্তম মৈত্র, ইমাম হোসেন ওরফে ইমন হালদার এবং আমানা সুলতানা ওরফে শর্মী হালদার। এরপর ওই বছরের ২১ মে ‘অর্থ পাচার সংক্রান্ত আইন-২০০২’ (PMLA)-এ তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়।
ইতিমধ্যে কলকাতার নগর দায়রা আদালতে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করা হয়েছে। আদালতের নির্দেশে বিচার বিভাগীয় হেফাজতে রয়েছে ছয় অভিযুক্ত। বর্তমানে অভিযুক্ত পিকে হালদারসহ ৫ পুরুষ অভিযুক্ত রয়েছে কলকাতার প্রেসিডেন্সি কারাগারে। অন্যদিকে একমাত্র নারী অভিযুক্ত রয়েছেন আলিপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে।
যদিও নতুন নতুন তথ্য সন্ধানে এখনো তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছে ইডির কর্মকর্তারা। প্রয়োজনে কারাগারে গিয়েই অভিযুক্তদের জিজ্ঞাসাবাদের পর্বও জারি রয়েছে। অভিযুক্তরাও তদন্তে সহায়তা করছেন।
ইতিমধ্যেই পি কে হালদারের থেকে ভারতীয় মুদ্রায় ১৫০ কোটি রুপির বেশি অর্থ উদ্ধার করা হয়েছে। এছাড়াও তাকে জেরা করে প্রায় একাধিক বাড়ি, ফ্ল্যাট, বোট হাউস, অসংখ্য জমি, ব্যাংক অ্যাকাউন্টের হদিস পাওয়া গেছে। সেগুলো কোনোটা পিকে হালদার বা তার সহযোগীদের নামে, কোনোটা আবার বেনামে। উদ্ধার হয়েছে বেশকিছু ইলেকট্রনিক গ্যাজেট। পাশাপাশি আধার কার্ডসহ ভারতের বিভিন্ন সচিত্র পরিচয়পত্র পাওয়া গেছে। বাংলাদেশ, ভারত, ও গ্রানাডার পাসপোর্টের অধিকারী ছিলেন পি কে হালদার।
বিডি প্রতিদিন/এমআই