টানা দরপতনে মাত্র ২৫ দিনের ব্যবধানে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের প্রায় ২৩ হাজার কোটি টাকা নেই। ২০১০ সালের ভয়াবহ দরপতনে অসংখ্য বিনিয়োগকারীর সর্বস্বান্ত হওয়ার পর নতুন করে আরও অনেক বিনিয়োগকারীর পথে বসার উপক্রম হয়েছে। শেয়ার বাজারে প্রতিদিন মূলধন পতনের পরিমাণ বাড়ছে। শুধু ছোট মূলধনী কোম্পানি নয়, বৃহৎ কোম্পানির শেয়ার কিনেও ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। সব মুনাফা যাচ্ছে সিন্ডিকেটের পকেটে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, শক্তিশালী কারসাজি সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে অসহায় হয়ে পড়েছেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। বিভিন্ন ব্রোকারেজ হাউসের পরিস্থিতিও দিন দিন খারাপের দিকেই যাচ্ছে। যারা সিন্ডিকেট গড়ে বাজারে অবৈধ বাণিজ্যে লিপ্ত তাদের কাছে যেন নিয়ন্ত্রক সংস্থাও অসহায় হয়ে পড়েছে। তিন মাস ধরে বাজার স্থিতিশীলতায় কিছুই করতে পারছে না সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ১৯৯৬ ও ২০১০ সালের ঘটনায় অভিযুক্তদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিলে এ ঘটনা ঘটত না। ডিএসইতে টানা দরপতনের কারণে বিক্ষুব্ধ ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা। প্রতিদিন তারা মতিঝিলের রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ, মানববন্ধন করছেন। শুরুতে বিক্ষোভে বিনিয়োগকারীদের সংখ্যা কম থাকলেও এখন তা প্রতিদিন বাড়ছে। বাজার স্থিতিশীল করার দাবিতে ঐক্যবদ্ধভাবে কঠোর আন্দোলনের ঘোষণা দিয়েছেন বিনিয়োগকারীরা। শুধু সাধারণ বিনিয়োগকারীই নন, ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন ব্রোকারেজ হাউস মালিকরাও। লেনদেনের পরিমাণ কমায় হাউসগুলোর এখন নাভিশ্বাস অবস্থা। জানুয়ারি মাসে যেখানে প্রতিদিন লেনদেন ছিল প্রায় হাজার কোটি টাকা, এখন তা ৩০০ কোটি টাকায় নেমেছে। একদিকে লগ্নিকৃত অর্থ থেকে টাকা কমছে অন্যদিকে লেনদেনের পরিমাণ কমায় ব্রোকারেজ হাউস চালানো কঠিন হয়ে পড়েছে। ফলে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে তারাও বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠছেন। মুনাফা করছেন শুধু কিছু কোম্পানি পরিচালক ও কারসাজির সিন্ডিকেট চক্র। চলতি বছরের শুরুতে বাজার লেনদেন দ্রুত বাড়তে থাকে। ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের প্রলুব্ধ করতে ওই সময় নির্দিষ্ট কয়েকটি কোম্পানির দর বাড়তে থাকে কয়েকগুণ। ১০ টাকার শেয়ার কোনো কোনো ক্ষেত্রে শত টাকার ওপর উঠে যায়। এই প্রবণতা চলে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। এরপর দর হারানো শুরু হয়। মার্চের শেষদিকে এসে পরিস্থিতি ক্রমান্বয় জটিল হয়ে ওঠে। এপ্রিল মাসজুড়ে বাজার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে। ডিএসইর বাজার চিত্রে দেখা গেছে, গত ৩১ মার্চ বাজার মূলধন ছিল প্রায় ৪ লাখ ১২ হাজার কোটি টাকা। সর্বশেষ গতকাল সেই বাজার মূলধন হয়েছে ৩ লাখ ৮৯ হাজার কোটি টাকা। মাত্র ২৫ দিনের ব্যবধানে কমেছে ২৩ হাজার কোটি টাকা। ৩১ মার্চ বিনিয়োগকারীদের কেনা শেয়ার মূল্য যা ছিল এখন তা ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ কমেছে। অর্থাৎ বিনিয়োগ থেকে গায়েব হয়ে গেছে তাদের টাকা। কারসাজি সিন্ডিকেটের পকেটে চলে গেছে এ টাকা। তালিকাভুক্ত প্রায় সব কোম্পানির শেয়ার দর কমেছে। সিন্ডিকেট চক্রের পছন্দের কিছু কোম্পানি রয়েছে। প্রায় ৫০ থেকে ৬০টি কোম্পানির শেয়ার দর গত ফেব্রুয়ারি মাসে ছিল ৩০ থেকে ৬০ টাকা। বর্তমানে এসব শেয়ারের দর অভিহিত মূল্যের নিচে। ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের ফাঁদে ফেলতে এসব কোম্পানি ব্যবহার করা হয়। আর এতে জড়িত থাকেন সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের পরিচালকরাও। জানতে চাইলে ২০১০ সালের শেয়ার কারসাজির তদন্তে গঠিত কমিটির প্রধান খোন্দকার ইব্রাহীম খালেদ বলেন, তদন্ত করার মূল উদ্দেশ্য ছিল যারা জড়িত তাদের সবাইকে খুঁজে বের করে শাস্তির আওতায় নিয়ে আসা। কিন্তু তা না করে তাদের হাতেই বাজার ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। এখন বাজার নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। সিন্ডিকেট চক্রের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিলে এটা নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না। সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) সাবেক চেয়ারম্যান ফারুক আহমেদ সিদ্দিকী বলেন, যারা মেনুপুলেশন করে তাদের খুঁজে বের করতে হবে। এই মেনুপুলেটকারীরা সক্রিয় থাকলে বাজারে আস্থা ফিরবে না। স্থিতিশীল হবে না পুুঁজিবাজার।